আমি যদি আপনাকে বলি যে, আপনার সাথে নরওয়ের কোন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজনের পরিচয়ের বা সম্পর্কের মাঝে মাত্র ৭ জনের ব্যবধান রয়েছে, তাহলে কি আপনি আমাকে বিশ্বাস করবেন? বিশ্বাস করুন কিংবা নাই করুন, এ কথাটি কিন্তু একটি বিখ্যাত থিওরির উপর ভিত্তি করে বলা। তার নাম (Six Degrees of Separation) সিক্স ডিগ্রীজ অফ সেপারেশন, সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে এই থিওরিটির আসলেই ভিত্তি আছে।
আপনার দুটি বন্ধু রয়েছেন যাঁরা একে অপরকে চেনেন না। এ দু’জনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া মাত্রই তাঁরা অপরকে চিনবেন। এটি হচ্ছে সেকেন্ড ডিগ্রী অফ সেপারেশন, মানে তাঁদের দুই জনের পরিচয় হওয়ার ভেতরে মাত্র একজন মানুষের হাত আছে। আর ফার্স্ট ডিগ্রী অফ সেপারেশন হচ্ছে আপনি যাদেরকে সরাসরি চেনেন। সিক্স ডিগ্রীজ অফ সেপারেশন অনুযায়ী, দুনিয়ার যেকোন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য সর্বোচ্চ ৭ জন মানুষই যথেষ্ট।
আপনি ‘ক’ নামের মানুষটি কে চেনেন, তার মাধ্যমে আপনি ‘খ’ নামের মানুষটির সাথে পরিচিত হলেন। ‘খ’ এর মাধ্যমে আবার পরিচিত হলেন ‘গ’-এর সাথে। এই পরিচিতির জাল ধরেই আপনি আমাকে, নরওয়ের সে মানুষটিকে, অথবা এমনকি টম ক্রুজ কেও চিনতে পারেন! মূলত, জীববিজ্ঞানে পড়া খাদ্যজাল এর মতোই পুরো মহাবিশ্বই একটি পরিচিতির জাল, যেখানে যেকোনো দুই জন মানুষের মাঝে আছে সর্বোচ্চ ৭ জন মানুষ।
ওয়াশিংটন পোস্ট অনুযায়ী, মাইক্রোসফটের গবেষকেরা বিভিন্ন দেশের প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের মাঝে আদান-প্রদান করা আনুমানিক ৩০০ কোটি বৈদ্যুতিক বার্তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণাটির জন্য ২০০৬ সালের জুন মাসে মাইক্রোসফট মেসেঞ্জারের ডাটাবেজ ব্যবহার করা হয়, যা কিনা তৎকালীন ইলেকট্রনিক মেসেজিং ট্রাফিকের প্রায় অর্ধেক।
এরিক হোরভিজ এবং জুর লেসকোভেক নামক দুইজন গবেষক ধরে নিয়েছিলেন যে, দুইজন মানুষের মাঝে মাত্র একটি বার্তা আদান-প্রদান করা হলেও তারা একে অপরের সাথে পরিচিত। এরপর তাঁরা একজোড়া মানুষের একে অন্যের সাথে পরিচিত হতে সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যের চেইন শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। মোট জোড়ার সংখ্যা ছিল ১৮০ কোটি। তাঁদের চেইনের গড় দৈর্ঘ্য ছিল ৬.৬ জন মানুষ, এবং ৭৮ শতাংশ মানুষই শুধুমাত্র সাতজন বা তার চেয়ে কম মানুষের দ্বারা সংযুক্ত। তবে কয়েকজন মানুষের মাঝে এমনকি ২৯ জন মানুষ পর্যন্তও ব্যবধান ছিল।
হোরভিজ ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেন, “আমার কাছে ব্যাপারটি বেশ চমকপ্রদ মনে হয়েছে। আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা একটি কথাই বোঝায় যে মনুষ্য জাতির মধ্যে অপরিবর্তনীয় একটি সংযোগ রয়েছে। আমরা সবসময়ই অনুভব করি যে পৃথিবীটি হয়তোবা অনেক ছোট, কিন্তু আমরা যা পেয়েছি তা অনেক বড় মাত্রায় এবং অনুভূতিরও ঊর্ধ্বে।“
নিজস্ব প্রতিবেদক/ হাসিনাত রিফা
তথ্যসূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান
+1
+1
+1
1
+1
1
+1
5
+1
2
+1