জীবন সীমার সাথে শরীরের আকৃতির সম্পর্ক খুব গভীর। যখন প্রশ্ন করা হয়, ছোট বা বড় কোন আকৃতির স্তন্যপায়ী বেশী দিন বাঁচে, তখন একটু চিন্তায় পরতেই হয়। এই প্রশ্নের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উত্তর হলো, বৃহদাকার স্তন্যপায়ীদের জীবনকাল ছোট আকৃতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের থেকে দীর্ঘ হয়। অর্থাৎ, স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বেশী বাঁচে !
যেমন- একটা ছোট ইঁদুর বাঁচে ৪ বছরের মতো, কিন্তু সেখানে একটা হাতি বাঁচে ৪০-৭৫ বছরের মতো। এর প্রস্তাবযোগ্য কারণটা হলো, বৃহৎ আকৃতির প্রাণীদের পুষ্টি গ্রহণের চাহিদা জিনগতভাবে অনেক বেশী থাকে, ফলে তাদের শক্তি চাহিদাও অনেক বেশী থাকে স্বাভাবিকভাবেই। গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায় যে, বৃহৎ আকৃতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শরীরে অনেক কোষ এবং অধিক পুষ্টিচাহিদা থাকে তাই তাদের খাদ্য পরিপাক হয় ধীরে ধীরে এবং এই কারণেই তাদের কোষের বয়স বাড়তে সময় নেয় যেটা ছোট আকৃতির প্রাণীদের ক্ষেত্রে হয় না।
স্তন্যপায়ীদের পরিপাক থেকে শুরু করে সকল জৈবরাসায়নিক কার্যাবলী জিন বা ডিএনএ এর ক্ষুদ্র অংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জিনগত পরিবর্তন যা মিথাইলেশান নামেও পরিচিত সেটা জিনের কার্যাবলী বন্ধ বা চালু হওয়াকে নির্দেশ করে। মিথাইলেশানের বিন্যাস থেকেই একটা নতুন স্তর সম্পর্কে জানা যায় যা জিনে ডিনএনএ সিক্যুয়েন্সের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করে। মিথাইলেশান হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এপিজেনেটিক চিহ্ন যা যেটা ডিএনএ এর পরিবর্তনগুলোকে ব্যাখ্যা করে, নাইট্রোজেন বেইস এর কোনরকম পরিবর্তন করা ছাড়াই। ডিনএনএ মিথাইলেশানে মিথাইল গ্রুপ থাকে যা সাইটোসিন নামক নাইট্রোজেন বেইস এর সাথে যুক্ত হয়। এছাড়াও বয়স অনুযায়ী “মিথাইল গ্রুপ” এর বিন্যাস এ পরিবর্তন আসে যা “এপিজেনেটিক ক্লক বা ঘড়ি” নামে পরিচিত। এই এপিজেনেটিক ক্লক থেকে বিভিন্ন প্রজাতির জীবন্ত প্রাণীদের বয়স নির্ধারণ করা যায়।
জিনগুলো মিথাইলেটেড বেইস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় এবং বিবর্তনের সৃষ্টি করে। তাই একটা প্রজাতির জীবনসীমা নির্ধারক তথ্যগুলো বংশানুক্রমে তাদের জিনের মিথাইলেশান গুচ্ছ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই জীবনসীমা নির্ধারক গুচ্ছগুলো কিছু জিনকে নির্দেশ করে যারা শরীরের পরিপাকের জন্য দায়ী।
তাই বলা যায়, প্রাণীর জীবনসীমার সাথে তার কোষীয় পরিপাকের ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান যা বৃহৎ আকৃতির স্তন্যপায়ীদের দীর্ঘ জীবনের জন্য দায়ী। এই কারণে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা বেশী বাঁচে!
সামান্তা কায়সার / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ Science.org