বর্তমান সময়ে মহাকাশ গবেষণার অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সন্ধান করা। পৃথিবীর বাইরের মহাবিশ্বের যেকোনো স্থানে প্রাণের খোঁজ করতে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর জমজ ভাই খ্যাত মঙ্গল গ্রহ বর্তমানে গবেষণার প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। আক্ষরিক অর্থে মঙ্গল বর্তমানে হলো নিষ্প্রাণ, লাল ও ধূসর গ্রহ। কিন্তু মঙ্গলে গবেষণার পর বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন যে মঙ্গলও ছিল পৃথিবীর মতোই প্রাণ বিকাশের উপযোগী একটি গ্রহ।
নাসার পাঠানো কিউরিওসিটি রোভার মঙ্গলে গত ১১ বছর যাবত কাজ করছে। নাসা এর Mars Science Laboratory Mission এর আওতাভুক্ত রোভারটি ২০১২ সালে মঙ্গলে অবতরণ করে। সোলার প্যানেলের পরিবর্তে নিউক্লিয়ার চালিত ব্যাটারি দিয়ে এতো দীর্ঘ সময় মঙ্গলে কাজ করে যাচ্ছে কিউরিওসিটি রোভার। দীর্ঘ সময় যাবত কাজ করার ফলে ব্যাপক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ ও পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে কিউরিওসিটি।
সম্প্রতি কিউরিওসিটি কিছু চমকপ্রদ তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে। মঙ্গলের ভূপৃষ্ঠের গেল ক্রেটর নামক স্থানের নমুনা পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন যে মঙ্গল গ্রহেও একসময় নদী প্রবাহমান ছিল।
আমেরিকার পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানী বেনজামিন কার্ডিনাস বলেন,
“সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে আমরা প্রমাণ পাচ্ছি যে মঙ্গলের বুকে একসময় নদী প্রবাহমান ছিল”।
পৃথিবীতে নদী জীবন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ নদী হলো বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ও খনিজ পদার্থের অন্যতম উৎস। তাই ধারণা করা হচ্ছে যেহেতু মঙ্গলের প্রাচীনকালে নদী ছিল বলে প্রমাণ মিলেছে সেহেতু এই লাল গ্রহে হয়তো প্রাচীনকালে প্রাণেরও অস্তিত্ব ছিল।
কার্ডিনাস আরও বলেন,
“আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে পূর্ববর্তী অনুমানের তুলনায় মঙ্গলে প্রাচীনকালে আরও বেশি পরিমাণ নদী বহমান ছিল। আর এই বিষয়টিই ইঙ্গিত দেয় যে মঙ্গলে হয়তো প্রাচীনকালে প্রাণ ছিল।”
মঙ্গলের নদীর ধারণা বিজ্ঞানীরা প্রথম পান যখন ম্যারিনার-৯ (মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করা সর্বপ্রথম মহাকাশযান) মঙ্গলের ভূত্বকে শুকিয়ে যাওয়া নদী খাতের ছবি তোলে। কিউরিওসিটির পাঠানো ছবিগুলোতে দেখা যায় নদীখাতগুলোর দেয়ালের পাথরগুলোর নিচের অংশে খাঁজ যুক্ত। এ থেকে বোঝা যায় প্রাচীনকালে মঙ্গলের নদীগুলো শক্তিশালী ও অনেক চওড়া ছিল।
কিউরিওসিটি যে গেল ক্রেটরের নমুনা সংগ্রহ করেছে সেখানে পাথরগুলোর আকৃতি ও বিন্যাস থেকে বোঝা যায় যে সেখানে একসময় বিপুল পরিমাণ পানির অস্তিত্ব ছিল। গেল ক্রেটরের এই নদীখাত প্রায় ১৫৪ কি.মি বা ৯৬ মাইল চওড়া। কিউরিওসিটির পাঠানো ছবি ও অন্যান্য তথ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে গেল ক্রেটরে পাথরের এমন আকৃতির পেছনে বিপুল পরিমাণ পানির প্রবাহ বা বন্যা দায়ী।
মঙ্গলকে ঘিরে তাই গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ঠিক কত বছর পুরোনো এইসব নদী খাত এবং আদৌ কি সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কিনা? প্রাণের অস্তিত্ব থাকলেও কিভাবে তা হারিয়ে গেল? এমন বিভিন্ন প্রশ্ন সামনে এসেছে। ভবিষ্যতে গবেষণার মাধ্যমে এসবের উত্তর মিলবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।
মুরছালিন রহমান / নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
+1
+1
+1
2
+1
+1