সাপ মানুষের কাছে চিরকালই একটি ভয়ের বস্তু। সাপের একটি কামড়ই একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। সাপের বিষ অল্পকিছু সময়ের মধ্যেই ধ্বংস করে দিতে পারে মস্তিষ্কের কার্যক্রম, বন্ধ করে দিতে পারে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী এই উপাদানটির উপকারী দিক খুঁজে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু সফলতাও এসেছে। সাপ ছাড়া অন্যান্য বিষাক্ত প্রাণি নিয়েও চলছে গবেষণা। গবেষকদের একটি দল তেমনই এক বিষ সংক্রান্ত মেডিকেল সফলতা সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন জার্নালে।
বিজ্ঞানী, জৈব প্রকৌশলী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা সাপের বিষ ব্যবহার করে একটি জৈব আঠালো জেল তৈরি করেছেন। জৈব জেল তৈরির এই গবেষণাটি সম্প্রতি Science advance জার্নালে প্রকাশিত হয়। রক্তপাত হতে থাকা কোন ক্ষতে এই জেল ব্যবহার করা হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা কার্যকর হবে বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন।
জৈব সুপার গ্লু এর উৎস:
দক্ষিণ আমেরিকার ক্রান্তীয় নিম্নভূমির অন্যতম বিষাক্ত সাপ ল্যান্সহেড পিট ভাইপার Bothrops atrox নামক সাপের বিষে বিজ্ঞানীরা Batroxobin বা Reptilase নামক এনজাইম শনাক্ত করেন। Batroxobin কে বলা হয় রক্ত তঞ্চক। কেননা এই এনজাইম শিকারের দেহের রক্ত জমিয়ে দিতে পারে। এই এনজাইম থেকেই তৈরি হয়েছে বায়ো সুপার গ্লু।
কার্যপদ্ধতি:
বিজ্ঞানীদের একটি দল দেহের টিস্যুভিত্তিক এই আঠা তৈরি করেছেন। এই কাজটি করা হয়েছে বিষের সাথে পরিশোধিত জেলাটিন যুক্ত করে। জৈব-আঠালো এই পদার্থটি উজ্জ্বল আলোর সংস্পর্শে আসলে দ্রুত কাজ করে। যে কোন রকমের আঘাত, আহতাবস্থা বা মারাত্মক রক্তপাতের সময় আঠার টিউবটি ক্ষতস্থানে চেপে ধরে তাতে দৃশ্যমান কোন আলো ফেললে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই এটি কাজ করতে শুরু করে।
সাপের বিষ ভিত্তিক গ্লু বনাম ক্লিনিক্যাল ফাইব্রিন গ্লু:
ক্লিনিক্যাল ফাইব্রিন আঠা বিভিন্ন সেরিব্রাল ফ্লুইড লিকের সময় ব্যবহার করা হয়। এই ফাইব্রিন গ্লু এর চেয়ে সাপের বিষ ভিত্তিক গ্লু অনেক বেশি আঠালো। গবেষণায় বলা হয়েছে ক্লিনিক্যাল গ্লু এর তুলনায় এটি ১০ গুণ পর্যন্ত বেশি কার্যকরী, অর্থাৎ এটি বিচ্ছিন্নতা প্রতিরোধে বেশি সফল হবে। এছাড়াও রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করতেও এটি অধিক সফল। যেখানে বর্তমানে ব্যবহৃত পদ্ধতিতে রক্তপাত বন্ধ করতে প্রায় ৯০ সেকেন্ড সময় লাগে, সেখানে সাপের বিষ ভিত্তিক এই গ্লু মাত্র ৪৫ সেকেন্ডেই রক্ত জমাট বাঁধার সক্ষমতা রাখে।
গবেষণার একজন সহকারী বলেন, “আমাদের এই উদ্ভাবিত সুপার গ্লু যুদ্ধক্ষেত্রে বা গাড়ি দুর্ঘটনার মতো মারাত্মক পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষা করতে সহযোগিতা করবে।” তবে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আরও বেশ কিছু ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হবে। প্রাণনাশকারী বিষ দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর পদ্ধতি সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
মো. মাসরুল আহসান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসুত্রঃ সায়েন্স এলার্ট , টেক গেজেটস
+1
+1
+1
+1
+1
3
+1
+1