আচ্ছা মানব মস্তিষ্ক যদি একটি চলন্ত কম্পিউটার হতো তবে বিষয়টি কেমন হতো?অনেকটা ধাঁধা লাগানোর কথার মতোই,ধাতব কম্পিউটার আর জৈব রাসায়নিক বস্তুতে গঠিত মস্তিষ্কের পারস্পরিক ক্রিয়া!
কিছুটা হলিউডের কাল্পনিক ছবির গল্প কথনের মতো হলেও এই ধারণার মূলভিত্তি অনেক আগেই সিলিকন ভ্যালির একদল উদ্ভাবকের মাথায় চলে এসেছে আর তার নৈপথ্যে আছে,পাগলাটে উদ্যেক্তা ইলোন মাস্ক।
পেছনের গল্পঃ
সিলিকন ভ্যালিতে জন্ম হলেও ২০১৬ সালের জুলাই মাসে পরীক্ষা মূলক ধারণা আর ইলন মাস্ক এর উৎসাহের মাধ্যমে শুরু হয় “প্রজেক্ট নিউরালিংক” পরবর্তীতে Open Ai নামক একটি কোম্পানির সাথে অফিস শেয়ার করার মাধ্যমে শুরু হয় প্রজেক্ট নিউরালিংক এর যাত্রা।
কোম্পানিটি ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১৫৮ মিলিয়ন প্রণোদনা জোগাড় করতে সক্ষম হয় যার সিংহভাগ (১০০ মিলিয়ন) ইলন মাস্ক এর প্রদত্ত।এর বর্তমান কার্যালয় সানফ্রান্সিসকো, ক্যালফোর্নিয়া,আমেরিকায়।
প্রশাসনিক তথ্যঃ
২০১৯ সালের কোম্পানি প্রদত্ত তথ্য অনুসারে এবং বিজনেস ইনসাইডার এর তথ্য অনুসারে কোম্পানিটির সদস্য ৯০ জন। যাদের বেশীরভাগই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজিস্ট। মজার ব্যাপার হলো এই ৯০ জনের মধ্যে অনেকজন আছে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার,অনেকেই আছে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার।
ইলন মাস্ক কোন উচ্চপদে আসীন না হলেও তার ব্যাবসায়ীক কাজের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য জেরার্ড বিরচালকে প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় হয়।ইলন মাস্ক ছাড়াও এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন বেলন রেপোর্ট,ডনজিং সিও,মেক্স হডাক,পল সেরোলা,ফিলিপ সেভেস,টিস গার্ডনার প্রমুখ।
ধারণার জন্ম যেখানেঃ
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মতো ধারণাটির জন্মও কিন্ত একটি উপন্যাস এর সিরিজ থেকে।ইলন মাস্কের সাক্ষাৎ নেওয়া ব্লগ Wait But Why জানায় লেইন এস ব্যাংকস এর ১০ খন্ডের উপন্যাস “ডা কালচার” এর নেচারাল লেস খন্ড থেকে তিনি এই বিষয়টিতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
নিউরালিংক এর কার্যক্রমঃ
সাধারণত মস্তিষ্কের সমস্যা বা নিউরোলজিকাল চিকিৎসাকে আরো উন্নতকরণ এর লক্ষ্যে শুরু হয় প্রজেক্টের কার্যক্রম।নিউরালিংক এর প্রথম পদক্ষেপ ছিলো মাপণযোগ্য হাই ব্যান্ডউইথ বিএমাই(BMI)সিস্টেম মস্তিষ্কে সম্প্রসারণ।এই প্রযুক্তিতে থ্রেড(thread) এর মতো বা সুতোর মতো অংশে ইলেক্ট্রিকাল সিগন্যাল গ্রহণকারী ইলেক্ট্রোডকে সাজানো হয়।
প্রায় ৩০৭২ টি ইলেক্ট্রোড থাকে একটি সজ্জাবিন্যাসে,যেগুলো ৯৬টি সুতার মতো অংশের গ্রুপে সাজানো হয়।ভাবনার ব্যাপার হলো যে মানুষটি এই প্রযুক্তিটি গ্রহণ করবেন তিনি নিশ্চয়ই চাইবেন না তার নার্ভ সিস্টেম চিরজীবনের জন্য বিকল হয়ে যাক!
তাই তার সমাধানও বের করেছেন নিউরালিংক এর একদল তুখোড় বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার প্রস্তুত করেছেন একটি নিউরোসার্জিক্যাল রোবট,যেটি মাইক্রন পরিসরে মিনিটে ৬ টি সুতো(১৯২ টি ইলেক্ট্রোড)কে মস্তিষ্কের রক্তনালিকা এড়িয়ে মস্তিষ্কের যথাস্থানে সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়।
এই ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কালেক্টেড ডাটা ট্রান্সমিট করা,এক্ষেত্রে এমআরআই(MRI)প্রযুক্তি ব্যাবোহার করে ইলেক্ট্রোড থেকে ডাটা কালেকশন এর পদ্বতি বের করা হয়েছে।তবে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রক্রিয়া দ্রুততম করার জন্য ইউএসবি সি টাইপ ব্যাবোহার করে তা ডাটা ট্রান্সমিট করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।
কৌশলগত বাধা এড়ানোঃ
হাজারের বেশী ইলেক্ট্রোড এর অবস্থান ১৫০০সেমি কিউব মস্তিষ্কে???ব্যাপারটি বাড়িবাড়ির পর্যায় নয়?
জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপের বাধার মতো এই প্রজেক্টের প্রথম বাধা ছিলো অনেকগুলো ইলেক্ট্রোডকে ছোট স্থানে বিন্যাসিত করা।কিন্ত বিস্ময়কর হলেও সত্য যে হাজারের বেশী ইলেট্রোড এর জন্য প্রয়োজন হয়েছে(২৩×১৮.৫×২)মিলিমিটার কিউব স্থান!
কারণ ন্যানোটেকনোলজির এই যুগে ইলন মাস্কের নিউরালিংক কাজ করছে মাইক্রো পরিসরে,তাইতো ৩০৭২টি ইলেক্ট্রোড কে সাচ্ছন্দ্যে সংকুলায়িত করা সম্বব হয়েছে ছোট্ট এক জায়গায়।
পরবর্তী চ্যালেঞ্জ ছিলো ইলেক্ট্রোড গুলোকে মস্তিষ্ক নিসৃত রাসায়নিক জৈব রাসায়নিক পদার্থ হতে রক্ষা করা, এক সাক্ষাৎকারে জানান ইলন মাস্ক।তবে ঠিক কি ধরনের পদার্থ ব্যাবোবার করা হয়েছে তা এড়িয়ে গিয়েছেন।তবে দেশটি যেহেতু আমেরিকা তাই স্বাস্থ্যগত সমস্যা হওয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা।
ভবিষ্যত কি?
সর্বপ্রথম মস্তিষ্কের জটিল রোগসমূহকে সহজে সমাধানই করার লক্ষ্যে অগ্রযাত্রা শুরু হলেও সম্প্রতি নিউরালিংক হাতে নিয়েছে “কনটেক্সুয়াল টেলিপ্যাথি সিস্টেম”এটি আগেরদিনের কোন বাংলা ছায়াছবির টেলিপ্যাথির মতো নয় বরং আইওটি কে কাজে লাগিয়ে খুব সুক্ষ্ম সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে মস্তিষ্ক ও যন্ত্রের সাথে।
কে জানে অদূর ভবিষ্যতে তপ্ত দুপুরে হেটে এসে ইচ্ছে করলেই বেড়ে যাবে এসির লেভেল!!! হয়তোবা কিছুনা জানলে গুগল করার অভ্যেস ল্যাপটপ বা মুঠোফোনে ছেড়ে হয়ে যাবে মস্তিষ্ক কেন্দ্রিক!
হতে চান নিউরালিংক এর একজন?
এতোক্ষণ কল্পকাহিনিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টা শুনে অনেকের ইচ্ছে জাগবে ইশশশ! যদি কাছ থেকে দেখা যেতো এই গুরুকান্ড?হতাশার কিছু নেই, https://jobs.lever.co/