শৈশবের খেলার ছলে বানানো কলম যে হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের জীবিকা নির্বাহের পথ তা কে জানতো? যশোর শহরের অফিস পাড়ার গৃহবধূ নাসিমা আক্তার ছোট্ট বেলায় রঙিন কাগজ আর ঝাঁটার কাঠি দিয়ে তৈরী করতেন পরিবেশ বান্ধব একধরনের কলম, যা দিয়ে আঁকাআঁকি কিংবা মাটিতে খেলাচ্ছলে বিভিন্ন জিনিস লিখতেন।
বিয়ের পরবর্তী সময়ে আর্থিক সমস্যা যখন দেখা দেয়, ঠিক তখনই শৈশবের খেলাচ্ছলে তৈরী করা কলমকে পুঁজি করে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। রঙিন কাগজ, আঠা স্টিকার এবং কলমের কালির রিফিল নিয়ে তৈরী হয় নাসিমা আক্তারের পরিবেশবান্ধব এই বলপেন। এরপর নিজের ছেলেকে নিয়েই বেরিয়ে পড়েন বাজারজাত করার উদ্দেশ্য।
বাজারে থাকা বাকি সব সাধারণ বলপেনের মতোন তার বলপেনের দাম ৫ টাকা হলেও যশোরের এম এম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ছোলজার রহমানের মতে এই কলম প্রায় ৯০% পরিবেশবান্ধব ও প্লাস্টিক দূষণ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সাধারণত একটি প্লাস্টিকের বলপেন মাটিতে মিশে যেতে সময় নেয় গড়ে ৪৫০ বছরের মতোন, যেখানে নাসিমা আক্তারের তৈরী বলপেন মাত্র ২-৩ সপ্তাহতেই মাটিতে মিশে পরিবেশে ফিরে যাবে। আবার এই বলপেন তৈরিতে কোনো যন্ত্রেরও প্রয়োজন হয়না, হাতেই তৈরি করা যায় কলমগুলো।
নাসিমা আক্তার জানান, তিনি ইতোমধ্যে বেশ সাড়া পাচ্ছেন তাঁর পরিবেশ বান্ধব এই কলমের ক্ষেত্রে। তিনি প্রতিদিন হাতে প্রায় ৩০০ পিস কলম তৈরি করতে পারেন। যশোর শহরের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাঁর এই কলম ব্যবহারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যশোর জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আশরাফ হোসেন তার অফিসে এবং জেলা পুলিশ লাইন স্কুলে এই কলম ব্যবহার শুরু করার কথা জানান।
নাসিমার মতে, দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার প্লাস্টিকের কলম ব্যবহৃত হয়। সেসব কলম মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়, যা অপচনশীল। এ থেকে পরিবেশ নষ্ট হয়, মাটি ও বাতাস নষ্ট হয়। কিন্তু তার তৈরি কলমে কাগজের ব্যবহার হয়, কাগজ পচনশীল। সে কারণে ভোক্তাদের আগ্রহ থেকেই যায়।
চতুর্থ শ্রেণী পাশ গৃহবধূর এমন অভিনব পন্থায় পরিবেশ বান্ধব কলম তৈরী সত্যিই প্রশংসনীয়। দুই সন্তানের জননী নাসিমা আক্তারের স্বামী শ্রবণশক্তিহীন ও কর্মহীন। সহায়তা পাওয়া সাপেক্ষে তিনি আরো বড় পরিসরে কর্মহীন নারীদের নিয়ে এই কলম তৈরী করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ এন এম নাঈম/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1
1
+1