সম্প্রতি আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা পরিচালিত জুনো (Juno) মিশন এর মাধ্যমে বৃহস্পতির উপগ্রহ আইও (Io) এর জমিনে বিশাল আকার লাভার হ্রদ এর ছবি তোলা হয়েছে। সৌরজগতে সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়গিরির সক্রিয় অঞ্চল হিসেবে ধরা হয় এই উপগ্রহকেই।
নাসার তোলা ছবিতে বিশাল রিং আকৃতির লাভার হ্রদ গুলোর মাঝামাঝি অংশ উষ্ণ এবং চারপাশে ঠান্ডা এলাকা দিয়ে বেষ্টিত। এই হ্রদ গুলোর ছবি পাওয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেছে JIRAM (Jovian Infrared Auroral Mapper) নামের একটি বিশেষ যন্ত্র যা Juno নামের স্পেস ক্রাফটে সংযুক্ত আছে। আর এই স্পেসক্রাফটটি সৌরজগতের সবচেয়ে বৃহৎ গ্রহ বৃহস্পতি কে প্রদক্ষিণ করছে।
এর পূর্বে ২০২৩ সালের মে মাসে জুনো মিশনের ব্যবহৃত স্পেসক্রাফট ‘আইও’ উপগ্রহের প্রায় ৩৫,০০০ কিমি কাছ দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। একই বছরের অক্টোবর মাসে স্পেসক্রাফটটি ১৩,০০০ কিলোমিটার কাছে যায়। আর এই আগ্নেয়গিরির লেক গুলোর ছবি তুলতে JIRAMবৃহস্পতির উপগ্রহ ‘আইও’ থেকে ইনফ্রারেড লাইট বা অবলোহিত রশ্মি ক্যাপচার করেছে। নাসার এই মিশনের জন্য ইতালিয়ান স্পেস এজেন্সির দেয়া JIRAM নামক এই স্পেসক্রাফট টিকে ইনফ্রারেড আলো গ্রহণ করতে পারার মতো করেই তৈরি করা হয়েছে।
ইতালির ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর এস্ট্রোফিজিক্সের এলেসান্দ্রো মুরা যিনি জুনো মিশনের কো-ইনভেস্টিগেটরের দ্বায়িত্বে আছেন তিনি বলেন,
“জুনো থেকে পাওয়া ইনফ্রারেড চিত্রগুলো উচ্চ রেজুলেশনের। ফ্লাইবাই থেকে অনুকূল অবস্থায় পাওয়া চিত্রগুলো নির্দেশ করে ‘আইও’ এর পৃষ্ঠ ক্যালডেরা (অপেক্ষাকৃত বড় আকৃতির জ্বলামুখ কে ক্যালডেরা বলে) বৈশিষ্ট্যের লাভার হ্রদে দ্বারা আবৃত”।
তিনি আরো বলেন,
“আমাদের কাছে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী যে অঞ্চলের সবচাইতে পরিষ্কার চিত্র আমরা পেয়েছি সেখানে প্রায় ৩ শতাংশ এলাকা জুড়েই গলিত লাভার হ্রদ রয়েছে।”
নাসার এই মিশন থেকে লাভার হ্রদের চিত্র ও তথ্য নিয়ে গবেষকরা Nature Communications Earth and Environment এ জার্নালেও প্রকাশ করেছেন।
এই মিশন থেকে পাওয়া তথ্য শুধু ‘আইও’তে প্রচুর লাভার হ্রদ থাকার বিষয়টিই নির্দেশ করে না, বরং উপগ্রহটির পৃষ্ঠের নিচে কি ঘটতে পারে তারও একটি আওয়াজ প্রদান করে। অধিকাংশ ইনফ্রারেড চিত্রগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় লেক গুলোর চারপাশের সীমানা এবং কেন্দ্রে মাঝামাঝি একটি পাতলা লাভার বৃত্ত হয়েছে। যা নির্দেশ করছে যে এই লাভা প্রতিনিয়ত ঠান্ডা হতে চাইলেও নিচ থেকে আসা উত্তাপে ঠান্ডা হতে পারছে না। যা অনেকটা আগুনে থাকা গরম দুধের সর পড়া ঠিক আগ মুহূর্তে যেমনটা থাকে ঠিক সেই রকম।
দুধের উপরের স্তরটি নিচের তুলনায় কিছুটা ঠান্ডা থাকায় তুলনামূলক পাতলা একটি সরের স্তর পড়ে কিন্তু সরটি পুরোপুরি জমাট বাঁধতে পারে না কেননা নিচে প্রতিনিয়ত তাপ আসছে। লেকের এই অবস্থার ফলে দেখা যায় লেক থেকে সম্পূর্ণ লাভা পুরোপুরি বেরিয়ে আসে না বরং একটা সাম্যাবস্থায় থাকে।
সামনের দিনগুলোতে নাসার এই মিশন থেকে আরো তথ্য উঠে আসলে সুদূরপ্রসারী গবেষণায় কাজে দিবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
জুম্মান আল সিয়াম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ জেপিএল.নাসা.গভ, লাইভসায়েন্স, জিওটিভি