চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়াকে বলে Hypnic Jerk বা Myoclonic Jerk বা Sleep Start। হিপনিক জার্ক হচ্ছে এক ধরনের মাংসপেশির অনৈচ্ছিক টান যা সাধারণত মানুষ ঘুমানোর পর ঘটে, একে মায়োক্লোনাস বলে। এমন ঘটনা মানুষের ঘুম ও জাগরণ এর মাঝে ঘটে। হিপনিক জার্ক কেন হয় তার কোন নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি। বিজ্ঞানীদের ধারণা মায়োক্লোনাস এর উৎপত্তি মস্তিষ্কে। এর সৃষ্টি মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্স বা মস্তিষ্কের যে অংশের জন্য আপনি চমকে উঠেন তা থেকে। এমনও হতে পারে যে জাগ্রত অবস্থা থেকে যখন মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় যায় তখন এই স্থানের নিউরোট্রান্সমিটার এর অস্থিতিশীলতার জন্য হিপনিক জার্ক ঘটে। এছাড়াও যেসব কারণে হিপনিক জার্ক হতে পারে :
১. ক্যাফেইন, নিকোটিন, চা কফি ও অন্যান্য উত্তেজক পানীয় মস্তিষ্ক ও দেহকে জাগিয়ে রাখে।মাত্রাতিরিক্ত, বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেল ব সন্ধ্যায় এইসব পানীয় গ্রহন করলে নিদ্রাহীনতা হতে পারে। পাশাপাশি পানীয়তে থাকা রাসায়নিকের প্রভাবে হিপনিক জার্ক হতে পারে।
২. অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ এর মধ্যে থাকলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমের সমস্যা হয়। এর কারণ মানসিক চাপ এর ফলে মানুষের মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে এবং নানা ধরনের চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করে। এর ফলে ঘুমের মাঝে ঝাঁকুনি বা হিপনিক জার্ক এর মতো সমস্যা হতে পারে।
৩. দুশ্চিন্তার মতো ব্যায়ামও মস্তিষ্ককে সক্রিয় ও সতেজ রাখে। তবে সকাল বা দিনে ব্যায়াম না করে রাতে ব্যায়াম করলে তার ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যায়াম করলে হিপনিক জার্ক হতে পারে।
৪. রাত জাগার অভ্যাস, অতিরিক্ত পরিশ্রম, রাতে ঘুমানোর আগে ফোন-ল্যাপটপ ব্যবহার, দীর্ঘ সময় নেট ব্রাউজিং, খাটাখাটুনি করে ঘুমানো, ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতায় যারা ভুগেন তাদের হিপনিক জার্ক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
তাছাড়া শরীরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের অভাব; ঘুমের মধ্যে হাতে পায়ে ঝিঁঝিঁ; উচ্চশব্দ ইত্যাদির প্রভাবে হিপনিক জার্ক হতে পারে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ঘুমের মধ্যে ঝাঁকুনির কারণ হিসেবে ইভোলিউশন ভিত্তিক কিছু মতবাদ দিয়েছেন। এছাড়া হিপনিক জার্ক এর কারণ হিসেবে স্নায়ুবিজ্ঞানীদের কিছু থিউরিও আছে। নির্দিষ্ট কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি।
হিপনিক জার্ক এর ধরণ একেক মানুষের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে পারে। সাধারণত হিপনিক জার্ক হলে ঘুমের মাঝে পড়ে যাওয়ার অনুভূতি হয়, আলো ঝলকানি বা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখা বা হ্যালুসিনেশন হয়, কিছু ভেঙে যাওয়ার মতো মড়মড় শব্দ শুনা যায়। ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভেঙে গেলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। হিপনিক জার্ক প্রতিরোধের জন্য জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা আবশ্যক। যেমন: মেডিটেশন করা, নিজের মন মস্তিষ্ককে চিন্তামুক্ত রাখা, নিয়ম করে ঘুমানো, রাতে ব্যায়াম না করে দিনে ব্যায়াম করা, ক্যাফেইন এর মতো উত্তেজক পানীয় কম গ্রহণ করা ইত্যাদি। তবুও যদি ঝাঁকুনির সমস্যা থেকে মুক্তি না মেলে তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক।
- Nishat Tasnim (Science Bee Family)