বিশ শতকের শুরুর দিকে,
পদার্থবিজ্ঞানের জগতে আজব কিছু ব্যাপার ঘটতে শুরু করল। চিরায়ত নিউটনিয়ান বলবিদ্যাকে অস্বীকার করে গড়ে উঠতে লাগলো আধুনিক পদার্থবিদ্যার নতুন এক ধারা- কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বা কোয়ান্টাম মেকানিক্স।
এর পেছনে ছিলেন ম্যাক্স প্লাঙ্ক,
হাইজেনবার্গ, নিলস বোর এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের আরো অনেক রথী-মহারথীরা। এই নতুন বিদ্যা বলতে লাগলো- আমাদের পরিচিত জগতের বাইরেও রয়েছে অসীম সংখ্যক সম্ভাবনার জগত। বস্তুর গতি জানা থাকলে তার অবস্থান অনিশ্চিত। বস্তু তরঙ্গে রুপান্তরিত হতে পারে, এমনকি তরঙ্গও বস্তুতে রুপান্তরিত হতে পারে। কেমন ধোঁয়াটে শোনাচ্ছে না?
এমনসব উদ্ভট কথাবার্তা শুনে পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানীরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। স্বয়ং আইনস্টাইনের ভুরু কুঁচকে গেল। তিনি বললেন, ঈশ্বর ডাজ নট প্লে ডাইজ। ঈশ্বর পাশা খেলেন না।
কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশন
১৯২৫-১৯২৭ সালের মধ্যে নিলস বোর এবং হাইজেনবার্গ মিলে একটি থিওরি প্রতিষ্ঠা করলেন- “কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশন”। আণবিক পর্যায়ের বস্তুর আচরণ নিয়ে একটি তত্ত্ব। পদার্থবিদদের অবস্থা।
এমনিতেই বেগতিক, তার উপর এই তত্ত্ব আবারও তাদের মাথা ঘুরিয়ে দিল। যুক্তি-পাল্টা যুক্তির ঝড় বইতে লাগলো এই তত্ত্বের পক্ষে-বিপক্ষে।
বিষয়টা বোঝানোর জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে বোর ও হাইজেনবার্গের কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশনে। কোপেনহেগেন ইন্টারপ্রিটেশন কী বলে?
বলে যে, একটি কোয়ান্টাম কণা বা পারমাণবিক মাত্রার একটি কণা একইসাথে তার সবরকম অবস্থায় থাকতে পারে। এই “সবরকম” অবস্থার সমন্বয়কে বলা হয় “সুপারপজিশন”। কেউ যখন কণাটিকে অবজার্ভ করবে, ঠিক তখন কণাটির একটি অবস্থান সুনির্দিষ্ট হবে।
আরেকটু সহজ করে বলার চেষ্টা করি। একটি কোয়ান্টাম কণার বিভিন্ন রকম
“অবস্থা” থাকতে পারে। যেমন, একটি কোয়ান্টাম কণা একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে কণা হিসেবে থাকতে পারে, আবার তরঙ্গ হিসেবেও থাকতে পারে। কোপেনহেগেন তত্ত্ব অনুযায়ী, কণাটিকে অবজার্ভ করার আগ পর্যন্ত সে একইসাথে কণা এবং তরঙ্গ
–উভয় অবস্থাতেই আছে। এই “উভয়”
অবস্থাটিই হল সুপারপজিশন। খোলাসা হল কিছুটা?
এই তত্ত্ব দৃশ্যমান জগতের বড় কোন বস্তুর উপর প্রয়োগ করলে তার ফলাফল কেমন হবে, তা ব্যাখ্যা করার জন্যই শ্রোডিঞ্জার সূত্রপাত করলেন তাঁর বিখ্যাত থট এক্সপেরিমেন্টের।