এককথায় বললে মানুষের কথাবার্তা, আচার-আচরন,পোশাক-পরিচ্ছদ, কাজকর্ম সবকিছুর মাধ্যমেই একজনের পার্সোনালিটি প্রকাশ পায়।
ব্যক্তিত্ব একটি আপেক্ষিক, বিমূর্ত ধারনা হওয়ায় ব্যক্তিত্ব গঠনের উপাদান সমূহ চিহ্নিত করা বেশ জটিল বিষয়। তথাপিও বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক অভীক্ষায় ব্যক্তিত্ব বিকাশের বিভিন্ন উপাদান চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হল- জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক। একাধিক ব্যক্তির মধ্যে উক্ত উপাদান সমূহের প্রভাব সমভাবে ক্রিয়াশীল থাকলেও তাদের ব্যক্তিত্বের সংগঠনের ভিন্নতাও অসম্ভব নয়। তাই একই উপাদান সবসময়যে একই ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়না। আবার এই উপাদান সমূহের অন্তর্ভূক্তি ও প্রাধান্যতা নিয়েও বিভিন্ন মনোবিদদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। তদোপরি এই উপাদান সমূহ আবার বিভিন্ন বিষয়ের সংমিশ্রনে গঠিত। নিম্নে ব্যক্তিত্ব বিকাশের উপাদান সমূহ সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করা হল :-
(১) জৈবিক উপাদান (Biological Factor) : ব্যক্তিত্ব বিকাশের আওতাভূক্ত জৈবিক উপাদানের মধ্যে জিন ও বংশগতি, দৈহিক গড়ন ও বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদান কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। অর্থাৎ ব্যক্তিত্বের ভিত্তি জৈবিক উপাদানের প্রেক্ষিতেই গড়ে ওঠে। নিম্নে এগুলো বর্ণনা করা হল :-
(ক) বংশগতি ও ব্যক্তিত্ব (Heredity and Personality) : যে জৈবিক ও মানসিক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ক্ষমতা বা প্রবণতা বংশ পরম্পরা সঞ্চালিত হয় তাকে বংশগতি বলে। আর এ বংশগতির সঞ্চালক হিসেবে কাজ করে জিন (Gene)। এই জিনের মাধ্যমে পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য সন্তানদের ব্যক্তিত্বে প্রতিফলিত হয়।
মাতৃগর্ভে ভ্রূণ সঞ্চারকালে পিতৃকোষ ও মাতৃকোষের মিলনে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের জিন পূর্বপুরুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে নতুন কোষে সঞ্চালিত হয়। এগুলোর মধ্যে বিশেষ কিছু জিন ব্যক্তিত্ব গঠনে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কোন জিনগুলি, কি ধরনের ব্যক্তিত্ব গঠনে, কিরূপ ভূমিকা নিবে, তা নির্ভর করে কিসের ওপর ? এর জবাব কি কোন বিজ্ঞান দিয়েছে ? এখনও দেয়নি। তবে আমি বলব, অবশ্যই তৎকালীন গ্রহ-নাক্ষত্রিক প্রভাব দ্বারাই তাহা নির্ধারিত হয়। এজন্যই জন্মকালীন গ্রহ-নাক্ষত্রিক অবস্থান বিশ্লেষণকরে কোন শিশুর সারাজীবনের সম্পূর্ণ ছবি জ্যোতিষবিদ্যার মাধ্যমে অঙ্কন করা সম্ভব।
(খ) দৈহিক গঠন (Body Structure) : দৈহিক গঠনের ভিত্তিতে মানুষের অনেক বৈশিষ্ট্য, গুনাবলী ও আচরণ কাঠামো গড়ে ওঠে, যেগুলো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সংগঠনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানীগণের পূর্বোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা তাহা জেনেছি।
(গ) জৈব রাসায়নিক উপাদান (Bio-Chemical Substances) : মানব দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও তা থেকে নিঃসৃত হরমোন ব্যক্তিত্ব গঠন ও বিকাশে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এগুলো শারীরিক গঠন নির্ধারণের পাশাপাশি আচরণগত অনেক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। সেসবও বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানীগণের পূর্বোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা তাহা জেনেছি।
এছাড়াও আচরণের জৈবিক ভিত্তি হিসেবে কেন্দ্রীয় স্নায়ূতন্ত্রের থ্যালামাস ও হাইপোথ্যালামাস আচরণ কাঠামো নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব বিকাশকে বিশেষভাবে প্রভাবাম্বিত করে।
(২) মনস্তাত্ত্বিক উপাদান (Psychological Factor) : ব্যক্তির শরীর অভ্যন্তরীণ অবস্থা ও বাহ্যিক পরিবেশের পারস্পরিক ক্রিয়ায় মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো গড়ে ওঠে। এই মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো ব্যক্তির আচরণ, চরিত্র, অভ্যাস, মনোভাব, আগ্রহ, ইচ্ছা, চিন্তা-চেতনা প্রভৃতিকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করার মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের সংগঠন ও বিকাশকে ত্বরাম্বিত করে। আর এই মনস্তাত্ত্বিক কাঠামোর উপাদান সমূহের উপর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব গঠনকে ইতিবাচক বা নেতিবাচক দিকে প্রভাবিত করতে পারে।
আমার কথা হল, যেহেতু মনস্তাত্ত্বিক কাঠামো ব্যক্তির ইচ্ছাকেও প্রভাবিত করে তাই ইতিবাচক সুফল লাভের জন্য ব্যক্তিকে জোড়ালো ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করতে হবে। যেখানে তা সম্ভব হয়না, সেখানে জ্যোতিষবিদ্যার সঠিক দিক-নির্দেশনা গ্রহন ব্যতিত কোন বিকল্প নেই। তথা- সংখ্যা, তারিখ, রং, রত্ন, ধাতূ ইত্যাদি সম্পর্কে প্রদেয় পরামর্শ পূঙ্খানুপূঙ্খভাবে পালন করলে অবশ্যই ইতিবাচক সুফল পাওয়া যেতে পারে। এব্যাপারে অজস্র প্রমান দেয়ার মত মানুষ পাওয়া যাবে, যারা স্বীকার করে যে আমি রত্ন ধারন করে বা সংখ্যা-তারিখ অনুসরন করে সুফল পেয়েছি।
(৩) পরিবেশগত উপাদান (Environmental Factor) : পরিবেশ একটি বিস্তৃত ধারনা যা প্রাকৃতিক, সামাজিক, পারিবারিক প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়কে আওতাভূক্ত করে। আর এই পরিবেশগত বিভিন্ন উপাদান সমগ্রজীবনব্যাপী ব্যক্তির বিকাশ ধারাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করনের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের গঠন কাঠামোর ভিত্তি রচনায় ও উন্নয়নে বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল থাকে।
এ ছাড়াও ব্যক্তিত্ব গঠনে- শারীরিক গঠন, মেজাজ, বুদ্ধি, অনুরাগ ও মূল্যবোধ, প্রেষণা ও আবেগময় প্রবনতা, প্রকাশভঙ্গি প্রভৃতি সহায়ক উপাদানের ভূমিকাও কম নয়।
একজন মানুষকে আমরা যে রকম দেখি সে রকম না হয়ে তার কি কোন উপায় ছিল ? কেন সে এরকম হল ? কেন অন্য রকম হলনা ? হতে চাইলেই কি হতে পারত ? এই হওয়ার মধ্যে তার চাওয়ার বা চেষ্টার কি কোন অবদান আছে ? এ রকম অজস্র প্রশ্নের উত্তর খুঁজছি বছরের পর বছর ধরে। সর্বশেষ আমার সুদীর্ঘকালের গবেষণার ফল থেকে বলছি,- না, অমনটি না হয়ে তার কোন উপায় ছিলনা। যেমন ছিলনা তার জন্মস্থান, জন্মদাতা-ধাত্রী, জন্মতারিখ ও সময়ের উপর কোন অবদান। ঠিক তেমনি সবকিছুই তার অজ্ঞাতে এবং অনিচ্ছায় ঘটেছে। বলতে পারি প্রাকৃতিক নিয়মে। গ্রহ-নক্ষত্রও প্রাকৃতিক নিয়মের অধীন। আর প্রকৃতি ও গ্রহ-নক্ষত্র সবই স্রষ্টার ইচ্ছাধীন। পবিত্র কোরআন শরীফেও আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, সর্বত্রই নিয়মের চাকা বিদ্যমান। তাই বলব, স্রষ্টার নিয়মেই গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে আমার আমিত্ব গঠন হয়েছে বা আমি আমার মত হতে পেরেছি। এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই।