সম্প্রতি নেচার সাময়িকীতে প্রকাশ করা একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হাইডেলবার্গ ও ম্যানহামের চিকিৎসক ও ক্যান্সার গবেষকেরা ম্যালিগন্যান্ট ব্রেইন টিউমার-এর বিরুদ্ধে স্পেসিফিক মিউটেশন ভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাচ্ছেন। প্রি-ট্রায়ালে ভ্যাক্সিনটি নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে এবং টিউমার টিস্যুতে কাঙ্ক্ষিত প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
Diffuse gliomas কে বলা হয় নিরাময় অযোগ্য ব্রেইন টিউমার। এই টিউমার পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং অস্ত্রোপচারে অপসারণ করা কঠিন। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপির প্রভাবও এদের ওপর সীমিত। তাই পরিপূর্ণ মুক্তি পেতে ভ্যাক্সিনেশন প্রয়োজন।
টিউমারের বিরুদ্ধে দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থা:
Diffuse gliomas এর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো, টিউমার কোষগুলিতে তারা একই জিনের পরিবর্তন ঘটায়। DNAতে অভিন্ন ত্রুটির ফলে IDH1 এনজাইমে একটি একক ও নির্দিষ্ট প্রোটিন ব্লকের পরিবর্তন ঘটে। ফলে পুরোনোর স্থলে নতুন প্রোটিন গঠন তৈরি হয়। প্রোটিনের এই নতুন গঠন একটি নিও-এপিটোপ নামে পরিচিত। দেহ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একে বহিরাগত হিসেবে বিবেচনা করে।
ভ্যাক্সিনেশন এর প্রয়োজনীয়তা:
ভ্যাক্সিনটি IDH1 রূপান্তরে সৃষ্ট gliomas এ কার্যকর এবং সুস্থ টিস্যুতে আক্রমণ করে না। তারপরও gliomas এর বৃদ্ধি রোধে এটি সম্পূর্ণ নয়। প্রকল্পের গবেষণা পরিচালক মাইকেল প্লাতেন ব্যাখ্যা করেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে সহায়তা করে এমন একটি ভ্যাক্সিন সরবরাহ করা। যা পরিবর্তিত প্রোটিনের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাক্সিন সমস্যার গোড়া থেকে সমাধান করবে।”
ভ্যাক্সিনের প্রি-ক্লিনিক্যাল ফলাফল:
প্লাতেনের দল কয়েকবছর আগে IDH1 প্রোটিনের কৃত্রিম সংস্করণ উৎপন্ন করেন এবং তা ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করেন। দেখা যায় মিউটেশন নির্দিষ্ট পেপটাইড ভ্যাক্সিন ইঁদুরের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি আটকে দেয়। এই ফলাফলে উৎসাহিত হয়ে মিউটেশন স্পেসেফিক টিকা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। অবশেষে জার্মানির বিভিন্ন কেন্দ্রের ৩৩ জন রোগীর উপর গবেষণামূলক পরীক্ষা চালানো হয়।
৯৩% রোগীদের মধ্যে প্রতিরোধ ব্যবস্থাটি ভ্যাক্সিন পেপটাইড এর জন্য নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যা প্রমাণ করে সক্রিয় মিউটেশন স্পেসিফিক ইমিউনেশন মস্তিষ্কের টিউমার টিস্যুতে আক্রমণ করেছে। অন্যদিকে টিকা গ্রহীতাদের দেহে গুরুতর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি।
ভ্যাক্সিন নিয়ে বৃহত্তর ধারণা: ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা নিয়ে সম্পূর্ণ সংশয় দূর করতে গবেষকেরা এর সাথে আরও কিছু উপাদান ও নতুনত্ব যোগ করতে চান। সে ধারাবাহিকতায় গবেষণার ফেজ-২ শুরু হবে। বাকি ট্রায়াল ও গবেষণা সম্পন্ন করার পর আশা করা যায় সম্পূর্ণ নিরাপদ ব্রেইন টিউমার প্রতিরোধী ভ্যাক্সিন পাওয়া যাবে।
মো. মাসরুল আহসান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ medicalxpress.com, dkfz.de/press, nature.com
+1
+1
+1
+1
+1
3
+1
+1