এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রাচীনতম পরজীবী হলো টিউব/নল আকৃতির ক্ষুদ্র প্রাণিগুলো, যারা প্রায় ৫০০ মিলিয়ন বছর পূর্বে ঝিনুকের মতো ব্রাকিওপোড গুলোর সাথে সংযুক্ত থেকে জীবন অতিবাহিত করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার আর্মিডালে ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ডের পরজীবী বিশেষজ্ঞ টমি লিউং বলেছেন, “পরজীবিতা পৃথিবীতে জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, তবে কখন এটি উদ্ভুত হয়েছিল তা নির্ধারন করা কঠিন”। তবে তিনি বলেছেন, “এটি সম্ভবত খুব তাড়াতাড়ি উদ্ভুত হয়েছিল কারন প্রতিটি জীব-ই পরজীবী বহন করে থাকে এমনকি পরজীবীর মধ্যেও অন্য পরজীবী থাকতে পারে”।
কখনো কখনো বিজ্ঞানীরা অ্যাম্বারে সংরক্ষিত হোস্টগুলোর মধ্যে পরজীবী খুঁজে পান। কিন্তু লিউং বলেন, সাধারনত পরজীবী গুলো খুব ভাল ভাবে ফসিল হয় না কারন তাদের দেহগুলি প্রায়শই নরম এবং ছোট থাকে। এমনকি দুটি জীব যদি একই জীবাশ্মে নিবিষ্ট থাকে তবে তাদের সম্পর্ক পরজীবিতা। তবে তারা কি মিচুয়াল ছিল কি না তা নির্ধারন করা কঠিন।
চীনের শিয়ানের নর্থওয়েস্ট নামক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জীবাশ্মবিদ জিফেই ঝাং ও তার সহকর্মীগণ গত ২ জুন “ন্যাচার কমিউনিকেশন”-এ একটি পেপার পাবলিশ করেন, যার বিষয়বস্তু হলো ৫১২ মিলিয়ন বছর পূর্বে চীনের ইউনানে ব্রাকিওপোডের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো টিউব/ নলাকৃতির পরজীবী পাওয়া যায় যেটি সম্পর্কে তারা জোরালো প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
৪২৫ মিলিয়ন বছর আগে জিহবা কৃমির জীবাশ্ম গুলো পরজীবিতার সুস্পষ্ট প্রাথমিক উদাহরণ উপস্থাপন করে তবে পূর্বে ক্যামব্রিয়ান থেকে প্রাপ্ত পুরোনো জীবাশ্মগুলি সম্ভাব্য পরজীবী সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।
গবেষকরা দক্ষিণ চীনে হাজার হাজার ব্রাকিওপোড আবিষ্কার করেন যেগুলো মূলত একসাথে গুচ্ছ অবস্থায় ছিলো এবং এগুলোর বাহিরের আবরণ তামাটে বর্ণের ছিলো। ব্রাকিওপোডগুলির শত শত খোলসের বহিরাংশে নল, মোম আকৃতির কাঠামো সংযুক্ত ছিলো।
এই কাঠামোগুলি খোলসের খোলা প্রান্তে মুখের মতো অংশ গুলির সাথে ফ্যানের পাখার মতো সজ্জিত ছিলো। এই টিউবগুলো কেবল ব্রাকিওপোড গুলিতেই উপস্থিত ছিলো, কখনও একা বা অন্যান্য জীবাশ্মের সাথে সংযুক্ত ছিলো না। তাই প্রস্তাবিত যে এই জীব একাকী বসবাস করতে পারে না।
আরও পড়ুনঃ ১। সর্বকালের সবচেয়ে ছোট ডাইনোসরটি ছিল একটি পাখি- গবেষকদের দাবি ২। ‘মার্টিন জো লরেলো’ পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি যিনি তার মাথা ১৮০° কোণে ঘুরাতে পারতেন |
ব্রাকিওপোড গুলো মূলত বাছাই করে খাবার গ্রহণ করত যেগুলো তাদের খোলসের ভিতরে নিয়ে যেত। ঝাং এবং তার সহকর্মীরা অনুমান করেছিলেন যে ব্রাকিওপোড তাদের খাবার খাওয়ার আগেই টিউবগুলি খোলসের প্রান্ত থেকে খাবার ছিনিয়ে নিত। অর্থাৎ এরা এক ধরনের ক্লিপোপ্যারাসাইট যারা অন্যের খাবার ছিনিয়ে নেয়।
যদি এটি সত্য হয় তবে নল/টিউব পরজীবীর আবরনী যুক্ত ব্রাকিওপোডগুলো তাদের টিউব পরজীবী মুক্ত ব্রাকিওপোডগুলোর চেয়ে হালকা হওয়া উচিত যেহেতু তারা খাবার কম পাচ্ছে। তাই গবেষকরা টিউব পরজীবী যুক্ত এবং টিউব পরজীবী বিহীন ব্রাকিওপোড গুলোর ভর অনুমান করেছিলেন। তারা দেখেছিলেন যে উভয়ক্ষেত্রেই ব্রাকিওপোড গুলোর ভর একই অর্থাৎ ভরের ক্ষেত্রে টিউব গুলোর কোনো প্রভাবই ছিলো না।
গবেষণায় জড়িত না থাকা সত্ত্বেও লিউং বলেন, “ব্রাকিওপোড এর সাথে এই জীব গুলোর একটি অন্তরঙ্গ সংযোগ ছিলো”। তবে তিনি নিশ্চিত নন যে সম্পর্কটি বৈরী ছিলো কিনা। তিনি বলেন, “যদি সম্পর্কটি সত্যিই পরজীবী হয়, তবে আরও বেশি টিউবযুক্ত ব্রাকিওপোড গুলোর অবস্থা খারাপ হওয়া উচিত কিন্তু বাস্তবে এটি ঘটে নি”।
টিউবযুক্ত ব্রাকিওপোড গুলো ছোট হলেও লিউং বলেছেন, “এগুলো পরজীবিতার প্রভাব প্রতিফলিত করতে পারে না। এর পরিবর্তে টিউব প্রানীগুলো কেবল খোলসের ছোট ছোট শাসঁগুলো তে সংযুক্ত হওয়া পছন্দ করে।”
কোন সম্পর্ক পরাশ্রয়ী কিনা তা মূলত বাস্তুতান্ত্রিক প্রসঙ্গের উপর নির্ভর করতে পারে। টিউব পরজীবী বাহী ঝিনুকগুলো কেবলমাত্র খাবারের অভাব বোধ করলেই সেগুলো টিউব পরজীবী দ্বারা স্ট্রেস হয়ে যেতে পারে অথবা টিউবগুলো সম্ভবত ব্রাকিওপোড গুলোর জন্য খুব কম পরিমাণ খাবার সংগ্রহও করতে পারে। লিউং আরও বলেন, “এই ধরনের সম্পর্কের ফলাফল এমন না যে সবসময় ভালো কিংবা খারাপ।” তিনি আরও বলেন, “মিথস্ক্রিয়া সাধারণত এর চেয়ে জটিল হয়”।
শামসুন নাহার প্রিয়া/ নিজস্ব প্রতিবেদক