নাসার ২০২০ মার্স মিশনের অন্যতম অংশ ছিল প্রিজার্ভেন্স রোভার বা পার্কি, যেটি ২০২০ এর ৩০ জুলাই পৃথিবীকে ছেড়ে গিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলের মাটিতে অবতরণ করে। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী ১৯ জুন ২০২৪ পর্যন্ত এই যানটি মঙ্গলের ১১৮৪ দিন সূর্যদিন তথা পৃথিবীর হিসেবে ৩ বছর ৪ মাস ১ দিন ধরে এক্টিভ রয়েছে।
Preservance / প্রিজার্ভেন্স বা সংক্ষেপে যাকে পার্কি বলা হয় এর মার্স মিশনের লক্ষ্য ছিল মঙ্গলের জীবন পর্যবেক্ষণকে কেন্দ্র করে। প্রাচীন জীবনের জীবাশ্ম প্রমাণের সন্ধানের পাশাপাশি এটি এমন পরিবেশ অনুসন্ধান এবং বোঝার চেষ্টা করছে যা জীবের বেঁচে থাকা সমর্থন করে।
একই সাথে মঙ্গলের শিলা ও মাটির নমুনা সংগ্রহ করার পাশাপাশি পরবর্তী সময়ে যেন মঙ্গলে পাঠানো ক্রদের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন প্রস্তুত করা যায় সেই প্রচেষ্টাও চলমান।
সম্প্রতি পার্কি মঙ্গলের মাউন্ট ওয়াশবার্ন নামক জায়গা অতিক্রম করে Bright Angel এর দিকে চলে গিয়েছে। Bright Angel বিজ্ঞানীদের কাছে সর্বদাই একটি আকর্ষণীয় অঞ্চল, এটি জেজারো ক্রেটারে অবস্থিত। জেজারো ক্রেটার, একটি প্রাচীন প্যালিও লেক যেখানে পলি এবং অন্যান্য আকর্ষণীয় ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট রয়েছে। সেখানেই পার্কি কিছু অস্বাভাবিক শিলা দেখতে পায়। যেগুলো দেখতে একদম পপকর্ণ আকৃতির। এজন্য বিজ্ঞানীরা এটিকে ‘পপকর্ণ শিলা’ নাম দেন। এই শিলাগুলো প্রমাণ করে যে এই অঞ্চলে পূর্ববর্তী সময়ে পানির উপস্থিতি ছিল।
পার্কি যে কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে জেজারো ক্রেটারের দিকে গিয়েছে সেগুলো হলো, জেজারো ক্রেটার এর,
- মাটি এবং শিলা পর্যবেক্ষণ করে সেখানকার ইতিহাস পর্যালোচনা
- পরিবেশ ও জলবায়ু নিয়ে ধারণা
- প্রাসঙ্গিক প্রাচীন পরিবেশ এবং ভূতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যের প্রমাণ
এ ছাড়াও এস্ট্রোবায়োলজির গবেষণায় প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ এবং মঙ্গলে মানুষ গমনের পূর্ব প্রস্তুতির ব্যাপারেও নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য ছিল এটির।
যদিও পার্কি মূলত জেজারো ক্রেটারে বিদ্যমান কার্বনেট শিলা এবং অলিভাইন অনুসন্ধান করছিল। মূলত অলিভিন হলো এমন এক ধরনের খনিজ যা ভেঁজা অবস্থায় সহজে পঁচে যায়। তাই প্রাচীনকাল থেকে এর বিরাজমান অবস্থা ইঙ্গিত দেয় যে মঙ্গল তার ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় ঠাণ্ডা এবং শুষ্ক অবস্থায় ছিল।
কিন্তু পার্কি Bright Angle এ গিয়েছিলো ভিন্ন ধরনের শিলা আবিষ্কারের আশায় এবং ঠিক এমনটাই ঘটে সেখানে।
এই পপকর্ণ শিলাগুলো শৈলশিরাতে পরিপূর্ন যাকে মোটামুটি খনিজের তৈরি শিরা বলা যায়। খনিজ শিরাগুলো মূলত ভেঁজা প্রকৃতির, যা প্রমাণ করে এই শিরাগুলোর মধ্য দিয়ে একসময় জল প্রবাহিত ছিল এবং একত্রে সব শিলাস্তরগুলোর মাঝে একদা ভূগর্ভস্থ জল প্রবাহিত ছিল বললেও ভুল হবে না।
পার্কির জন্য পরবর্তী কাজ হবে এই শিলাগুলোতে মিনারেল বা খনিজ বিদ্যমান কিনা তা নির্ধারণ করা।
কর্তৃপক্ষের মতে, এই সপ্তাহে এটি অন্যান্য যন্ত্র ব্যবহার করে শিলাকে বাষ্পীভূত এবং পাথরের রসায়ন পরীক্ষা করে ডেটা সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করবে। এই ডেটা দেখে, দল সিদ্ধান্ত নিবে যে রোভারটি পৃথিবীতে ফেরার সময় নমুনাটি সাথে নিবে কিনা।
ব্রাইট এঙ্গেলে এর কাজ শেষ হলে এটি নেরেটভা ভ্যালিস জুড়ে দক্ষিণে ফিরে যাবে এবং “সার্পেন্টাইন র্যাপিডস” নামে একটি সাইট অন্বেষণ করবে, সেখানে “পপকর্ণ শিলা” র মতো চমৎকার কিছু দেখা যায় কিনা, এখন শুধু তারই অপেক্ষা।
মাহফুজুর রহমান রিদোয়ান / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্স.নাসা.গভ, সায়েন্স অ্যালার্ট.কম