Home » কেপটাউনের রহস্যময় নিখোঁজ বন্দুক: বৃত্তান্ত ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
কেপটাউনের রহস্যময় নিখোঁজ বন্দুক: বৃত্তান্ত ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
এই বন্দুকগুলো এমনভাবে প্রতিস্থাপিত ছিলো, যাতে সৈন্যরা নিজেদেরকে একটি প্রতিরক্ষামূলক পরিখার মধ্যে রেখে ব্যারেলটি ফায়ারিং পজিশনে তুলতে এবং লক্ষ্যবস্তুর দিকে ঘুরাতে পারে।
এই লেখাটি একটি বিরল বন্দুকসদৃশ সামরিক ধ্বংসাবশেষকে নিয়ে, যা প্রায় ১০০ বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়া অবস্থায় ছিলো। এটি আবিষ্কৃত হয় কেপটাউন এর সমুদ্র উপকূলের একটি পরিত্যক্ত রেস্ট হাউজের সুইমিং পুলের নিচ থেকে।
কেপটাউনের প্রত্নতত্ত্ববিদ বা ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ টিম হার্টবিবিসিকে বলছিলেন যে, “হারিয়ে যাওয়া বন্দুকগুলো খুবই বিরল। কারণ, এগুলোর কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল। এই বন্দুকগুলো এমনভাবে প্রতিস্থাপিত ছিলো, যাতে সৈন্যরা নিজেদেরকে একটি প্রতিরক্ষামূলক পরিখার মধ্যে রেখে ব্যারেলটি ফায়ারিং পজিশনে তুলতে এবং লক্ষ্যবস্তুর দিকে ঘুরাতে পারে। যার ফলে, শত্রুদের কাছ থেকে নিজেদের আড়াল করা সম্ভবপর হয়। এই কাজটি করার জন্য বন্দুকগুলোকে বিশেষ জলীয় উত্তোলন ব্যবস্থার সাথে লাগানো হয়েছিল। গুলি চালানোর পরে, এটি প্রতিরক্ষামূলক পরিখার নীচে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ভল্টে ফিরে যেতো। এটি ছিলো অত্যন্ত বিরল একটি সামরিক প্রক্রিয়া এবং মধ্য-ভিক্টোরিয়ান যুগের প্রকৌশলবিদ্যার একটি দুর্দান্ত উদাহরণ”।
হার্টের গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত এই কামান আকারের ‘বন্দুক’ খুব কম ছিল। ওয়েস্টার্ন কেপ আর্কাইভস এবং রেকর্ডস সার্ভিসে প্রাপ্ত নথি অনুসারে, ইংল্যান্ড থেকে কমপক্ষে তিনটি এধরণের বন্দুক কেপে আনা হয়েছিল।
২০১৮ এর গোড়ার দিকে হার্টকে একটি বিল্ডিং সাইটে ডেকে আনা হয়েছিল। যেখানে একজন নির্মাণকর্মী এই পুরাতন সুইমিং পুলটি খনন করে যাচ্ছিলেন। তিনি লোহার টুকরো, যুদ্ধাস্ত্রের অংশ এবং একটি বৃহতাকার ‘গানপিট’ আবিষ্কার করেছিলেন। হার্ট তৎক্ষণাৎ জানান যে, তারা যা পেয়েছিলেন তা হলো সামরিক প্রকৌশলবিদ্যার এক অনন্য ব্রিটিশ কীর্তি।
প্রায় ১০০ বছর ধরে পরিত্যক্ত একটি স্থাপনায় সমাধিস্থ অবস্থায় থাকা এই নিখোঁজ বন্দুক টি ১৮৮৫ সালে অল্প সময়ের মধ্যে কেপ এ আনা হয়। কেপের চারপাশে তিনটি বিশাল “বিরল বন্দুক” স্থাপন করা হয়েছিল। তখন হাইড্রোলিক উত্তোলন পদ্ধতিতে বন্দুকের পিটকে নিচে নামিয়ে তারা শত্রুদের গোলা থেকে আড়াল করতো।
প্রত্নতত্ত্ববিদ হার্ট বলেছেন, বিশাল এই বিরল নিখোঁজ বন্দুক টি বেশ কয়েক টন ওজনের ছিল।
আলফা ওয়ানের মালিক, বুটিক প্রপার্টি ডেভলপমেন্ট সংস্থার এলিমেন্টালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইমন ব্রিজ ব্যাখ্যা করেছেন যে, “প্রকল্পটি ২০১৮ সালের আগস্টে শুরু হয়েছিল। আমরা সাইটের অধীনে ঐ রেস্ট হাউজে কাজ করছিলাম। তবে নিশ্চিত ছিলাম না এটি কতটুকু গভীর, বা প্রকৃতপক্ষে কী পাওয়া যাবে। একবার মাটির উপরের কাঠামোটি ভেঙে ফেলা হলে, কাঠামোটি ক্ষতিগ্রস্থ না করে নিরাপদভাবে আবিষ্কার করা এবং নথিভুক্ত করা হয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা প্রত্নতাত্ত্বিক দল, পাশাপাশি ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশলীদের নিয়ে এসেছিলাম”।
ব্রিজ বলেন, “তিন মাসের এক শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়ায় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক খনন শুরু হয়েছিল, যার মাধ্যমে বন্দুকের বিষয়টি উন্মোচিত হয়েছিল এবং তারপরে অত্যন্ত শক্ত কাদামাটির অংশ হাতে হাতে খনন করা হয়েছিল, বিশেষজ্ঞরা সাবধানতার সাথে ডকুমেন্টিং করেছিলেন এবং যা যা আবিষ্কৃত হয়েছিল তা সংরক্ষণাগারভুক্ত করেছিলেন”।
বোর্ডে থাকা অন্যান্য বিশেষজ্ঞের মধ্যে মিক্সড আইডিয়াস নামে একটি সংস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যা ধাতব কাজ এবং পুনঃস্থাপনে বিশেষজ্ঞ। মিক্সড আইডিয়াস বন্দুকের স্থান পুনরুদ্ধার করে এবং আলফা ওয়ানের জন্য লোগো তৈরি করতে কিছু টুকরো পুনর্ব্যবহার করে। অ্যাভিএইচ কনস্ট্রাকশন (পিটিআই) লিমিটেড এই প্রকল্পের নির্মাতা এবং এই চ্যালেঞ্জিং বহুমুখী প্রকল্পটি ব্যতিক্রমী ফলাফল সহ বাস্তবায়নের জন্য ক্ষেত্রটিতে তাদের বিস্তৃত অভিজ্ঞতা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়েছে।
হার্টের গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত এই কামান আকারের বন্দুক খুব কম ছিল। তৎকালীন সময়ে ইংল্যান্ড থেকে কমপক্ষে তিনটি এরকম বন্দুক কেপে আনা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে সেনাবাহিনীর নিয়মাবলি মেনে মাসে একবার বন্দুকগুলো চালানো হত। এখানকার লোক এই স্থানটিকে নিয়ে বিরক্ত ছিল। পরবর্তীতে এই জমিটি বিক্রি করে দেওয়া হয়।
টিম হার্ট বলেছিলেন যে, “১৮৮৫ সালের বেশ কিছুটা অস্পষ্ট ঐতিহাসিক ঘটনা চলাকালীন সময়ে এই নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বন্দুক কেপেকে আনা হয়েছিল”। হার্ট ব্যাখ্যা করছিলেন, ব্রিটেন ভারত শাসন করছিল, রাশিয়া আফগানিস্তানের কাছাকাছি অঞ্চল দখল করেছিল এবং উভয় দেশই চিন্তিত ছিল যে অন্যরা মধ্য এশিয়া জুড়ে তার নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত করতে চায়। এই উত্তেজনা সংক্ষিপ্তভাবে ব্রিটেন এবং রাশিয়াকে যুদ্ধের প্রান্তে নিয়ে আসে এবং ব্রিটেন ভয় করেছিল যে ভারতে রাশিয়ার আগ্রাসন দক্ষিণ আফ্রিকা সহ এর সমস্ত উপনিবেশকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ব্রিটিশ সেনাবাহিনী যখন শুনল যে রাশিয়া দক্ষিণ আফ্রিকাতে যুদ্ধজাহাজ প্রেরণ করতে পারে, তখন ব্রিটিশরা কেপটাউনের চারপাশে আধুনিক ব্রিচ-লোডিং কামান স্থাপন করেছিল, এর মধ্যে এই তিনটি বিশাল এবং রহস্যময় ‘হারিয়ে যাওয়া বন্দুক’ ছিল।
সালেহ আহমেদ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
অ্যামেরিকার 'ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-অশকশ'-এ ডাইনোসরের দাঁত নিয়ে গবেষণায় প্যালায়োজিওগ্রাফি, প্যালায়োক্লাইমেটোলজি এবং প্যালায়োইকোলজি সম্পর্কিত জার্নালে যৌথভাবে প্রকাশিত ফলাফল থেকে দেখা যায়,...