Nishat Tasnim জোয়ার-ভাটা সংঘটিত হওয়ার মূখ্য কারণ হচ্ছে চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণ শক্তি। তবে জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে চাঁদের আকর্ষণ বলই বেশী কাজ করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় দেখা গেছে, জোয়ার উৎপাদনের ক্ষেত্রে সূর্যের ক্ষমতা চাঁদের ক্ষমতার নয় ভাগের চার ভাগ। এছাড়াও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে আহ্নিক গতির প্রভাবও উল্লেখযোগ্য। আমরা সকলেই জানি, পৃথিবীতে দিনরাত্রি হওয়ার প্রধান কারণও এই আহ্নিক গতি। এই গতির ফলে সমুদ্র-স্রোতের দিক পরিবর্তন হয়। ফলে স্রোত যেদিকে প্রবাহিত হয় সেদিকে জোয়ার এবং যেদিক হতে প্রবাহিত হয় সেদিক ভাঁটার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পৃথিবীর আবর্তনের ফলে সৃষ্ট কেন্দ্রাতিগ শক্তি বা কেন্দ্রবিমুখী শক্তির ফলেও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টি হতে পারে। কোনো স্থানে জোয়ার সৃষ্টির প্রায় ৬ ঘণ্টা ১৩ মিনিট পরে ভাটা সংঘটিত হতে পারে।
আমরা জানি, সূর্য চন্দ্র অপেক্ষা বহুগুণ বড়। কিন্তু দূরত্বের বেলায় চন্দ্র সূর্য হতে পৃথিবীর অনেক নিকটবর্তী। যেখানে সূর্যের গড় দূরত্ব পৃথিবী হতে ১৫ কি.মি. সেখানে চন্দ্রের গড় দূরত্ব মাত্র ৩৮.৪ লক্ষ কি.মি.। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবেই সূর্য হতে চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তি অনেক বেশী হবে। যার ফলে জোয়ার-ভাঁটা সৃষ্টিতে সূর্য অপেক্ষা চাঁদের প্রভাব বেশী।
জোয়ার প্রধানত দুই প্রকার।
(১)মুখ্য জোয়ার:
চাঁদ যখন পৃথিবীর চারদিকে আবর্তন করে তখন পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের নিকটবর্তী হয়, সেই অংশে চাঁদের আকর্ষণের প্রভাবে পানি ফুলে উঠে তথা জোয়ারের সৃষ্টি হয়। এরূপ জোয়ারকে মুখ্য জোয়ার বলে। কোনো স্থানে একবার মুখ্য জোয়ার হওয়ার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা ৫২ মিনিট সময় অতিক্রম করলে পুনরায় সেখানে মুখ্য জোয়ার সৃষ্টি হয়।
(২)গৌণ জোয়ার:
চাঁদ পৃথিবীর যে পাশে আকর্ষণ করে তার ঠিক অপর পাশে জলরাশির ওপর মহাকর্ষ বল অনেকাংশে কমে যায় এর ফলে সে স্থানে কেন্দ্রাতিগ শক্তির সৃষ্টি হয়। ফলস্বরুপ চারদিকের পানি ঐ স্থানে এসে জোয়ারের সৃষ্টি করে। এরূপ সৃষ্ট জোয়ারকে গৌণ জোয়ার বলে।
মাঝে মাঝে চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণের জন্য জোয়ারের পানি অনেক বেশী ফুলে ওঠে। ফলে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়, একে তেজ কটাল বলে। সাধারণত পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য একই সরলরেখায় অবস্থান করলে তেজ কটালের সৃষ্টি হয়। অপরদিকে চন্দ্র ও সূর্য যখন পৃথিবীর সাথে এক সমকোণে থেকে পৃথিবীকে আকর্ষণ করে। তখন চাঁদের আকর্ষণ শক্তির প্রভাবে সেখানে জোয়ার হয় এবং সূর্যের আকর্ষণ শক্তির ফলে সেখানে ভাঁটা হয়। তবে চন্দ্রের আকর্ষণে যে জোয়ার হয়, সূর্যের আকর্ষণে তা বেশী স্ফীত হতে পারে না। এধরণের জোয়ার-ভাটাকে মরা কটাল বলে। সাধারণত অষ্টমীর তিথিতে মরা কটাল হয়। প্রতি এক মাসে দুইবার তেজ কটাল এবং দুইবার মরা কটাল হয়ে থাকে।