করোনারি হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ হলো Beta-blockers, যা রোগীর জীবন বাঁচাতে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম উন্নয়নে সাহায্য করে। একইভাবে Aspirin এবং অন্যান্য Antiplatelet ধরনের ওষুধগুলোও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। তবে এখন রক্ষকই ভক্ষক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুই ধরনের ওষুধ সেবনকারী রোগীদেরকে নীরবে ধাবিত করছে মৃত্যুর দিকে। উত্তপ্ত আবহাওয়ায় সাধারণ এই ওষুধগুলোই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
Beta-blockers বা β-blocker হলো এক শ্রেণীর ওষুধ যা মূলত অস্বাভাবিক হৃদযন্ত্রের ছন্দ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে এবং প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পর দ্বিতীয় হার্ট অ্যাটাক থেকে হার্টকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। Aspirin নামক ওষুধের গ্রুপটি মূলত এমন্ কিছু প্রাকৃতিক পদার্থের উৎপাদন বন্ধ করে যা কিছু ক্ষেত্রে জ্বর, ব্যথা, ফোলা এবং রক্ত জমাট না বাঁধানোর জন্য দায়ী। Aspirin এর উপাদান ব্যথা উপশমকারী, অ্যান্টাসিড, কাশি এবং ঠান্ডার ওষুধের মতো অন্যান্য ওষুধের সাথেও পাওয়া যায়।
কিন্তু উত্তপ্ত আবহাওয়ায় এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোই কাল হয়ে দাঁড়ায় হৃদরোগীদের জন্য। এই সময়টিতে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার প্রবণতা আরো বেশি থাকে। ‘Nature Cardiovascular Research’ এ প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা অনুযায়ী, উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে সংঘটিত হার্ট অ্যাটাকের শিকার রোগীদের এক বড় অংশ Aspirin ও অনান্য Antiplatelet ধরনের ওষুধগুলো সেবন করতেন।
যেসব রোগীরা এই ধরনের ওষুধগুলো সেবন করতেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেক বেশি এবং উত্তপ্ত আবহাওয়ায় এই ওষুধ সেবনে তাদের সতর্ক থাকা উচিত বলে জানায় Yale School of Public Health Department of Epidemiology (Environmental health) এর Assistant professor এবং এই গবেষণার প্রথম লেখক, Kai Chen।
বায়ু দূষণ, শীতল আবহাওয়া এবং পরিবেশের অন্যান্য বাহ্যিক প্রভাবকের কারণে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বাড়ন্ত প্রামাণিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে, উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তবুও কোন ধরনের লোক এই বাহ্যিক প্রভাবকগুলো দ্বারা বেশি প্রভাবিত হয় তা নিয়ে গবেষণা করছেন মহামারি সংক্রান্ত গবেষকরা।
Yale এর গবেষকরা ২৪৯৪ টি ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন, যাদের প্রত্যেকেই ২০০১ এবং ২০১৪ এর মাঝে উত্তপ্ত আবহাওয়ায় মৃদু হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন। তাদের এই গবেষণায় উঠে আসে যে, তাপজনিত হার্ট অ্যাটাকের হার বেড়ে যায় যখন গ্রহের তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩.৬ থেকে ৫.৬ ফারেনহাইট)বেড়ে যায়।
Yale এর গবেষণার তথ্যে উঠে আসে যে, Beta-blockers বা Antiplatelet ধরনের ওষুধ সেবনকারীদের উত্তপ্ত দিনে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের চেয়ে বেশি হয়। Antiplatelet ওষুধ সেবনকারীদের ঝুঁকি ৬৩% বৃদ্ধি পায় এবং Beta-blockers ধরনের ওষুধ ব্যবহারকারীদের ৬৫% বৃদ্ধি পায়। যে সকল মানুষ দুই ধরনের ওষুধই ব্যবহার করেন, তাদের ঝুঁকি ৭৫% বেড়ে যায়। অন্যদিকে যারা এই ওষুধগুলো গ্রহণ করেন না তাদের গরমের দিনে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি নেই বললেই চলে।
যদিও গবেষণাটি শুধুমাত্র উত্তপ্ত আবহাওয়ার কারণে ওষুধগুলোর বিরূপ প্রভাবের সংযোগ দেখায় মাত্র। এই গবেষণাটি ওষুধগুলো ব্যবহারেই রোগীর হার্ট অ্যাটাক হবে বা কোনো মানুষকে হার্ট অ্যাটাকের দিকে ঠেলে দিবে তা প্রমাণ করে না। এটি একটি সম্ভাবনা মাত্র।
তবুও গবেষণায় উঠে আসা একটি কারণ এই ওষুধ দুটোকে হার্ট অ্যাটাকের জন্য দায়ী করার পেছনে কিছুটা জোরালোভাবেই ভূমিকা রাখে, তা হলো, যখন গবেষকরা কম বয়স্ক রোগীদের (২৫ থেকে ৫৯ বছরের) এবং বয়স্ক রোগীদের (৬০ থেকে ৭৪ বছরের) নিয়ে একটি তুলনা উপস্থাপন করেন, তখন দেখা যায় যে, স্বাভাবিকভাবেই কম বয়স্ক রোগীদের, বয়স্কদের তুলনায় হৃদরোগের ঝুঁকি খুবই কম থাকা সত্ত্বেও, যে সকল কম বয়স্ক রোগী Beta-blocker বা Antiplatelet ধরনের ওষুধ সেবন করতেন তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি বয়স্কদের তুলনায় আরো বেশি ছিলো।
আরেকটি কারণেও এই দুই ধরনের ওষুধকে দায়ী করা করা হয় তা হলো, অন্যান্য হৃদরোগের ওষুধগুলো হার্ট অ্যাটাকের সাথে জড়িত কোনো কারণ প্রদর্শন করে না। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম পাওয়া যায় Statins। গরমের দিনগুলোতে Statins গ্রুপের ওষুধগুলোও হৃদরোগের ঝুঁকি তিনগুন বাড়িয়ে দেয়।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে বোঝা যায় যে, আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত কিছু রোগীদের জন্য হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যাবে। তাই হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো রাখার স্বার্থে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সতর্কতা অবলম্বনের ক্ষেত্রে শীতলীকরণ কৌশল ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন: এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা বা কোনো Public cooling center এ কিছুক্ষণ অবস্থান করা। কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত রোগীদের উত্তপ্ত আবহাওয়ায় বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের না হওয়াই শ্রেয় এবং বাইরে অবস্থানরত অবস্থায় পানি পান করার মাধ্যমে নিজেদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অতীব জরুরি। একইসাথে হার্ট অ্যাটাকের সাথে জড়িত এই সাধারণ ওষুধগুলো ব্যবহারেও তাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
দিদারুল ইসলাম/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সাইটেকডেইলি