কয়েক বছরের মধ্যেই মঙ্গল গ্রহের আকাশ ভরে যাবে পৃথিবী থেকে পাঠানো অসংখ্য ড্রোনে, এমনটাই ধারণা করছে নাসা। অন্তত ৫ থেকে ২০ কিলোগ্রাম ওজনের প্রত্যকটি ড্রোনের মাধ্যমে মঙ্গলের কোথায় কী আছে, কোন এলাকার উচ্চতা কত, কোথাও কোনও গহ্বর আছে কি না, এক কথায় বলতে গেলে লাল গ্রহের বিশাল এলাকা জুড়ে নজরদারি চালানোর জন্য পৃথিবী থেকে এসব ড্রোন মঙ্গলের আকাশে প্রেরণ করা হবে। এছাড়াও সেই সকল ড্রোন থেকে মঙ্গলের বুকে নামা মহাকাশচারীদের জন্য পাঠানো হবে গবেষণার নানা উপকরণ সাথে অত্যাধুনিক যন্ত্রাদিও।
কিছুদিন আগেই নাসা “মার্স ২০২০ পার্সিভারেন্স রোভার” এর সাথে মঙ্গল গ্রহে উড়তে সক্ষম প্রথম হেলিকপ্টার “ইনজেনুইটি” ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে অ্যাটলাস ভি রকেটে করে মঙ্গল গ্রহে প্রেরণ করে। ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এর কয়েকমাসের মধ্যেই ইনজেনুইটি প্রথমবারের মতো মঙ্গলের আকাশে উড়তে চেষ্টা করবে।
নাসার ইনজিনুইটি হেলিকপ্টার প্রকল্পের পরিচালক মিমি অং বলেন “আমরা মানুষ হিসাবে আমাদের পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে কখনও কোন প্রকার উড়ন্ত যান বা হেলিকপ্টার চালাতে পারিনি। আমাদের এই প্রচেষ্টা অনেকটাই রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের পৃথিবীতে উড়তে সক্ষম প্রথম বিমান আবিষ্কারের মতোই।”
নাসা এবং বিশ্বের অন্যান্য মহাকাশ সংস্থা ইতোমধ্যে মঙ্গল গ্রহে ল্যান্ডার, অরবিট এবং রোভার প্রেরণ করলেও এর আগে কেউ মঙ্গল গ্রহে হেলিকপ্টার উড়ানোর চেষ্টা করেনি। মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি পাতলা যার অর্থ সাধারণ হেলিকপ্টারের উড়ানের জন্য প্রয়োজনীয় বায়ু চাপ উৎপন্ন করার জন্য মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে কম বায়ু রয়েছে তাই নাসাকে ইনজিনুইটির ডিজাইনের ক্ষেত্রে অধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে।
অং আরো বলেন “মঙ্গলে একটি হেলিকপ্টার উড়ান খুব কঠিন। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল খুব পাতলা, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ঘনত্বের তুলনায় প্রায় ১ শতাংশ। মঙ্গলে উড়তে পারে এমন একটি কপ্টার হতে হবে খুব হালকা এবং এর পাখাগুলো খুব দ্রুত ঘুরতে সক্ষম হতে হবে।”
ইনজিনুইটির ওজন প্রায় ৪ পাউন্ড (১.৮ কিলোগ্রাম) এবং এর দুটি বিপরীত দিকে ঘুরতে সক্ষম ব্লেড (পাখা) রয়েছে যা প্রায় ৪ ফুট (১.২ মিটার) লম্বা। এই ব্লেডগুলি প্রতি মিনিটে প্রায় ২৪০০ বার ঘুরতে সক্ষম। হেলিকপ্টারটি পরীক্ষা করতে নাসা ক্যালিফোর্নিয়ায় এজেন্সি জেট প্রোপালশন ল্যাবে একটি পরীক্ষামূলক চেম্বারে কৃত্রিমভাবে তৈরী মঙ্গল গ্রহের বায়ুমণ্ডলের মধ্যে হেলিকপ্টারটিকে চালনা করে।
যদিও ইনজিনুইটি কেবলমাত্র একটি পরীক্ষামূলক মিশন, এর প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে মঙ্গল গ্রহে হেলিকপ্টার বা ড্রোন উড়তে সক্ষম কী না তা পরীক্ষা করা। একটি সফল মিশন মঙ্গল গ্রহের অন্বেষণের ভবিষ্যতকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে।
পার্সিভারেন্স রোভারের মতো রোবোটিক মিশনের জন্য ইনজিনুইটির মতো বিশেষ হেলিকপ্টারগুলি মঙ্গল গ্রহের সমগ্র অঞ্চলকে স্কাউট করতে এবং ড্রাইভিং রুটের পরিকল্পনায় সহায়তা করতে পারে। তাছাড়া ড্রোন ইমেজিং এর সাহায্যে ইনজুনিইটিকে মঙ্গলের ভূতত্ত্বকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে অধ্যয়ন করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এই অধ্যয়ন ভবিষ্যতে নভোচারীদের মঙ্গল আবিষ্কার করতে সহায়তা করতে পারে।
তাহমিদ শিহাব / নিজস্ব প্রতিবেদক