বর্তমানে আমাদের কাছে AI বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পরিচিতি অন্যান্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি। বিশেষ করে ChatGPT এর আগমনের পর সেই আগ্রহ তুঙ্গে গিয়ে পৌঁছেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি বিস্তৃত শাখা যেখানে কম্পিউটার বা রোবট দ্বারা এমন সব কাজ সম্পাদন করা হয় যা সাধারণত মানব বুদ্ধিমত্তা ব্যতিত করা সম্ভব নয়। সব ক্ষেত্রেই এখন দেখা যাচ্ছে AI এর জয়জয়কার। কিন্তু রসায়নে-র মত পরীক্ষামূলক বিষয়েও কী AI এর ভূমিকা থাকতে পারে?
AI এর ব্যবহার কীভাবে প্রচলিত পদ্ধতিকে টেক্কা দেয়?
নতুন যৌগ গঠন বিজ্ঞানীদের জন্য বড়ো একটি চ্যালেঞ্জ। একটি নতুন যৌগ গঠন করতে সেই যৌগটির গঠন, ব্যবহার, অন্যান্য যৌগ/মৌল/পদার্থের সাথে এর প্রতিক্রিয়া, স্থায়ীত্ব সহ আরো অসংখ্য বিষয় বিজ্ঞানীদের বিবেচনায় রাখতে হয়। অনেক সময় এ কাজে বছরের পর বছর লেগে যায়। তাছাড়া এত সময় দেবার পরও সফলতা যে আসবে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। প্রতিনিয়ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবার জন্য রসায়নের এসব প্রচলিত পদ্ধতিকে দ্রুততর করা এখন সময়ের দাবি। সেক্ষেত্রে AI বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
এই ক্ষেত্রে, AI এর Machine Learning ক্ষমতা থাকায়, এটি পরীক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন জটিল হিসাব সহজেই করে ফেলতে পারে। আগে থেকেই বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীদেরকে গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে সম্ভাব্য ধারণা দিতে পারে। যেমন: Schrödinger equation-এর এ পর্যন্ত পাওয়া সবচাইতে নিখুঁত সমাধান এসেছে AI হাত ধরেই।
তাছাড়া আরেকটি বড়ো সুবিধা হল AI এর মাধ্যমে চাইলেই আমরা বিভিন্ন কেমিক্যালের ধর্ম এবং বিক্রিয়ার পরিবেশ নিয়ন্ত্রন করতে পারি। ফলে বিক্রিয়ায় ভুল-ত্রুটির পরিমাণ সর্বনিম্ন হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি কম্পিউটার সিমুলেশনে হওয়ায় দামি দামি কেমিক্যালের ব্যবহার কমবে, যা প্রচুর অর্থ বাঁচাবে। সম্প্রতি ২০২১ সালে DeepMind এর AlphaFold নামক AI program ‘The protein-folding problem’ নামক বহুল আলোচিত একটি সমস্যার সমাধান দেয়। রসায়নে Artificial Intelligence কী পরিমাণে ভূমিকা রাখতে পারে এ ঘটনা থেকে আমরা তার ধারণা নিতে পারি।
এটি নিয়ে বিস্তারিত পড়ুনঃ ৫০ বছরের পুরনো প্রোটিন ফোল্ডিং সমস্যার সমাধান করলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
কীভাবে AI এর হাত ধরে নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে?
বিজ্ঞানের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। পুরনো ধ্যান-ধারণা, পুরানো তত্ত্বকে বাতিল করে এখানে নতুন তত্ত্বের জন্ম হয়। একে বলে ‘Disruptive research‘। অপরদিকে পুরনো তত্ত্বকেই কিছুটা পরিবর্তন পরিবর্ধন করে বর্তমান সময়ে খাটানোকে বলে ‘Developmental research’। উভয়ই বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ হলেও, বিজ্ঞানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে মূলত Disruptive research এর মাধ্যমে। তবে, আশঙ্কার বিষয় হলো বিজ্ঞানীদের মধ্যে Disruptive research এর প্রবণতা ক্রমশ কমে আসছে।
‘Nature’ এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় বিষয়টি আমরা দেখতে পাই। জার্নালটির মতে, বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে Disruptive research এর হার ক্রমেই কমেছে। এর একটি অন্যতম কারণ হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈজ্ঞানিক বিষয়াদিগুলোর বিশেষায়িত হয়ে যাওয়া। বর্তমানে তথ্যের পরিমাণ এত বেশি যে, যেকোনো গবেষকের পক্ষে একাধিক বিষয়ে গবেষণা করা এবং বিষয়াদিগুলোর মাঝে যোগসূত্র ঘটানো খুবই কঠিন কাজ। ফলে গবেষকগণ কোন নির্দিষ্ট বিষয় বা তার একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়েই পারদর্শিতা অর্জনের সুযোগ পান।
এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রসমূহের ন্যায় রসায়নে-ও AI এর ভূমিকা ও ব্যবহারের সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এর মাধ্যমে আমাদের গবেষণা ও নতুন কিছু আবিষ্কারের যাত্রায় নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে। Machine learning ক্ষমতা থাকায় AI ব্যবহার করে আমরা চাইলেই এ সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারি। আর এর প্রভাব রসায়নের উপর বিস্তরভাবেই পড়বে। কারণ রসায়ন এমন একটি বিষয় যেখানে একাধিক বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা যদি AI এর হাত ধরেই রসায়নের একটি নতুন যুগের সাক্ষী হই, তাতে অবাক হবার কিছু থাকবে না।
কিন্তু, একই সাথে আমাদের জানা প্রয়োজন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানব সভ্যতার জন্য হুমকি?
আতিক হাসান রাহাত/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: Chemistry World, The Gradient