প্যারালাল ইউনিভার্স, বিভিন্ন সাইন্স ফিকশন বই পড়তে, বা সিনেমা দেখতে গিয়ে আমরা মাঝে মাঝেই এই একটি শব্দের মুখোমুখি হয়ে থাকি। আসলে প্যারালাল ইউনিভার্স হচ্ছে মূলত আমাদের এই পৃথিবীরই মতন আরেকটি হাইপোথেটিক্যাল জগৎ। এখানেও আছে প্রাণের অস্তিত্ব, তাদের নিজেদের বাস্তবতা এবং জীবন।
বৈজ্ঞানিক দুনিয়ায় এই প্যারালাল ইউনিভার্সের তত্ত্ব এবং এর অস্তিত্ব নিয়ে এতদিন চলেছে বিস্তর আলোচনা। কিন্তু সম্প্রতি একটি গবেষণার মাধ্যমে সে প্যারালাল ইউনিভার্স বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে বাস্তব দুনিয়ায়।
প্রায় ১৩৭ কোটি বছর আগে আমরা আজ পৃথিবী, গ্রহ, নক্ষত্রসহ যা জানি তা সবমিলিয়ে ছিল খুব ক্ষুদ্র, নগণ্য একটি পরিসরে। তারপর বিগ ব্যাং থিওরি অনুযায়ী, সেটি এক মুহূর্তেরও কম সময়ের জন্য আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে ফুলে-ফেঁপে ওঠে, এবং বিস্ফোরিত হয়।মাত্র ১০^-৩২ সেকেন্ডের ভেতরে মহাবিশ্ব তার প্রাথমিক আকারের চেয়ে ১০^২৬ গুন বড়ো আকার ধারণ করে। প্রক্রিয়াটিকে কসমিক ইনফ্লেশন (cosmic inflation) নামে ডাকা হয়। আর ইনফ্লেশন এর ফলেই ঘটেছিল বিগ ব্যাং।
এই ইনফ্লেশন এবং বিগ ব্যাং এর ধারণাটিই কিছু কিছু বিজ্ঞানীকে প্যারালাল ইউনিভার্সে বিশ্বাস করতে অনুপ্রাণিত করেছে। ম্যাসাচুসেটস এর টাফ্ট ইউনিভার্সিটির তত্ত্বীয় পদার্থবিদ অ্যালেকজান্ডার ভিলেনকিনের মতে, “ইনফ্লেশন সব জায়গায় একই সময়ে শেষ হয়নি। পৃথিবী থেকে শনাক্তকরণীয় সব বস্তুর জন্য যদিও ইনফ্লেশন ১৩৮ কোটি বছর আগেই শেষ হয়েছে,অন্য কোন জায়গায় কসমিক ইনফ্লেশন এখনো চলছে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।” এ তত্ত্বের নাম ইটার্নাল বা চিরন্তন ইনফ্লেশন। “কোন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যখন ইনফ্লেশন শেষ হবে, সেখানেই একটি নতুন জগৎ সৃষ্টি হবে,” বলেন অ্যালেকজান্ডার।
তবে আরো অন্যান্য জগৎ যদি থেকেই থাকে, তাহলে আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি না কেন? কারণ তারা অনন্তকাল ধরেই সম্প্রসারিত হচ্ছে। আমরা নিজেদের জগতের সীমানা থেকেও যদি আরেকটা জগতের সীমানায় যাওয়ার জন্য রওনা দিই, তাহলেও আমরা কখনো শেষ সীমানায় পৌঁছাতে পারবো না, কারণ সেই সীমানাটি আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে বিস্তৃত হচ্ছে, আর আমাদের থেকে আরো দূরে চলে যাচ্ছে।
আর যদি, হাইপোথেটিক্যালি, আমরা কখনও বা পৌঁছাতেও পারি, তাহলেও সে জগতের শারীরিক ধ্রুবক এবং জীবনযাপনের পরিবেশ আমাদের থেকে একদমই ভিন্ন হবে।
জীবন যাপনের জন্যে কেন আমাদের চারপাশই একদম সর্বোত্তম পরিবেশ তা এই তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়। কারণ হচ্ছে বুদ্ধিমান প্রাণীরা একমাত্র সেই সব জায়গায়ই বিদ্যমান থাকে, যেসব জায়গায়, কাকতালীয়ভাবে, জীবনযাপনের পরিবেশ উপযুক্ত থাকে।
এ কথাটি অন্য কোন একটি প্যারালাল ইউনিভার্সেও বুদ্ধিমান প্রাণীর উপস্থিতির সম্ভাবনা স্থাপন করে। কিন্তু হয়তো বা আমরা কখনই তাদের সম্পর্কে জানতে পারবো না, কারণ প্রতি মুহূর্তেই আমরা তাদের থেকে আরো দূরে চলে যাচ্ছি এবং আমাদের কখনো মিলিত হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নেই।