নতুন গবেষণায় দেখা যায় যে প্রথমদিকের ডাইনোসররা নরম খোলসযুক্ত ডিম দিতো। এই গবেষণায় দুটি ভিন্ন নন-এভিয়ান ডাইনোসর এর ডিম বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে তাদের মাইক্রো-স্ট্রাকচার এবং বৈশিষ্ট্য কচ্ছপের ডিমের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। গবেষণাটিতে আরও উঠে আসে যে শক্ত খোলসযুক্ত ডিম ডাইনোসর ফ্যামিলি ট্রি তে কমপক্ষে তিনবার বিবর্তিত হয়ে এসেছে।
মিউজিয়াম’স ডিভিসন অব প্লানটোলজির প্রধান কিউরেটর মাইক নরওয়েল এর মতে, “এই ধারণা সবসময়ই করা হত যে প্রাচীন ডাইনোসরদের ডিমের খোলস শক্ত প্রকৃতির। গত বিশ বছরে আমরা সারাবিশ্বে অনেক ডাইনোসরদের ডিম খুঁজে পেয়েছি।
কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই এই ডিমগুলোর তিনটা গ্রুপ দেখা যেতো। যেমন: থেরোপড ডাইনোসর যাদের মধ্যে বর্তমানের পাখিগুলোও রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে হাঁসের ঠোঁটের মত দেখতে উন্নত হাইড্রোসরাস এবং লম্বা গলার উন্নত সারোপড। একই সময়ে সেরাটোপসিয়ান ডাইনোসরদের হাজারেরও বেশি হাড়ের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গিয়েছে কিন্তু কোনো ডিম পাওয়া যায়নি এদের।”
অ্যামনিয়টিস ডাইনোসর: এটি হল পাখি, স্তন্যপায়ী এবং সরিসৃপদের সাথে সম্পর্কিত গোত্র। এদের ডিম সাধারণত একটি অভ্যন্তরীণ ঝিল্লি বা “অ্যামনিয়ন” দিয়ে তৈরী হয়, যা এদের ভ্রূণকে শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। কিছু অ্যামনিয়টিস যেমন: কচ্ছপ, টিকটিকি এবং সাপ পাতলা খোলসযুক্ত ডিম দেয়।
অন্যদিকে বাকিরা (যেমন: পাখি) শক্ত ও calcified ডিম দিয়ে থাকে। এই calcified ডিমগুলো আসলে বিবর্তনের ফলে হয়েছে এবং এমন রুপ তাদেরকে পরিবেশ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। এটি অ্যামনিয়টিসদের ইতিহাসের একটি মাইলফলক স্থাপন করে কারণ এটি প্রজনন প্রক্রিয়াকে সফল করেছে, গোত্রের বিস্তার এবং বৈচিত্র্যে ভূমিকা রেখেছে।
নরম খোসার ডিম সম্পর্কে ফসিল রেকর্ড খুবই বিরল, যার ফলে ডাইনোসর এর ডিম নরম থেকে শক্ত খোলসে রুপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া গবেষণা করা আরও কঠিন। কারণ জীবন্ত ডাইনোসর প্রজাতির বর্তমান রূপধারীরা, যেমন: পাখি, কুমির শক্ত খোলসযুক্ত ডিম দিয়ে থাকে। ডিমের খোসার এই ধরন সমস্ত অ-এভিয়ান (উড়তে না পারা) ডাইনোসরদের আছে বলে অনুমান করা হয়।
গবেষকরা দুই প্রজাতির ডাইনোসরের ভ্রূণযুক্ত ডিমের জীবাশ্ম নিয়ে গবেষণা করেছেন। এগুলো হলো প্রোটোসেরাটোপ এবং মেসারোসরাস।
প্রোটোসেরাটোপরা ছিলো ভেড়ার আকৃতির তৃণভোজী ডাইনোসর যারা বসবাস করতো বর্তমান মঙ্গোলিয়াতে প্রায় ৭৫ থেকে ৭১ মিলিয়ন বছর আগে। অন্যদিকে লম্বা গলার মেসারোসরাসও তৃণভোজী ডাইনোসর যারা ছিলো ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা এবং ২২৭ থেকে ২০৮.৫ মিলিয়ন বছর পূর্বে বর্তমান আর্জেন্টিনাতে বসবাস করতো।
প্রোটোসেরাটোপস এর নমুনা ব্যতিক্রমভাবে সংরক্ষিত ছিলো যেখানে অন্তত ১২টি ডিম ও ভ্রণ একসাথে ছিলো, এর মধ্যে ছয়টি ডিম পুরোপুরি কঙ্কালসহ সংরক্ষিত ছিলো। এইগুলোর বেশিরভাগ ভ্রূণের সাথে যুক্ত যাদের মেরুদণ্ড এবং ডানা নমনীয় যা ডিমের অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠার সময় প্রাণীদের অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং একটি ছড়িয়ে থাকা কালো এবং সাদা ডিমের আকারের চক্র যা কঙ্কালের কিছু অংশকে অস্পষ্ট করে।
এই গবেষনার লেখক এবং ইয়েল থেকে গ্রাজুয়েট করা শিক্ষার্থী জেসমিনা উইমান এর মতে, “এটি একটি অসাধারণ দাবি, তবে এর জন্য আমাদের আরো অসাধারণ তথ্যের প্রয়োজন”। আমাদের এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে একেবারে নতুন একটি পদ্ধতি দরকার যাতে আমরা দেখতে পারি কীভাবে ডিমগুলো জীবন পেল। এবং আমরা শুধু কিছু নতুন অজানা জীবাশ্মের প্রভাব নিয়ে ফলাফল চাই না। আমাদের কাছে এখন একটি নতুন পদ্ধতি আছে যা নতুন সব প্রশ্নের উত্তরের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি আমাদের অনেক স্পষ্ট প্রমাণ প্রয়োজন যা ডাইনোসরের নরম খোলসযুক্ত ডিমের জন্য মরফোলজিকাল এবং হিস্টোলজিকাল ঘটনাগুলোর পরিপূরক।
ডিমের খোলসের ১১২টি অন্য বিলুপ্ত এবং জীবিত সমগোত্রীয় প্রাণীর রাসায়নিক গঠন এবং বৈশিষ্ট্যের তথ্য নিয়ে গবেষকরা একটি “সুপার ট্রি” বানিয়েছেন যেন বিভিন্ন সময়ের ডিমের খোলসের কাঠামো এবং বৈশিষ্ট্যগুলির বিবর্তন শনাক্ত করতে পারেন। এই অনুসন্ধানে পাওয়া যায় যে শক্ত ও নরম খোলসের ডিমগুলো ডাইনোসরদের সময়ে তিনবার বিবর্তিত হয়েছে আর সম্ভবত একটি প্রাচীন নরম খোলসযুক্ত ডিম থেকেই বিবর্তিত হয়েছে।
ইয়াল থেকে গ্রাজুয়েট করা আরেক শিক্ষার্থী মাট্টিও ফাব্বারী এর মতে, “বিবর্তনবাদের প্রেক্ষিতে এর আগের হাইপোথিসিস থেকে এটা বেশি যৌক্তিক। আমরা কিছুদিন আগে জানতে পারেছি যে সমস্ত অ্যামনিওটস পূর্বপুরুষদের ডিম নরম ছিলো।
গবেষণা করে আমরা আরও জানতে পারি যে প্রাচীন আর্কিওসোরাসের গোত্র যাদের মধ্যে ডাইনোসর, কুমির এবং পিটিরোসোরাসের নরম খোলসযুক্ত ডিম ছিলো। কিন্তু মানুষ এখনও ডাইনোসর সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে আটকে আছে বর্তমানের আরকোসোরাস যেমন: কুমির, পাখিদের নিয়েই।
নরম খোলসের ডিমগুলো পানি ত্যাগের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সংবেদনশীল এবং এটা তাদের সামান্য সুরক্ষা দেয় চাপ থেকে। গবেষকরা প্রস্তাবনা দিয়েছে যে ডিমগুলি সম্ভবত আর্দ্র মাটি বা বালিতে চাপা দেওয়া হয়েছিল এবং তারপর পচনশীল উদ্ভিদ এর সাথে উত্তপ্ত করে ডিমে তাপ দেওয়া হয়েছিল, যার সাথে আজকের কিছু সরীসৃপের ডিমের সঙ্গে মিল আছে।
নিশাত তাসনিম/ নিজস্ব প্রতিবেদক