আপনি যদি ডায়াবেটিস রোগী হন বা আপনার বাসায় কোন ডায়াবেটিস রোগী থাকে, তাহলে আপনি নিশ্চয়ই রক্তে শর্করার (ব্লাড সুগার) পরিমাণ বেড়ে বা কমে যাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে অবগত আছেন। নতুন গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে, মস্তিষ্কের মেমোরি বা স্মৃতি রক্তে চিনির মাত্রা-এর সাথে যুক্ত!
আমাদের দেহে শর্করার পরিমাণ সারাদিনে অল্প মাত্রায় বাড়ে বা কমে। তবে ডায়াবেটিস রোগীর জন্য পার্থক্যটা বেশি হতে পারে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলেও সমস্যা আবার কমে গেলেও হতে পারে বিপদ। তাই শর্করার পরিমাণ নিয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। সম্প্রতি ইদুরের উপর করা এক নতুন গবেষণা মতে, একসেট ব্রেইন সিগন্যাল আমাদের কোন কিছু মনে রাখতে অর্থাৎ স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে, এমন ব্রেইন সিগন্যালগুলো রক্তে চিনির মাত্রা-তেও প্রভাব ফেলতে পারে।
এনওয়াইইউ গ্রসম্যান স্কুল অফ মেডিসিনের গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস নামক অঞ্চলে একটি সিগন্যাল প্যাটার্ন আছে, যা অতীতের ঘটনাগুলোর স্মৃতি গঠনের সাথে যুক্ত এবং তা বিপাককেও প্রভাবিত করে। বিপাক হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা দ্বারা খাদ্যতালিকাগত নিউট্রিয়েন্টগুলো রক্তে শর্করায় (গ্লুকোজ) রূপান্তরিত হয় এবং শক্তির উৎস হিসেবে কোষে তা সরবরাহ করা হয়।
গবেষণাটি নিউরন নামক মস্তিষ্কের কোষকে নিয়ে সম্পাদিত, যা ইলেকট্রিক্যাল পালস তৈরির মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, হিপোক্যাম্পাল নিউরন মিলিসেকেন্ডের মধ্যে ইলেকট্রিক্যাল পালস তৈরি করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, হিপোক্যাম্পাল গুচ্ছগুলোর তরঙ্গ ঢেউ অনুসরণ করে ইঁদুরের শরীরে রক্তে শর্করার মাত্রাও কয়েক মিনিটের মধ্যে হ্রাস পায়। ঢেউগুলো হরমোন, যেমন অগ্ন্যাশয় এবং লিভার থেকে ইনসুলিন এবং পিটুইটারি গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনেরগুলোর নিঃসরণের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
এনওয়াইইউ ল্যাংগোন হেলথের নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড ফিজিওলজি বিভাগের বিগস অধ্যাপক গিয়ার্গি বুজস্কি বলেন, “মস্তিষ্কের হিপোকোক্যাম্পাসে কোষগুলো কীভাবে সরাসরি বিপাক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তা আমাদের গবেষণায় প্রথম দেখানো হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বলছি না যে হিপোক্যাম্পাস এই প্রক্রিয়ার একমাত্র নিয়ন্ত্রক, কিন্তু মস্তিষ্কের তরঙ্গের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রিত”।
গবেষণাটির সংশ্লিষ্ট লেখক ডেভিড টিংলি বলেন, “মস্তিষ্ক বিকশিত হয়েছে দক্ষতার কারণে, যা একই সংকেত ব্যবহার করে স্মৃতি এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন ফাংশন নির্দেশ করে”।
গবেষকরা বলেন, হিপোক্যাম্পাল তরঙ্গ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে, এটি মস্তিষ্কে ঘটে যাওয়া অনেকগুলো লুপের মধ্যে একটির অংশ।
হিপোক্যাম্পাল ফায়ারিং প্যাটার্ন যে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস করে তা নিশ্চিত করার জন্য দলটি অপটোজেনেটিক্স নামে একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে। অধ্যাপক গিয়ার্গি বুজস্কি বলেন, ভবিষ্যতের গবেষণায় এমন ডিভাইস বা থেরাপিও আবিষ্কার করা যেতে পারে যা রক্তে শর্করার মাত্রার এই কমে যাওয়াকে সামঞ্জস্য করতে পারবে।
তথ্যসূত্র : Scitechdaily
তানজিনা সুলতানা শাহীন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
1
+1
1
+1
+1
2
+1
1
+1
1