মশা দিয়ে এইচআইভি ছড়ায় না।
একটি মশা যখন একজন মানুষের কাছ থেকে রক্ত খায়, সে খুবই অল্প পরিমাণ রক্ত নিতে পারে। একজন এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের রক্তে এইচআইভি এর সংখ্যা (কপি) প্রায় প্রতি মিলিলিটারে ১ মিলিয়ন কপি(যখন এইচআইভি সম্পূর্ণভাবে সক্রিয়) থেকে ৪০-৭৫ কপি হতে পারে। এখন, একটি মশা (স্ত্রী মশা) একবার কামড়ে সর্বোচ্চ ১ লিটারের ত্রিশ লাখ ভাগের একভাগ বা পঞ্চাশ লাখ ভাগের একভাগ রক্ত পান করে। সুতরা এক মিলিলিটারের ৩০০০ ভাগের একভাগ বা ৫০০০ ভাগের একভাগ রক্ত বহন করে। ধরে নিলাম, যাকে মশা কামড় দিচ্ছে তার রক্তের প্রতি মিলিলিটারে ১ মিলিয়ন কপি ভাইরাস বহন করছে। তাহলে, ঐ মশা যদি ঐ ব্যক্তিকে কামড় দিবে তখন সর্বোচ্চ প্রায় ৩৩৩ কপি বা ২০০ কপি ভাইরাস নিতে পারে। এখানে কথা হচ্ছে, মশা সাধারণত পেরিফেরাল রক্ত খেয়ে থাকে। শরীরের ঐসব স্হানের রক্তে(এমনকি অন্যান্য বহু জায়গায়) এত বেশি (১ মিলিয়ন/মিলিলিটার) ভাইরাস থাকে না।
তবুও ধরে নিলাম, ঐ ব্যক্তির শরীরে রয়েছে। এখন, মশাতে এইচআইভি সংখ্যাবৃদ্ধি সহায়ক বা এমন কিছু নেই যা এইচআইভিকে সক্রিয় রাখতে সাহায্য (সত্যিকারার্থে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়)। তাছাড়া, মানুষের দেহের বাইরে এইচআইভি ধ্বংস হয়ে যায় (যদি না ল্যাবে বিশেষ তাপমাত্রা (-৮০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং বিশেষ কেমিক্যাল দেয়া তরলে(মিডিয়া) রাখা হয়।) সুতরাং, ঐ মশায় অধিকাংশ ভাইরাস সক্রিয় থাকবে না। তারপরও, ধরে নিলাম, প্রায় একশ এইচআইভি ঐ মশায় সক্রিয় থাকলো। তারপরেও, ঐ মশা পর্যাপ্ত পরিমাণ ভাইরাস বহন করে না এইচআইভি ছড়িয়ে দেবার জন্য। কমপক্ষে, এ মশাতে ২০০ কপি বা তার বেশি ভাইরাস দরকার।
এইচআইভি মানুষের সিডি৪+ টি সেল ছাড়া বাঁচতে পারে না। যখন মশা এইচআইভিযুক্ত রক্ত খায়, সেটা মশার পেটে যায়। মশার পেটে থাকা এসিড এইচআইভিকে ধ্বংস করে। কারণ, এইচআইভি এনভেলপড ভাইরাস যা পিএইচ (অম্ল-ক্ষারত্ব পরিমাপক), তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার প্রতি সংবেদী। আর মশার পেটে এইচআইভি এর কোনো বংশবৃদ্ধি হয় না। যদি কোনো ভাইরাস মশার দেহে বংশবৃদ্ধি না করতে পারে, তবে তা মশার মাধ্যমে ছড়াতে পারে না। মশা যখন রক্ত খায়, তখন সে রক্ত থেকে পানির অংশটুকু সরিয়ে ফেলে (মূলত লোহিত রক্তকণিকার পানি বের করে দেয়) । এখন মশা যখন রক্ত খাবে তখন সে অন্যের শরীরে রক্ত দিবে না, বরং লালা দিবে। এইচ আইভি শুধু মানুষের রক্তের সিডি৪+ টি সেলে বাঁচতে পারে। তাই মশার লালায় (যেখানে রক্ত এমনিতেই নেই) অর্থাৎ মশার কামড়ে ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই।
তথ্যসূত্রঃ- বিজ্ঞান যাত্রা