আমাদের আশেপাশে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এমন কিছু টিনেজার বাচ্চা আছে যাদের দেখলে মনে হবে তাদের বয়স ৭০ কিংবা ৮০ পেরিয়ে গেছে। একটি দূর্লভ জেনেটিক সমস্যা, ইংরেজিতে একে বলা হয় (Progeria) প্রোজেরিয়া।
এ রোগে যে সকল বাচ্চা আক্রান্ত হয় তাদের অধিকাংশই ১৫ বছরের আগেই হার্ট ফেইলিউর, হার্ট অ্যাট্যাক এবং স্ট্রোক এর মত মারাত্নক অসুস্থতা নিয়ে মারা যায়।
চলতি মাসের ২০ তারিখে Food and Drug Administration (FDA) উক্ত রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হিসেবে Zokinvy (জোকিনভি) এর অনুমোদন দিয়েছে।
ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, ৬২ জন শিশু যারা ১১ বছর ধরে Zokinvy গ্রহণ করে আসছে তাদের আয়ু ২.৫ বছর পর্যন্ত বেড়েছে।
বোস্টন শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ক্রিটিকাল কেয়ার ডাক্তার মনিকা ক্লেইনম্যান বলেন, “আমরা আশা করি শিশুদের এই রোগের গতি মন্থর করে আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু এটা শিশুদের স্বাভাবিক দীর্ঘ জীবন দেয় না।”
এক ধরনের প্রোটিন (Lamin A) আছে যা কোষের ডিএনএ ও অন্যান্য নিউক্লিক উপাদান গুলো ধরে রাখতে সাহায্য করে। প্রোজেরিয়া আক্রান্ত শিশুদের দেহে প্রোটিন Lamin A এর মত দেখতে আরেকটি প্রোটিন Progerin(ত্রুটিপূর্ণ প্রোটিন) এর পরিমাণ বেশি থাকে।
সারাবিশ্বে ৩৫০-৪০০ বাচ্চা আছে যারা প্রোজেরিয়া রোগে আক্রান্ত। একটিমাত্র জিনের মিউটেশন এর জন্য ই বাচ্চারা এই রোগে আক্রান্ত হয়। এই মিউটেশন, যে জিন উক্ত প্রোটিন তৈরি করে তার সাথেই হস্তক্ষেপ করে।
আর এই সকল ত্রুটিপূর্ণ প্রোটিনে অতিরিক্ত টুকরা সংযুক্ত থাকার কারনে এরা কোষের ঝিল্লিতে আটকে যায় এবং এরা নতুন সতেজ প্রোটিন উৎপাদন এর জন্য রিসাইকেল হতে পারে না। ফলে রক্তনালী এবং কানেক্টিভ টিস্যু শক্ত হয়ে যায় এবং কোষ অকালে বার্ধক্যের দিকে ধাবিত হয়।
প্রত্যেকের দেহেই আসলে Progerin তৈরি হয় এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে Progerin-এর পরিমাণ ও বাড়তে থাকে। কিন্ত প্রোজেরিয়া আক্রান্ত শিশুরা প্রচুর পরিমাণ Progerin উৎপন্ন করে। জন্মের পর এরা স্বাভাবিক থাকলেও ২ বছর পরেই এদের অসুস্থতার লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। অল্প বয়সেই চুল পড়া, শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, অস্থি সন্ধিতে জড়তা এবং অন্যান্য বড় উপসর্গ দ্রুত তাদেরকে বার্ধক্যের দিকে অগ্রগামী করে।
Zokinvy উৎপাদন করেছে ক্যালিফোর্নিয়া শহরের ইগার বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। zokinvy এর অনুমোদনের পরে বিশেষজ্ঞরা এখন উক্ত ওষুধের সাথে অতিরিক্ত ওষুধ ও থেরাপি নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেছেন। কারণ একবার যদি রোগ সৃষ্টিকারী জিন শনাক্ত করা যায় তাহলে প্রোজেরিয়া রোগীদের সংখ্যা শূন্যতে আনা যাবে।
গবেষকরা এছাড়াও জিন থেরাপি পদ্ধতি অনুসন্ধান করছেন, যার লক্ষ্য হচ্ছে মিউটেশন ঠিক করা যা মূলত এই অসুস্থতা সৃষ্টি করে।
এ.বি.এম হাদী উজ্জামান/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ- সাইন্স নিউজ অর্গ