আপনারও কি মাঝে মাঝে মনে হয়, যে আপনার মোবাইল টি হঠাৎ ভাইব্রেট করে উঠেছে? কিংবা তার রিংটোন আপনি শুনতে পারছেন? মনে হয় কি কখনো? যদি মনে হয় তাহলে শুনুন, আপনি ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত। আপনি “ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম” নামক একধরণের প্রযুক্তিগত মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত।
কি চিন্তিত হয়ে পড়লেন না কি? চিন্তিত না হয়ে আসুন জেনে নেই এর সম্পর্কে। “ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোম ” এক ধরনের প্রযুক্তিগত মানসিক সমস্যা, যার কারণে আপনার মনে হবে যে আপনার মোবাইল ফোনটি ভাইব্রেট করছে কিন্তু আসলে তখন তা করেনি।
এখন, অনেকের ফোন তো ভাইব্রেট করা থাকে না, কিন্তু তারাও এই ধরণের সমস্যায় পড়ে? তাদের মনে হয় তাদের ফোনের রিংটোন হয়তো বাজছে, কিন্তু আসলে তা বাজেনি তখন। এই সমস্যাকে বলে ‘রিংজাইটি’ (ringxiety)‘। একটু ভীড় কিংবা কোলাহল পূর্ণ এলাকায় হঠাৎ করেই তাদের মনে হয় এই বুঝি মোবাইলটি বেজে উঠলো।
তাদের মনে হয় তারা ফোনের রিংটোনটি শুনতে পেয়েছেন। কিন্তু মোবাইল হাতে নিয়ে দেখা যায় আসলে কেউই ফোন কিংবা মেসেজ দেয়নি।
গবেষকদের মতে, মোবাইল ফোনগুলো আমাদের শরীরে এমন একটি অভ্যাসের সৃষ্টি করছে যাতে শরীরের নানা সংবেদনগুলোকে আমাদের শরীর ফোনের কল কিংবা মেসেজ আসার ভাইব্রেশন ভেবে ভুল করছে। মোবাইল ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা ৯০ জন কোনো না কোনোভাবে এমন বিভ্রান্তির শিকার হন।
একটি হাসপাতালের কর্মচারীদের মধ্যে করা আরেকটি জরিপেও ঠিক একই রকম ফলাফল দেখতে পাওয়া যায়। তাদের মতে, তারা প্রায় প্রতি সপ্তাহে কিংবা প্রতি মাসেই একবার না একবার এই সমস্যার সম্মুখীন হন। মজার ব্যাপার হলো, সে বছরই কাকতালীয়ভাবে ম্যাককুয়ারি ডিকশনারি নামের একটি অভিধান ফ্যান্টম ভাইব্রেশন সিন্ড্রোমকে তাদের ‘Word of the Year’ হিসেবে ঘোষণা দেয়।
ড. মাইকেল রোথবার্গের মতে, এটি এক ধরনের হ্যালুসিনেশন। কিন্তু কেন হয় এমন? বর্তমানে আমাদের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে আমরা আমাদের দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও বেরোতে হলে সাথে আমাদের মোবাইলটি থাকা চাই। কোনো কাজের ফাঁকে কিংবা অবসরে মোবাইল বের করে একটু টেপাটিপি করা চাই!
অনেকে তো আবার ফোনের নোটিফিকেশন চেক না করে পাঁচ মিনিটও থাকতে পারেন না। আমাদের পকেটে কিংবা ব্যাগে মোবাইলটি রাখতে রাখতে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে মোবাইলটি যেন আমাদের শরীরেরই একটি অংশ।প্রথমদিকে যারা পেজার* ব্যবহার তাদের মাঝে এই সমস্যা সীমাবদ্ধ থাকলেও, আস্তে আস্তে এটি প্রায় প্রতিটি স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীর জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এখন আপনার মনে জাগতে পারে, এখন কি করবো? আপনি এর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন, যাতে এর থেকে কিছুটা রেহায় পাওয়া যায়। যদিও এর থেকে সম্পূর্ণ অবকাশ পাওয়ার কোনো উপায় নাই, তাও নিম্নোক্ত উপায়গুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেনঃ
১. কিছুক্ষণের জন্য প্রকৃতির কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে ঘুরে আসুন। যেমন: আপনার কর্মস্থল কিংবা বাসার কাছাকাছি গাছপালা, নদী কিংবা খোলা মাঠ যদি থাকে তবে সেখানে যান। যদি এসব কিছুই না থাকে তবুও কিছুক্ষণের জন্য বাইরে থেকে ঘুরে আসুন। এই সময় আপনি ফোনের দিকে না তাকিয়ে প্রকৃতির দিকে তাকান।
২. আপনি ছোটখাট একটি মেডিটেশন করে নিন। আপনার মন প্রশান্ত হবে, সেই সাথে দুশ্চিন্তাও দূর হয়ে যাবে।
৩. হালকা কিছু ব্যায়াম করে নিতে পারেন ১০ মিনিটে। এতে শরীরের জড়তা দূর হবে।
৪. হাতের কাছে মজার কোনো কৌতুকের বই রাখুন। দুই-একটি কৌতুক পড়ে ফেলুন। মন ভালো হয়ে যাবে।
৫. যদি উপরের কোনোটিই সম্ভব না হয়, তবে আপনার পছন্দের কোনো গান শুনুন। এক্ষেত্রে রিল্যাক্সিং কোনো গান কিংবা মিউজিকও শুনতে পারেন। এ নিয়মগুলো মেনে চললে ধীরে ধীরে আপনি কমিয়ে আনতে পারবেন আপনার সমস্যা।
*পেজার হ’ল একটি ওয়্যারলেস টেলিযোগযোগ ডিভাইস যা বর্ণানুক্রমিক বা ভয়েস বার্তা গ্রহণ করে এবং প্রদর্শন করে। একমুখী পেজারগুলি কেবল বার্তাগুলি গ্রহণ করতে পারে, তবে প্রতিক্রিয়া পেজার এবং দ্বিমুখী পেজারগুলি অভ্যন্তরীণ ট্রান্সমিটার ব্যবহার করে বার্তাগুলিকে স্বীকৃতি জানাতে, জবাব দিতে এবং উদ্ভব করতে পারে।
নাফিসা তাসমিয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক