সবার ত্বক এক রকম হয় না। অ্যালার্জি হয় ত্বকের ধরনের ওপর নির্ভর করে। অ্যালার্জি শব্দটি অতিপরিচিত, কিন্তু এ নিয়ে ভুল ধারণারও শেষ নেই। অ্যালার্জির কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই। পৃথিবীর সব জিনিসই অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। কারও কারও ঠোঁটে লিপস্টিক দিলে হয়, আবার কারও লোশন, শ্যাম্পু, সাবান ব্যবহারেও অ্যালার্জি হয়। কাজল, চুলের রং থেকেও অনেকের অ্যালার্জি হয়। ত্বকে লালচে ভাব কি না, বিভিন্ন ধরনের গোটা উঠল কি না কিংবা ত্বক খসখসে কি না। অনেক সময় ত্বকে কালো ছোপ ছোপ দাগ পড়ে। মাথায় হলে চুলের গোড়া ভীষণ চুলকায় ও কপালের চারপাশ ফুলে ওঠে। যাঁদের বংশে হাঁপানি, একজিমা বা অ্যালার্জির সমস্যা আছে, তাঁদের অ্যালার্জির প্রবণতা তুলনামূলক অন্যদের চেয়ে বেশি। এমনকি দুশ্চিন্তাতেও অ্যালার্জি হতে পারে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদা খাতুন বলেন, কখনো কখনো শরীর ক্ষতিকর নয়, এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। এমন সব বস্তুর প্রতি শরীরের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে অ্যালার্জি বলা হয়। সাধারণত অ্যালার্জি হলে হঠাৎ শরীরে দানা ওঠা শুরু হয় বা শরীরে বিভিন্ন স্থানের ত্বক লাল চাকা চাকা হয়ে ফুলে যায় এবং সেই সঙ্গে প্রচণ্ড চুলকানি থাকতে পারে। অনেক সময় সারা শরীরও ফুলে যায় এবং শ্বাসকষ্ট, বমি, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, অস্থিসন্ধি ব্যথা, পাতলা পায়খানা ইত্যাদি হয়।
ত্বকের অ্যালার্জির চার-পঞ্চমাংশই প্রাথমিক এবং সহজাত উত্তেজক পদার্থ, যেসব জৈব দ্রাবক, ধৌতকারক সাবান, ডিটারজেন্ট বা এ ধরনের সামগ্রীর কারণে অ্যালার্জির শিকার হয়ে থাকেন। যাঁরা চামড়া, প্রসাধনসামগ্রী কিংবা ধাতব বস্তু তৈরির কারখানায় কাজ করেন, তাঁরাও এ ধরনের অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
আর্টিকেরিয়া
আর্টিকেরিয়ার ফলে ত্বক লালচে হয়ে ফুলে ওঠে এবং ভীষণ চুলকায়। ত্বকের গভীর স্তরে হলে মুখে, হাত-পা ফুলে যেতে পারে। আর্টিকেরিয়ার কারণে সৃষ্টি ফোলা অংশগুলো মাত্র কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী থাকে কিন্তু কখনো কখনো বারবার হয়। যেকোনো বয়সে আর্টিকেরিয়া হতে পারে। তবে স্বল্পস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বাচ্চাদের মধ্যে এবং দীর্ঘস্থায়ী আর্টিকেরিয়া বড়দের মধ্যে দেখা যায়।
সংস্পর্শজনিত ত্বক প্রদাহ
সংস্পর্শজনিত অ্যালার্জিক ত্বক প্রদাহ বা অ্যালার্জিক কনটাক্ট ডারমাটাইটিসে চামড়ার কোথাও কোথাও শুকনো, খসখসে, ছোট ছোট দানার মতো ওঠা। বহিঃস্থ উপাদান বা অ্যালার্জেনের সংস্পর্শে ত্বকে এমন হলে তাকে অ্যালার্জিক কনটাক্ট ডারমাটাইটিস বলা হয়। এর ফলে সাধারণত ত্বকে ছোট ছোট ফোসকা পড়ে। ফোসকাগুলো ভেঙে যায় চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে ত্বকের বহিরাবরণ উঠে যায়। ত্বক লালচে হয় ও চুলকায়, চামড়া ফেটে আঁশটে হয়।
পানিজনিত অ্যালার্জি
এ ধরনের অ্যালার্জি পানির কারণে হয়ে থাকে। পানি শরীরে লাগলে বা গোসলের পর শরীর বা ত্বক চুলকায় এবং শরীর লাল হয়ে ওঠে। একে অ্যাকুয়োজেনিক আর্টেকেরিয়া বলে। বিচিত্র এ অ্যালার্জির মূল কারণ পানি। তবে সাধারণভাবে ঠান্ডা পানির কারণে এ অসুখ বেশি হয়। পানির সংস্পর্শে আসার পর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে শরীরে অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। আপনা–আপনি এ অ্যালার্জি ভালো হয়ে যায়। তবে পানির সংস্পর্শে এলে যাঁদের অসুবিধা দেখা দেওয়া বা অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দেয়, তাঁরা গোসল করার আগে সারা শরীরে তেল মেখে নিতে পারেন। তাতে এ অ্যালার্জির প্রকোপ কমে আসবে।
একজিমা
একজিমা বংশগত চর্মরোগ, যার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়, চুলকায়, আঁশটে ও লালচে হয়। খোঁচানোর ফলে ত্বক পুরু হয় এবং কখনো কখনো উঠে যায়। এর ফলে ত্বক জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ত্বক থেকে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে এবং দেখতে ব্রণে আক্রান্ত বলে মনে হয়। এটা সচরাচর বাচ্চাদের মুখে ও ঘাড়ে এবং হাত ও পায়ে বেশি দেখা যায়।
অ্যালার্জির প্রাথমিক ও তাত্ক্ষণিক চিকিত্সা হিসেবে ওরাল, টপিকাল অথবা ইনজেক্টেবল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। তবে সঠিক ও উপযুক্ত চিকিত্সার পূর্বশর্ত অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী কারণটি খুঁজে বের করতে হবে এবং যথাসম্ভব তা এড়িয়ে চলতে হবে। অ্যালার্জিক জিনিসের সংস্পর্শে না এলে, অনেক ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে শরীরের সংবেদনশীলতা কমে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে। তবে চিকিত্সকের উপদেশ ও ওষুধপত্রের মাধ্যমে যেকোনো অ্যালার্জির রোগী সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন।
পাশাপাশি অ্যালার্জির কারণ হতে পারে, এমন সব খাবার যেমন চিংড়ি, ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, ডিম, বেগুন ইত্যাদি খাবার পরিহার করতে হবে। যাঁদের উষ্ণ পানির বদলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে অসুবিধা হয়, তারা ঠান্ডা পানির বদলে উষ্ণ পানি ব্যবহার করবেন। পানি নোনা হলে অ্যালার্জির প্রকোপ তীব্র হতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনমতো পানির বিকল্প ব্যবহার করতে হবে। প্রতিকারের জন্য প্রসাধনসামগ্রী কেনার আগে ভালো করে মেয়াদ, তারিখ দেখে নিন। সব সময় ভালো কোম্পানির পণ্য কেনার চেষ্টা করুন। যাঁদের ত্বক সংবেদনশীল, তাঁরা দেখেশুনে প্রসাধনসামগ্রী পণ্য ব্যবহার করুন। যে প্রসাধনে সমস্যা হয়, তা ব্যবহার বন্ধ করে দিন। অনেক দিন ধরে ঘরে রাখা কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করবেন না। ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখুন।