প্লাস্টিনেশন কী? - ScienceBee প্রশ্নোত্তর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রশ্নোত্তর দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম! প্রশ্ন-উত্তর দিয়ে জিতে নিন পুরস্কার, বিস্তারিত এখানে দেখুন।

+12 টি ভোট
183 বার দেখা হয়েছে
"স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা" বিভাগে করেছেন (11,730 পয়েন্ট)

1 উত্তর

+1 টি ভোট
করেছেন (11,730 পয়েন্ট)
 
সর্বোত্তম উত্তর

মানবদেহ সংরক্ষণ করে রাখার আধুনিক যে পদ্ধতি, তার নাম প্লাস্টিনেশন৷ যার জনক জার্মান বিজ্ঞানী গ্যুন্টার ফন হাগেন্স৷
মানব শরীরকে টিকিয়ে রাখার জন্য শত শত বছর ধরে মানুষ নানাভাবে চেষ্টা করে আসছে৷ সেই প্রাচীন মিশরের মমি থেকে শুরু করে আধুনিক জগতের প্লাস্টিনেশন৷ শুরুতে লক্ষ্যটা ছিলো ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে৷ কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সঙ্গে সঙ্গে এই দেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্য হয়েছে শরীরকে চেনা ও জানা৷ মানব শরীরের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অপার রহস্যকে খুঁজে বের করা৷

১৯৭৭ সালে জার্মান বিজ্ঞানী গ্যুন্টার ফন হাগেন্স এই প্লাস্টিনেশন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন৷ প্লাস্টিনেশন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘প্লাসিন' থেকে যার অর্থ আকৃতিতে রূপ দেওয়া৷ প্লাস্টিনেশনের মাধ্যমে কেবল জৈবিক শরীরের অঙ্গ ও কোষ নয়, গোটা শরীরকেও সংরক্ষণ করা হয়৷

মানুষ মারা যাওয়ার পর থেকেই তার শরীর দ্রুত পচতে শুরু করে যাকে বলা হয় ‘ডিকম্পোজিশন'৷ প্রথমে শরীরে থাকা এনজাইম কোষগুলো অবমুক্ত হতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে গোটা শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া এবং মাইক্রোঅর্গানিজমগুলো পচতে শুরু করে৷ শরীরে থাকা পানি এবং চর্বি সরিয়ে তার জায়গায় পলিমার ঢুকিয়ে প্লাস্টিনেশন এই পচে যাওয়াকে রোধ করে৷ প্লাস্টিনেশন শরীরের ব্যাকটেরিয়াগুলোকে টিকে থাকতে দেয় না, ফলে শরীরও আর পচতে পারে না৷ তবে শরীরের তরল পদার্থগুলো সরাসরি পলিমারের সংস্পর্শে কাজ করতে পারে না৷ তাই গ্যুন্টার ফন হাগেন্স একটি বিকল্প ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেছেন৷ প্রথমে শরীরের মধ্যে অ্যাসেটোন নামে দ্রাবক ঢুকানো হয় এরপর তার জায়গায় পলিমার ব্যবহার করা হয়৷

প্লাস্টিনেশনের মাধ্যমে শরীরকে দুইভাবে সংরক্ষণ করা হয়৷ একটা হলো কাগজের মত পাতলা করে মৃত শরীরটিকে কেটে কেটে রাখা৷ নয়তো পুরো আস্ত শরীরটাকেই বিভিন্ন ভঙ্গিতে রেখে দেওয়া৷

প্লাস্টিনেশনের ধাপগুলো এবার আরও সহজভাবে বলি৷ প্রথম পর্যায়ে মৃতদেহটির ভেতরে ফর্মালিন ঢোকানো হয়৷ ধমনির মাধ্যমে এই ফর্মালিন গোটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে এবং এই ফর্মালিন ব্যকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলে৷ ফলে শরীরের কোষগুলোর ‘ডিকম্পোজিশন' বা দ্রুত পচন প্রক্রিয়া থেমে যায়৷ এরপর গোটা শরীরটাকে অ্যাসেটোন নামক একটি দ্রাবকের চেম্বারে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় চুবিয়ে রাখা হয়৷ তবে তার আগে দেহ থেকে পানি এবং অতিরিক্ত চর্বি সরিয়ে ফেলা হয়৷ উল্লেখ্য, দেহকোষের শতকরা ৭০ ভাগই কিন্তু পানি৷ পরবর্তী পর্যায়ে অ্যাসেটোনের জায়গায় পলিমার সলিউশন ব্যবহার করা হয়৷ এজন্য মৃতদেহটিকে একটি ভ্যাকুয়াম চেম্বারের মধ্যে রাখা হয় এবং তার ভেতরে বাতাসের চাপ আস্তে আস্তে কমানো হয়৷ এক পর্যায়ে চেম্বারে থাকা অ্যাসেটোন ফুটতে শুরু করে৷ এভাবে কোষে জমে থাকা অ্যাসেটোনগুলো বের হয়ে যেতে শুরু করে৷ চেম্বারের অন্য একটি পাইপ দিয়ে ঢোকানো হয় পলিমার৷ যেমন এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সিলিকন রাবার৷ এই সিলিকন রাবার কোষগুলোর ভেতরে প্রবিষ্ট হয় এবং দেহের সবকোষে এই পলিমার বা সিলিকন রাবার পুরোপুরি প্রবিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে৷

এভাবে কয়েক সপ্তাহ পার হয়৷ সিলিকন রাবারের কারণে গোটা চেম্বারই একটি শক্ত টুকরোয় পরিণত হয় যার ভেতরে শুয়ে আছে মৃত মানুষের শরীরটি৷ তারপর সেই জমাট বাধা শক্ত টুকরোটি বিশেষভাবে কাটা হয়৷ অত্যন্ত পাতলা মাত্র কয়েক মিলিমিটার চওড়া করে কাটা এসব ফালিগুলোতে একটি মানুষের শরীরের প্রতিটি অংশ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে৷ একে বলা হয় শিট প্লাস্টিনেশন৷

তবে মৃতদেহটিকে পলিমারের মধ্যে জমতে না দিয়ে বের করেও আনা যায়৷ এই ক্ষেত্রে দেহটিকে যে কোন ভঙ্গিতে বসানো কিংবা দাঁড় করানো যায়৷ তবে এইজন্য বিশেষ পলিমার ব্যবহার করতে হয় যেটা আলো, বাতাস এবং তাপের মধ্যে টিকে থাকতে পারে৷ এরপর পুরো দেহটিকে একটি এয়ার টাইট চেম্বারে রাখা হয় এবং তাতে গ্যাস এবং তাপ ঢোকানো হয়৷ এর ফলে দেহটিকে যেই ভঙ্গিতে বসানো হয়েছে সেভাবেই সেটি শক্ত হয়ে যায় এবং এভাবেই টিকে থাকে মাসের পর মাস৷ একে বলা হয় ফিগার প্লাস্টিনেশন৷

প্লাস্টিনেশনের এই প্রক্রিয়া শেষ করতে সাধারণত এক বছর লেগে যায়৷

Answered by: R. H. Palash

এ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না

10,776 টি প্রশ্ন

18,469 টি উত্তর

4,743 টি মন্তব্য

278,080 জন সদস্য

72 জন অনলাইনে রয়েছে
2 জন সদস্য এবং 70 জন গেস্ট অনলাইনে
  1. RainaOaks70

    100 পয়েন্ট

  2. 88clbe1

    100 পয়েন্ট

  3. LorenzaBragg

    100 পয়েন্ট

  4. RollandPoind

    100 পয়েন্ট

  5. DamarisA6438

    100 পয়েন্ট

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্মুক্ত বিজ্ঞান প্রশ্নোত্তর সাইট সায়েন্স বী QnA তে আপনাকে স্বাগতম। এখানে যে কেউ প্রশ্ন, উত্তর দিতে পারে। উত্তর গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই একাধিক সোর্স যাচাই করে নিবেন। অনেকগুলো, প্রায় ২০০+ এর উপর অনুত্তরিত প্রশ্ন থাকায় নতুন প্রশ্ন না করার এবং অনুত্তরিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রতিটি উত্তরের জন্য ৪০ পয়েন্ট, যে সবচেয়ে বেশি উত্তর দিবে সে ২০০ পয়েন্ট বোনাস পাবে।


Science-bee-qna

সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ট্যাগসমূহ

মানুষ পানি ঘুম পদার্থ - জীববিজ্ঞান চোখ এইচএসসি-উদ্ভিদবিজ্ঞান এইচএসসি-প্রাণীবিজ্ঞান পৃথিবী রোগ রাসায়নিক শরীর #ask রক্ত আলো মোবাইল ক্ষতি চুল কী #science চিকিৎসা পদার্থবিজ্ঞান সূর্য প্রযুক্তি স্বাস্থ্য মাথা প্রাণী গণিত বৈজ্ঞানিক মহাকাশ পার্থক্য #biology এইচএসসি-আইসিটি বিজ্ঞান খাওয়া গরম শীতকাল #জানতে কেন ডিম চাঁদ বৃষ্টি কারণ কাজ বিদ্যুৎ রাত রং উপকারিতা শক্তি লাল আগুন সাপ মনোবিজ্ঞান গাছ খাবার সাদা আবিষ্কার দুধ উপায় হাত মশা শব্দ মাছ ঠাণ্ডা মস্তিষ্ক ব্যাথা ভয় বাতাস স্বপ্ন তাপমাত্রা গ্রহ রসায়ন উদ্ভিদ কালো পা কি বিস্তারিত রঙ মন পাখি গ্যাস সমস্যা মেয়ে বৈশিষ্ট্য হলুদ বাচ্চা সময় ব্যথা মৃত্যু চার্জ অক্সিজেন ভাইরাস আকাশ গতি দাঁত কান্না আম হরমোন বাংলাদেশ
...