রাতে ৭-৮ ঘন্টা শান্তিপূর্ণ ঘুমানো সবার পক্ষে সহজ নয়। কিছু মানুষ অনেক আগেই ঘুমাতে যায়, কিন্তু বিছানায় এপাশ থেকে ওপাশ করেই সময় পার করে, ঘুমাতে পারে না। তারা যতই ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে যাক না কেন, কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করতে চাওয়াও অসম্ভব বলে মনে হয়। নারীদের জন্য সমস্যাটি আরোও বেশি ভয়ংকর। একজন পুরুষ এর তুলনায় একজন নারী দ্বিগুণ অনিদ্রা সমস্যায় ভুগে! কিন্তু কেন?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক কারণে পুরুষদের তুলনায় নারীদের অনিদ্রায় ভোগার প্রবণতা বেশি। আজ এই শারীরবৃত্তীয় ও মানসিক কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
প্রথমে জেনে নিই, অনিদ্রা কী?
অনিদ্রা হল একটি ঘুমের ব্যাধি, যার কারণে আপনার ঘুমিয়ে পড়তে এবং ঘুমিয়ে থাকতে অসুবিধা হয়। আপনার খুব তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে যায় এবং আপনি পুনরায় ঘুমাতে পারেন না। এতে করে ঘুম থেকে উঠার পরও আপনি ক্লান্তি বোধ করতে থাকেন। অনিদ্রা কেবল আপনার শক্তি এবং মেজাজকেই নয়, বরং আপনার স্বাস্থ্য, কাজের কর্মক্ষমতা এবং জীবনের মানকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে।
অনিদ্রার সমস্যা স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। কেন পুরুষ-এর তুলনায় নারী-রা অনিদ্রা সমস্যায় বেশি ভোগে, নিম্নে এর তিনটি কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
হরমোনের সম্পর্ক
হরমোন এবং ঘুম চক্রের মধ্যে একটি শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। একটি সমীক্ষা অনুসারে, বয়ঃসন্ধিকালে না যাওয়া পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঘুমের চক্রে কোন পার্থক্য থাকে না। মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর থেকে ঘুমের ধরণে পরিবর্তনগুলো শুরু হয়। মেয়েদের পিরিয়ড চক্রের উপর নির্ভর করে হরমোনের ওঠানামার কারণে তাদের ঘুম চক্রটিও পরিবর্তিত হয়। গর্ভাবস্থা এবং মেনোপজ অবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন অনেক বেশি ঘটে এবং তা ঘুমের নিয়মিত সময়সূচীকে নষ্ট করতে পারে।
মেজাজের প্রভাব
অনিদ্রার আরেকটি কারণ হলো দুশ্চিন্তা এবং হতাশার মতো তীব্র মুড সুইং। আমরা জানি যে, মহিলারা একটু বেশিই আবেগপ্রবণ এবং এদের সহজে মুড সুইং হয়। এটি তাদের ঘুমের সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।
ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবন
একটি বিষয় আমাদের প্রত্যেককে মেনে নিতে হবে। শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক এবং পরিবারের সবার প্রাথমিক যত্ন মহিলারাই নেন। বাড়ি পরিচালনা থেকে শুরু করে বাইরের কাজ, তাদের উভয় কাজই পরিচালনা করতে হয় একসাথে। এই সমস্ত কাজ তাদের মাইগ্রেন, স্ট্রেস লেভেল বাড়িয়ে দিয়ে ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
অনিদ্রার সমস্যা কীভাবে সমাধান করবেন?
অনিদ্রার সমস্যাটি আপনার দৈনন্দিন জীবনে শুরু হওয়ার পূর্বেই প্রতিরোধ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্যাটি সমাধানের জন্য বিভিন্ন উপায় রয়েছে, তবে প্রথমে এর অন্তর্নিহিত কারণটি অনুসন্ধান করা এবং আপনার ঘুমের অভ্যাস পর্যালোচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
বেশিরভাগ মানুষই জীবনের কোন না কোন সময়ে অনিদ্রা অনুভব করেন। এটি সাধারণত এক বা দুই দিনের জন্য স্থায়ী হয়। তবে তিন মাস বা তারও বেশি সময় ধরে সপ্তাহে তিন রাতে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিলে, এই অবস্থাটি দীর্ঘস্থায়ী হিসেবে বিবেচিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া উচিত।
অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে, অনিদ্রা সমস্যার সমাধানে আপনি নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে পারেন :
১. একটি নির্ধারিত ঘুমের সময়সূচী মেনে চলুন।
২. ঘুমাতে যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করুন।
৩. ঘুমাতে যাওয়ার এক ঘন্টা বা তারও আগে থেকে মোবাইল/ টিভি ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
৪. গভীর রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।
৫. চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করুন।
তানজিনা সুলতানা শাহীন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র : Times of India, অক্সফোর্ড একাডেমিক, স্লিপ ফাউন্ডেশন, হেলথ ব্লগ