পলিফিরিন হুইল হলো একটি বৃহৎ আণবিক রিং, যেটা বৃহত্তম অ্যারোমেটিক চক্র হিসাবে একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছে। বলা হচ্ছে, হতে পারে এর মাধ্যমে আমরা অস্বাভাবিক কোয়ান্টাম প্রভাবসমূহের জন্য পরীক্ষার ক্ষেত্র হিসাবে আরও বড় রিং তৈরির দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম।
আমরা জানি, বেনজিনের মতো অ্যারোমেটিক অণুতে π-ইলেক্ট্রন থাকে। π ইলেকট্রনগুলো কার্বন পরমাণুর রিংয়ের উপরে এবং নিচে ডোনাট-আকারের কক্ষপথে প্রবেশ করে। যখন কোন রিংয়ে 4n+2 সংখ্যক π ইলেক্ট্রন থাকে এবং এর ফলে অণুটি স্থিতিশীল হয়, তখন এতে অ্যারোমেটিসিটি সৃষ্টি হয়।
অ্যারোমিটিসিটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, চৌম্বকীয় ক্ষেত্রে সেই ডিলোক্যালাইজড ইলেকট্রনগুলোর সঞ্চারণ ঘটে। ফলে রিং থেকে তড়িৎ সৃষ্টি হয়। আমরা জানি, যে তড়িৎক্ষেত্রের প্রভাবে চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। তাই অ্যারোমাটিক যৌগগুলো নিজস্ব ক্ষুদ্র চৌম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে।
একটি বেনজিন রিংয়ের ভিতরে, এই চৌম্বকীয় ক্ষেত্রটি বহিরাগত অন্য কোন চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের বিপরীত দিকে নির্দেশ করে, কিন্তু রিংয়ের বাইরে এটি একই দিকে নির্দেশ করে। কিন্তু একটি অ্যান্টি-অ্যারোমেটিক অণু, যেটা 4n সংখ্যক π-ইলেক্ট্রন ধারণ করে, সেখানে রিং কারেন্টটি বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয় এবং প্ররোচিত চৌম্বকটি উল্টে যায়।
ইতোপূর্বে সর্ববৃহৎ স্বীকৃত অ্যারোমেটিক রিংয়ে 62 টি π-ইলেক্ট্রন ছিলো। যেহেতু বৃহত্তর অণুগুলি ইলেকট্রন ডিলোকালাইজেশন বন্ধ করে দেয় তাই সেগুলির পক্ষে অ্যারোমেটিসিটি অর্জন কঠিন। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যারি এল অ্যান্ডারসন আরও বড় অ্যানোমেটিক রিং হতে পারে কিনা তা অনুসন্ধান করতে চেয়েছিলেন।
সুতরাং তার দল অ্যালকাইন দ্বারা পরস্পরের সাথে যুক্ত করে দস্তা পোরফেরিনেন একাধিক আণবিক রিং তৈরি করেন এবং সাইকেলের চাকার হাব এবং স্পোকের মতো প্রতিটি রিংকে টেমপ্লেট অণু ব্যবহার করে বৃত্তাকার শেপে রাখেন।
তারপরে তারা অণু থেকে অ্যারোমেটিক বা অ্যান্টি-অ্যারোমেটিক হওয়ার উপযুক্ত সংখ্যায় না আসা পর্যন্ত ইলেকট্রন সরিয়ে নিতে থাকেন। এর মধ্যে বৃহত্তম কাঠামোটি ছিল 17 nm এর পরিধি সহ একটি ন্যানোরিং এবং এটি ছয়-স্পোকযুক্ত টেম্পলেটের একটি জোড় দ্বারা ১২ টি পোরফেরিন ইউনিট ধারন করতে পেরেছিলো। এর নিরপেক্ষ আকারে, প্রতিটি পোরফেরিন তার নিজস্ব বিচ্ছিন্ন রিং প্রবাহ বজায় রাখতে সক্ষম হয়।
এন্ডারসন বলেছেন, “তবে এতে আপনি যখন জারনের স্থিতি পরিবর্তন করেন, আপনি সম্পূর্ণটাতেই একটা রিং স্রোত পেতে পারেন যা পুরো ন্যানোরিংয়ের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।” এতে +6 জারণ অবস্থায়, অণুতে 162 টি π-ইলেক্ট্রন থাকে এবং টেমপ্লেটের স্পোকস গুলিতে হাইড্রোজেন এবং ফ্লোরিন পরমাণুর NMR সংকেতের ভিত্তিতে অ্যারোমেটিসিটির স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায়।
কায়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যারোমিটিসিটিতে অধ্যয়নরত রাইনার হার্জেস বলেছেন, “আমি বিস্মিত হয়েছি যে এই আকার নিয়েও এটি এখনও কার্যকর।” তিনি আরো বলেন, “156 টি π-ইলেকট্রন পরিমাণে যথেষ্ট।”
এদিকে অ্যান্ডারসনের দলও 12 টি-পোরফিরিন রিং কে এক জোড়া বিভিন্ন টেম্পলেটে সাথে সংযুক্ত করেছিলেন, যা রিংটিকে দেখতে 8 আকারের মত বাঁকিয়ে দিয়েছে।
করোনা যেভাবে আপনার শরীরের
|
দলটি ভেবেছিল যে, এই আকারের ফলে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র একটি রিংয়ে ক্লকওয়াইজ বিদ্যুৎ প্রবাহ এবং অন্যটিতে এন্টিক্লকওয়াইজ বিদ্যুৎ প্রবাহ সৃষ্টি করবে যারা একে অপরকে বাতিল করে দেয়। NMR স্পেকট্রামের মাধ্যমে তারা দেখনন যে এই অণুতে আসলেই কোনও গ্লোবাল রিং কারেন্ট ছিল না।
কাজেই তারা পরামর্শ দেন যে অণুটির জ্যামিতিক পরিবর্তন এর মাধ্যমে অ্যারোমিটিসিটি আনা যেতে পারে। গবেষকরা ইতিমধ্যে আরও বড় সুগন্ধযুক্ত রিং তৈরি করার চেষ্টা করছেন যার দ্বার অস্বাভাবিক কোয়ান্টাম প্রভাবগুলি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হবে।
শিশুরা করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত? অভিভাবকদের যা জানা দরকার |
গবেষকরা কোয়ান্টাম কম্পিউটারের উপাদান হিসাবে সুপারকন্ডাক্টিং উপকরণের মাইক্রোমিটার আকারের বৃত্ত অনুসন্ধান করছেন। হার্জেস মনে করে যে এই দানবাকৃতির অ্যারোমেটিক রিং এরকম লুপ তৈরির উপায়ের সন্ধান দেয়।
অ্যান্ডারসন এবং তার সহকর্মীরাই যে কেবল অ্যারোমেটিক যৌগকে নতুন দিগন্তে পৌছো দিচ্ছেন তা কিন্তু না। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাণ ইউনিভার্সিটির জিশান উ গত সপ্তাহে একটি খাঁচা আকৃতির যৌগের মোড়ক উন্মোচন করেন, যা থেকে দেখা যায়, অ্যারোমেটিক যৌগ কেবল রিংয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
অণুতে দুটি ব্রিজহেড কার্বনের মধ্যে থাইওফিন ইউনিটের তিনটি শৃঙ্খল থাকে যা তিনটি সংযুক্ত আণবিক লুপ তৈরি করে। এর জারনমান +6 হলে তা অ্যারোমেটিক হয়। তার দলটি এটিকে সাজেস্ট করে কারণ থাইফিনিসের তিনটি লুপের প্রতিটি স্বতন্ত্রভাবে অ্যারোমেটিক এবং প্রতিটি লুপে 34টি π-ইলেক্ট্রন থাকে।
এই অণু দুটি প্রমাণ করে যে, অ্যরোমেটিক রিং সাধারণ বেনজিনের রিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি বড় হতে পারে। তবে তা ধাতব একটি মাইক্রোস্কোপিক রিংয়ের চেয়ে ছোট। হার্জেস অবশ্য আরো যোগ করেছেন: “এটি এই মেসোস্কোপিক স্কেলে অ্যারোমেটিসিটি বাড়িয়ে তুলছে, এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা এর আকর্ষণীয় প্রভাব এবং কাজ খুঁজে পাব।”
পরিশেষে আমরা বলতে পারি, এই আবিষ্কারগুলো রসায়ন বিজ্ঞানের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের দিকেই নির্দেশ করছে।
করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ-
১।রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা
২।লবণ মেশানো গরম পানি কি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে ?-না
৩।করোনা যেভাবে আপনার শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে !(ইন্টারেক্টিভ ডিজাইনসহ)
৪।ফ্যাক্ট চেক: (মিথ্যা) এক টুকরা লেবুতেই ধ্বংস হবে করোনাভাইরাস
৫।আমেরিকা বা চীনের ষড়যন্ত্র নয়।করোনাভাইরাস এসেছে প্রকৃতি থেকেই-গবেষণা
৬।করোনাভাইরাস স্মার্টফোনে প্রায় ৯ দিন জীবিত থাকতে পারে – গবেষণা