আমরা অনেকেই সামাজিক ও ব্যক্তিগত নানা যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ভিডিও কলিং প্রযুক্তি ব্যবহার করি। বিভিন্ন ইন্টারভিউ নেওয়া বা কনফারেন্স এর আয়োজন করা সবই সম্ভব ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে। আমরা এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যেন এটি আমাদের সামনাসামনি যোগাযোগের বিকল্প হয়ে উঠছে।
ভিডিও কলিং এর সময়ে আই কন্টাক্ট এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় হয়। ফিনল্যান্ডের টামপ্রে ইউনিভার্সিটির একটি নতুন গবেষণায় দেখিয়েছে, ভিডিও কল চলাকালীন আই কন্টাক্ট করলে বাস্তব জীবনের চোখে চোখ রাখার অনুরূপ মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় ।
ছোট বাচ্চার স্কুলের লেকচার থেকে শুরু করে,পারিবারিক- সামাজিক যোগাযোগ কিংবা প্রেয়সীর লজ্জা মাখানো মুখখানা সবই মূহূর্তের মধ্যেই দেখা সম্ভব করেছে এই ভিডিও কল। যদিও আমাদের মধ্যে অনেকসময় ব্যক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ভিডিও কল পুরোপুরি সমাধান দিতে পারে না।
একটি নতুন গবেষণায় ফলাফল আমাদের বলে যে, অন্যের সাথে আই কন্টাক্টে আমাদের সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়াগুলো ভিডিও এবং সামনাসামনি ব্যক্তি-আলাপচারিতার সময় বেশ একই রকম হতে পারে।
গবেষণাটি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে চোখাচোখি বা আই কন্টাক্টের সময় শারীরিক প্রতিক্রিয়া কেমন হয় তা দেখিয়েছে। গবেষকরা তিনটি পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছেন, সরাসরি ব্যাক্তিগতভাবে মিথস্ক্রিয়া, একটি ভিডিও কল এবং কেবল একটি ভিডিও দেখে। এই পরিস্থিতিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের ত্বকের আচরণ এবং মুখের পেশীগুলির সক্রিয়তা ও প্রতিক্রিয়াগুলো পরিমাপ করেন।
ত্বকের আচরণের পরিবর্তনগুলি স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের সক্রিয়তার দিকটি ইঙ্গিত করে!
তবে দ্বিমুখী যোগাযোগের ভিডিও কলের সময় স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র যেভাবে সক্রিয় হয়, একমুখী যোগাযোগের ভিডিও দেখার সময় স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্র ঠিক সেইভাবে সক্রিয় হয় না। সরাসরি ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ভিডিও কল কিংবা একটি ভিডিও দেখা এই তিনটি পরিস্থিতিতেই ইতিবাচক আবেগের সাথে যুক্ত মুখের পেশিগুলোর প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
অন্য কথায়, প্রত্যক্ষ দৃষ্টির উপলব্ধিগুলো জাইগোম্যাটিক (zygomatic) বা হাসির পেশীগুলিকে সক্রিয় করে এবং করোগেটর (corrugator) বা কপাল ও চোখের আশেপাশের পেশীগুলি শিথিল করে।
গবেষণার প্রথম লেখক জোন হিটানেনের মতে,” আই কন্টাক্টের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় উত্তেজনাপূর্ণ প্রতিক্রিয়ার জন্য অন্যের দ্বারা দেখার অনুভূতির প্রয়োজন, শারীরিক উপস্থিতি প্রয়োজন হয় না।”
হিটানেন আরও বলেন, ” অন্য ব্যক্তিকে যখন ভিডিওতে উপস্থাপন করা হয় তখন বিস্ময়করভাবে তার মুখে হাসির সূক্ষ্ম রেখা ফুটে ওঠে। যেটি চোখের সংস্পর্শে উচ্চতর স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়াগুলির ফলাফল।”
তিনি আরো যুক্ত করেন, “তবে বর্তমানে বেশিরভাগ অ্যাপ্লিকেশনগুলি যোগাযোগের সময় সরাসরি সংযুক্ত হবার সুবিধা দেয় না। অন্য ব্যক্তিকে সাধারণত কিছুটা এড়ানো বা তীর্যক দৃষ্টিতে দেখা হয়। যদিও এটা পরিষ্কার নয় সামনাসামনি বা ভিডিও কলে স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া গুলো প্রায় একই হবার কারনেই দিন দিন এই ধরনের এপ্লিকেশন গুলোর ব্যবহার বাড়ছে কি না।”
গোলাম কিবরিয়া / নিজস্ব প্রতিবেদক