১১ই নভেম্বর ২০২০, Nature পাবলিকেশনের একটি প্রতিবেদনে, ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি নতুন গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখানে গবেষকরা বলেছেন, মানুষের সৃষ্ট শব্দ ও আলো দূষণ এভিয়ান প্রজাতির জন্য খুবই মারাত্মক।
গবেষকরা উপগ্রহের ডেটা ব্যবহার করে, উত্তর আমরিকান পাখিদের নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলেন। সেখানে তারা পাখির চোখে দেখতে পেয়েছিলেন, কিভাবে মানব সৃষ্ট শব্দ ও আলো দূষণ পাখির প্রজননকে প্রভাবিত করে। গবেষণায় আরও বলা হয় হয়েছে, মানব সৃষ্ট শব্দ ও আলো দূষণ জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রভাবিত করে।
গত কয়েক শতকে, পাখির সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে গেছে। বিজ্ঞানীরা এবং ভূমি ব্যবস্থাপকরা সন্ধান করেছেন কী কারণে পাখির সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা আলো ও শব্দ দূষণকে উপেক্ষণ করেছেন। কারণ, আলো ও শব্দ দূষণের ফলে যে পাখির প্রজনন ব্যাঘাত ঘটে তার সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের জানা ছিল না।
২০১১সালে সর্বপ্রথম উচ্চ রেজোলিউশনের যন্ত্র ব্যবহার করেছিল, নাসা জাতীয় মহাসাগর ও বায়ুমন্ডলীয় অ্যাসোসিয়েশন (NOAA)
ক্যালিফোর্নিয়া পলিটেকনিক স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী ক্লিন্ট ফ্রান্সিস বলেছেন, “গবেষণায় দেখা যায় যে, মানব সৃষ্ট শব্দ ও আলো পাখির প্রজননকে গভীরভাবে পরিবর্তন করতে পারে।”
‘নেস্ট ওয়াচ’ প্রোগ্রামের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, উত্তর আমেরিকায় ১৪২টি প্রজাতির পাখি ছিল এবং বাসা ছিল ৫৮,৫০৬টি। শব্দ ও আলো দূষণের ফলে সব পাখির প্রজননে ব্যাঘাত ঘটেছিল, তারা স্বাভাবিক ভাবে প্রজনন সম্পন্ন করতে পারেনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রজনন ঋতুতে পাখিরা পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার পায় না দূষণের কারণে ।পাখির বাচ্চারাও দূর্বল হয়ে পড়ে এবং সহজেই শিকার হয়ে যায়। আবার অনেকক্ষেত্রে, পাখিরা প্রজননের জন্য দিনের সময়টা বেছে নেয়।কারণ,দিনেই বেশির ভাগ পাখি শিকার হয়ে থাকে। তাই দিনের বেলা বাচ্চাদের পাহাড়া দেওয়ার জন্য সবসময় বাচ্চার সাথে থাকে এবং রাতের বেলা খাবারের সন্ধানে বের হয়।
গবেষকরা বলেছেন, পরিবেশ দূষণের কারণে পাখিরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে একমাস আগে ঘাসের উপর, জলাভূমি, এবং উন্মুক্ত পরিবেশে বাসা বাঁধতে শুরু করে। বন্য পরিবেশে যেসকল পাখি থাকে, তারা প্রজনন ঋতুর ১৮ দিন আগে থেকে বাসা বাঁধে।
আলো ও শব্দ দূষণের ফলে জলবায়ুর ও পরিবর্তন হচ্ছে এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে পাখি যথা সময়ে প্রজনন করতে পারছে না এবং দিন দিন পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
ফ্রান্সিস বলেছেন, “যেসকল পাখি পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের প্রজনন কাল এগিয়ে নিয়েছে, তারা সফলতার সাথে উন্নত প্রজনন সম্পন্ন করেছে।”
গবেষনায় দেখা যায় যে, মুক্ত অঞ্চলের পাখিদের চেয়ে, বনাঞ্চলীয় পরিবেশের পাখিরা শব্দের প্রতি বেশি সংবেদনশীল। গবেষকরা ২৭টি ভিন্ন প্রজাতির পাখি দিয়ে গবেষণা করেছেন এবং সেখানে দেখেছেন যে, পাখিদের শারীরিক গঠন, আকার-আকৃতি অনেকটাই নির্ভর করে আলো ও শব্দ দূষণের উপরে। কারণ, অনেক পাখিই বেশি সংবেদনশীল। হালকা দূষণেও তাদের প্রজনন ব্যাঘাত ঘটে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,যে পাখি যত বেশি আলোক সংবেদনশীল সেই পাখি ততবেশি তার প্রজনন সময়কাল এগিয়ে নিয়েছিল। শব্দদূষণ পাখিকে বাসা বাঁধতে বিলম্বিত করে।
পাখি-প্রজনন এর একটি মজার বিষয় হচ্ছে, প্রজননের জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগে স্ত্রী পাখিকে পুরুষ পাখি গান শোনায় এবং গান শোনার পরে স্ত্রী পাখি বংশবৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তুত হয়।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, উত্তর আমেরিকান পাখিদের সংবেদনশীলতা পরীক্ষা করে তাদের জন্য উপযুক্ত আবাসস্থল তৈরি করতে হবে। যেন শব্দ ও আলো দূষণ পাখির প্রজননকে পরিবর্তন না করতে পারে।
আমেনা আঁখি/ নিজস্ব প্রতিবেদক
আরো পড়ুন
নোটিফিকেশন-ই কি আমাদের স্মার্টফোন আসক্তির কারণ? -না আসছে আরেক মহামারী, ভবিষ্যৎবাণী বিল গেটস-এর নিউইয়র্ক শহরের ৭ গুণ আকারের বরফখণ্ড এগিয়ে আসছে পেঙ্গুইন কলোনির দিকে |
তথ্যসূত্রঃ নাসা