বিভিন্ন দেশের নতুন গবেষণা আর ম্যাসাচুসেটস-এ বড় রকমের করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে সাধারন মানুষ ভাইরাস কীভাবে ছড়ায় সে ব্যাপারে মার্কিন কর্মকর্তাদের ভরসাজনক বিবৃতি আশা করছিল।
এই কর্মকর্তারা জোর দিয়েছিলেন যে,এই ভাইরাসটি মুলত এমন ব্যক্তিদের দ্বারা ছড়িয়ে পড়ে যাদের মধ্যে জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণগুলো দেখা যাচ্ছে।যদি এ তথ্য সত্যি হয় তবে আমাদের সকলের জন্য সুসংবাদ ছিল যে, যেহেতু সুস্পষ্টভাবে অসুস্থ লোকদের চিহ্নিত করা যায়, ফলে প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রন করা কিছুটা হলেও সহজ হবে।
তবে দেখা যাচ্ছে যে,কমপক্ষে ৮২টি ক্ষেত্রে ম্যাসাচুসেটস করোনা ভাইরাস ক্লাস্টারটি এমন লোকদের দিয়ে শুরু হয়েছিল যাদের কেন লক্ষণই প্রকাশ পায়নি। আবার অর্ধডজন গবেষণায় দেখা গেছে যে, লক্ষণবিহীন লোকদের দিয়েই বেশিসংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়।
কয়েক সপ্তাহ ধরে ফেডারেল কর্মকর্তারা জোর দিয়েছিলেন যে, যাদের এখনও লক্ষণ প্রকাশ পায়নি তাদের দ্বারাও সংক্রমণ ঘটতে পারে তবে এটা ভাইরাস সংক্রমণের উল্লেখযোগ্য কারণ নয়।
করোনা আক্রমণ কি যৌন ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ? কি বলছে গবেষণা ! |
পহেলা মার্চে এবিসির মার্কিন স্বাস্থ্য ও মানব সেবাদানকারী বিষয়ক সেক্রেটারি অ্যালেক্স আজার বলেছেন, নতুনভাবে করোনা ছড়িয়ে পড়ার জন্য লক্ষণ প্রকাশ না করে ছড়িয়ে পড়া প্রধান কারণ নয়। “আপনার সত্যিকারের লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে এমন ব্যক্তিদের প্রতি মনোনিবেশ করা দরকার,রোগটি নিয়ন্ত্রণে লক্ষণসমূহ বেশি ভুমিকা পালন করবে”।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন এর ওয়েবসাইটটিও এই কথার পুনরাবৃত্তি করে।“লোকেরা লক্ষণগুলি দেখানোর আগে কিছুটা ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, নতুন এই করোনা ভাইরাস নিয়ে এটি হবার খবর পাওয়া গেছে, তবে একে ভাইরাসটি ছড়িয়ে যাবার মূল উপায় বলে মনে হয় না”
শনিবার হোয়াইট হাউজে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসনের করোনা ভাইরাস প্রতিক্রিয়া সমন্বয়ক ডা. দেবোরাহ বার্স লক্ষণবিহীন সংক্রমণ সম্পর্কে ভিন্ন মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে তারা ২০ বছরের কম বয়সী লোকদের বোঝার চেষ্টা করছেন যাদের উল্লেখযোগ্য লক্ষণ গুলো নেই।
তিনি আরো বলেন,“যতক্ষন না আপনি সত্যিই বুঝতে পারবেন যে কতজন লোক লক্ষণ প্রকাশ করে আর কতজন লোক লক্ষণ প্রকাশ করা ছাড়াই ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, ততক্ষণে আমরা মনে করি জনগনের পক্ষে এটি জানা ভালো যে, গুরুতর অসুস্থতার সম্ভাবনা কম হলেও খুব দ্রুতই ভাইরাসটি ছড়িয়ে যেতে পারে।“
লক্ষণ প্রকাশ ছাড়া সংক্রমণের ভূমিকা সিএনএনের সাক্ষাৎকারে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন লক্ষণবিহীন আর লক্ষণপ্রকাশক সংক্রমণ কত শতাংশ ঘটেছিল তা সুস্পষ্ট নয়। কিন্তু লক্ষণ প্রকাশ পায়নি বা সামান্য লক্ষণ প্রকাশক লোকজন সংক্রমণের জন্য বেশি দায়ী।
মিনোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মাইকেল অস্টারহোম বলেছেন, “আমরা এখন জানি লক্ষণবিহীন সংক্রামক মহামারীটিকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন করে তুলবে।”
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনের দুইসপ্তাহ আগে একটি নিবন্ধে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহসভাপতি বিল গেটস এই রোগের বিস্তার সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কোভিড-১৯ (COVID-19) নিয়ন্ত্রণ সারস (SARS – Severe Acute Respiratory Syndrome) থেকেও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে কারণ SARS কেবল লক্ষণ প্রকাশকারী লোকদের দিয়ে ছড়াতো।
অন্যরা সম্মত হন যে, গুরুতর লক্ষণ ব্যতীত লোকেরা নতুন করোনভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক এবং সিডিসির উপদেষ্টা ডঃ উইলিয়াম শ্যাফনার বলেছেন, “কোভিড -১৯ সংক্রমণে হালকা লক্ষণ প্রকাশক সংক্রমণই প্রধান কারণ” ওস্টারহলম সরকারী কর্মকর্তাদের ভাইরাসটি কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে সে সম্পর্কে আরও পরিষ্কার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। “
রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা |
সরাসরি কথা বলার এই সময় তিনি বলেন ,”এই সময়ে আমরা কী জানি এবং কী জানি না তা জনগণকে জানানোর সময় এসেছে ” আন্তর্জাতিক গবেষণা অন্যান্য দেশগুলিতে এমন ব্যক্তিদের দ্বারা উল্লেখযোগ্য সংক্রমণেরও প্রতিবেদন রয়েছে যারা অসম্পূর্ণ বা শুধুমাত্র হালকা লক্ষণযুক্ত।
মঙ্গলবার, জার্মানি, ফ্র্যাঙ্কফুর্টের ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল ভাইরোলজি এর পরিচালক ডা. সান্দ্রা সিসেক ইসরাইল থেকে আসা ২৪ জন যাত্রীকে পরীক্ষা করেছিলেন। ২৪ জন যাত্রীর সাতজনের মধ্যে করোনভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে চারজনের কোনও লক্ষণই ছিল না। সিসেক অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে লক্ষণবিহীন রোগীদের কাছ থেকে নমুনার ভাইরাল লোড লক্ষণপ্রকাশক তিনটি রোগীর ভাইরাল লোডের চেয়ে বেশি ছিল। ভাইরাল লোড হচ্ছে শ্বাসযন্ত্রের তরলে ভাইরাসের ঘনত্বের একটি পরিমাপ।
Related Article:রক্তের গ্রুপ ‘A’ হলে করোনা ঝুঁকি বেশি, ‘O’ হলে সবচেয়ে কম – বলছে চীনা গবেষণা
উচ্চতর লোডের অর্থ হল যে লোকটির মাধ্যমে অন্য লোকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। প্রারম্ভিকভাবে, জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারিতে চীন, তিয়ানজিন এবং সিঙ্গাপুরে গাণিতিক মডেলিংয়ের মাধ্যমে করা পরিীক্ষা গুলিতে জানা গেছে, ভাইরাসটি এমন লোকদের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছড়িয়ে পড়েছিল যাদের এখনও লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়নি।
রবিবার বেলজিয়াম এবং ডাচ গবেষকদের দ্বারা প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে সিঙ্গাপুর ক্লাস্টারের ৯১জন লোকের মধ্যে ৪৮% থেকে ৬৬% সংক্রামিত হয়েছিল হালকা লক্ষণ প্রকাশকারী লোকদের দ্বারা।
গবেষণার অন্যতম প্রধান লেখক, বেলজিয়ামের হ্যাসেল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স ইনস্টিটিউটের তপিওয়া গণ্যানী সিএনএনকে একটি ইমেলের মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন যে এগুলি এখনও অনুমান নির্ভর , নিশ্চিত গবেষণা নয়।
কানাডিয়ান, ডাচ এবং সিঙ্গাপুরের গবেষকরা তিয়ানজিন এবং সিঙ্গাপুরে একই প্রাদুর্ভাবের দিকে নজর দিয়েছিলেন এবং দেখেছেন যে প্রতিটি জায়গায় লক্ষণ শুরুর যথাক্রমে গড়ে ২.৫৫ দিন এবং ২.৮৯ দিন আগে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল।