বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সিস্টেম চালু করার লক্ষ্যে স্পেস-এক্স এর কর্ণধার এলন মাস্ক স্টারলিংক স্যাটেলাইট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছেন। স্পেসএক্সের এই মিশনের লক্ষ্য মূলত ছোট ছোট প্রায় ১২ হাজারের মতো স্যাটেলাইটের সাথে আন্তঃসংযোগ এর মাধ্যমে সে সকল স্থানে উচ্চমানের ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক প্রদান করা, যে সকল স্থানে নেটওয়ার্ক নেই বললেই চলে এবং ব্যয়বহুল। এখন পর্যন্ত স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪২২।
স্টারলিংক হলো স্পেসএক্স নির্মিত একটি লো-অরবিট স্যাটেলাইট প্রজেক্ট। ইন্টারনেট অ্যাক্সেস আরও সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে এই স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড প্রজেক্টটি হাতে নেওয়া হয়েছে। স্পেসএক্স স্যাটেলাইটগুলো সামরিক-বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এর উদ্দেশ্যেও বিক্রির পরিকল্পনা করছে।
আমরা বলতেই পারি, শহর থেকে যেরকম স্পীডে বা সুবিধায় ইন্টারনেট এক্সেস করছি গ্রাম বা প্রান্তীয় অঞ্চলে তা মোটেও সম্ভব নয়; সম্ভব হলেও তা খুবই কম। আর এর থেকে সৃষ্টি হয় ‘ডিজিটাল ডিভাইড’।
![]() |
কেননা এখানে আমরা অঞ্চলভেদে ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা কম বা বেশি পাচ্ছি বা পাচ্ছিই না। তাই স্টারলিংক স্যাটেলাইটের কাজ হবে পৃথিবীর সকল প্রান্তে ইন্টারনেটের সুবিধা পৌঁছে দেওয়া।
কেননা শুধুমাত্র অপটিক্যাল ফাইবার কিংবা ক্যাবল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী আসলেই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান সহজ নয়। বরং তা খুবই কঠিন, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল।
তাই স্টারলিংক এ সকল সমস্যা দূরীকরণে কাজ করবে। তাছাড়া স্টারলিংকের উদ্দেশ্য কেবল গ্লোবাল কানেক্টিভিটি নয়। একইসাথে হাই-স্পিড, লো-ল্যাটেন্সি, নেক্সট-লেভেল ইন্টারনেট কানেকটিভিটি নিশ্চিত করাও এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। আর এক্ষেত্রে স্টারলিংক প্রতিযোগিতা করবে অপটিক্যাল ফাইবার ও জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাথে।
আরও পড়ুনঃ ১। ১ টি বৃষ্টির ফোঁটা থেকে জ্বলবে ১০০ টি LED বাল্ব ২। থ্রিডি প্রিন্টেড অঙ্গ বাঁচাবে হাজারো প্রাণ ৩। প্রজেক্ট নিউরালিংক-মানব মস্তিষ্ক যদি একটি চলন্ত কম্পিউটার |
লো-অরবিট স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৫০০-১,০০০ কিলোমিটার উপরে থাকে, যেখানে জিও-স্টেশনারি স্যাটেলাইট থাকে ৩৪,০০০ কিলোমিটার উপরে! পৃথিবীপৃষ্ঠের অত্যন্ত কাছাকাছি অবস্থান করার কারণে এই স্যাটেলাইটগুলো দিয়ে অত্যন্ত দ্রতগতিতে ডেটা আদান-প্রদান করা সম্ভব হয়। এবং কাছাকাছি অবস্থানের কারনে ল্যাটেন্সিও হয় অনেক কম।
অন্যদিকে কিন্তু অপটিক্যাল ফাইবারে আলোকে গ্লাস মিডিয়ামের ভেতর দিয়ে যেতে হয় বলে আলোর গতি প্রায় ৪০% পর্যন্ত কমে যায়। আর স্টারলিংক স্যাটেলাইটগুলো যোগাযোগ ও তথ্য আদান প্রদানের জন্য লেজার লাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করবে।
স্পেসএক্স থেকে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইট এর ওজন প্রায় ২৬০ কেজির মতো হয়ে থাকে এবং এতে একটি কম্প্যাক্ট flat-panel এর মত ডিজাইন করা থাকে যা এর আয়তন কমিয়ে আনে। এতে করে উৎক্ষেপণের সময় স্যাটেলাইটটি সর্বাধিক ক্ষমতায় থাকতে পারে।
স্পেসএক্স এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও এলন মাস্ক আশা করেন, স্টারলিংকের সাহায্যে স্কাইনেটের মাধ্যমে গিগাবিটে ডাটা ট্রান্সফার সম্ভব হবে এবং লো-ল্যাটেন্সি বা পিং কমানো সম্ভব হবে।
![]() |
ল্যাটেন্সি বলতে বুঝায় একটি কম্পিউটার অন্য একটি কম্পিউটারের সাথে কত দ্রুত কানেক্ট হতে পারে তার পরিমাপ এবং ইন্টারনেট স্পিডের তারতম্যে এর ভূমিকা রয়েছে। তাই লো-ল্যাটেন্সি নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্টারলিংক দ্রুততম স্পিডে ইন্টারনেট সেবাদানে ভূমিকা রাখবে।
জরিপে দেখা গিয়েছে, উত্তর আমেরিকায় সাধারণমানের ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দিতে প্রায় ৪০০ স্টারলিংক স্যাটেলাইট দরকার। আর যদি আপনি মানসম্মত সেবার কথা বলেন, সেক্ষেত্রে এই সংখ্যার দ্বিগুণ পরিমাণ বাড়াতে হবে।
পরিকল্পনা করা হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য প্রায় ১২ হাজার স্টারলিংক স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপন করা হবে।
আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট এক্সেস করা জনসাধারণের কাছে আরও সহজলভ্য হয়ে উঠবে। এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীটা হয়তো আরও একধাপ এগিয়ে যাবে নেটওয়ার্কিং এর দিক থেকে।
সৈয়দ মহিউজ্জামান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
+1
+1
+1
+1
1
+1