জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল কয়েকশ আলোকবর্ষ দূরে থাকা একটি নতুন গঠিত নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ গঠনকারী ডিস্ক গুলোর অভ্যন্তরীণ গঠনের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেন। নব্যগঠিত এই নক্ষত্রের চারিদিকের ধুলো এবং গ্যাসের এই খন্ড গুলো দেখতে অনেকটাই গ্রামোফোনের ডিস্কের মত। এই ছবিগুলো গ্রহ ব্যবস্থার (যেমন : সোলার প্যানেলের) গঠন সম্পর্কে নতুন করে আলোকপাত করেছে।
গ্রহ ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হলে, এমনকি আমাদের গ্রহও কিভাবে এমন আকৃতি পেল, তা জানার জন্য গ্রহের আদি অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। সাধারণত গ্রহ গঠনকারী প্রাথমিক খন্ড গুলো তাদের মূল নক্ষত্রের সাথেই গঠিত হয়। ধীরে ধীরে খন্ডগুলো ধুলিকণা জমে জমে বড় আকারের পদার্থ সৃষ্টি করে, যা শেষে নতুন গ্রহ তৈরী করে। ধারণা করা হয় পৃথিবীর মত পাথুরে গ্রহ ফটোপ্ল্যানেটারি ডিস্কের ভিতরের অংশ থেকে তৈরী হয়েছে যা মূল নক্ষত্রের থেকে পাঁচ এস্ট্রোনোমিক্যাল ইউনিটের(সূর্য থেকে পৃথিবীর দুরত্ব) মধ্যে গঠিত হয়।
নতুন গবেষণার আগে এই ডিস্কগুলোর অনেক গুলো ছবি তোলা হয়েছিল সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল মিরর টেলিস্কোপ গুলো দিয়ে, কিন্তু এটি সুক্ষ্ম তথ্য গুলো তুলতে সক্ষম হয় নি। “এই ছবি গুলোতে নক্ষত্রের কাছাকাছি অঞ্চল যেগুলো পাথুরে গ্রহ তৈরী করতে সক্ষম, সেগুলো কিছু পিক্সেলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো”, বেলজিয়ামের কে ইউ লেভেনের শীর্ষ লেখক জ্যাক ক্লুসকা এমনটাই বলেছেন। তিনি আরো বলেন, “আমাদের প্যাটার্ন খোঁজার জন্য এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন ছিলো, ডিস্কের বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে গ্রহের তথ্য এবং চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাওয়া যাবে। এটির জন্য সম্পুর্ণ ভিন্ন একটি পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির প্রয়োজন ছিলো, আমি ভীষন শিহরিত কারণ, আমাদের কাছে প্রথম বারের মত পনেরোটি ছবি আছে!”
ছবি সমন্বয় :
ক্লুসকা এবং তার সহকারীরা চিলিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরিতে (ESO) ইনফ্রারেড ইন্টারফেরোমেট্রি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি গুলো তুলেছে।
ESO এর Pionier যন্ত্র ব্যবহার করে চারটা টেলিস্কোপ অবজারভেটরির মাধ্যমে গৃহীত আলো বড় টেলিস্কোপ এ ফোকাস করে বিজ্ঞানীরা ডিস্কের বিস্তারিত ছবি তুলেছেন। কিন্তু এই পদ্ধতিতেও বস্তু গুলোর যথাযথ ছবি পাওয়া যায়নি, এর জন্য প্রয়োজন হয় আরো গাণিতিক বিশ্লেষণ ও ছবি গুলোকে সমন্বয় করা।
ক্লুসকা ব্যাখ্যা করেন, “এই পদ্ধতি ব্ল্যাক হোলের প্রথম ছবি তোলার প্রযুক্তির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমরা নক্ষত্রের আলোকে সরিয়ে বা বাদ দিয়েছি, যেন ডিস্ক গুলোকে আমরা পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাই।”
দ্যা ইউনিভার্সিটি গ্রানোবেল আল্পসের জেন ফিলিপ বারগার, যিনি প্রধান গবেষক হিসেবে Pionier এর দায়িত্বে ছিলেন, তিনি বলেন, “সাধারণত মহাজাগতিক সুক্ষ্ম বিষয়গুলো উন্মোচন করার জন্য ইনফ্রারেড ইন্টারফেরোমেট্রি ব্যবহার করা হয়। উচ্চতর গাণিতিক বিশ্লেষণের সাথে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবশেষে আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ গুলোকে ছবিতে রূপদান করতে পেরেছি।”
ছবিগুলো থেকে দেখা যায়, কিছু স্পট উজ্জ্বল আর কিছু অনুজ্জ্বল, যা গ্রহ তৈরীর প্রক্রিয়ার দিকে ইঙ্গিত করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো ডিস্ক অস্থিতিশীল অবস্থায় থাকতে পারে যা ঘুর্ণনের সৃষ্টি করবে, ফলে এর চারপাশে ধুলো আর ঘন হয়ে উঠবে, যা পরবর্তীতে গ্রহে রুপান্তরিত হয়!
এই টিম ভবিষ্যৎএ আরও অতিরিক্ত কিছু গবেষণা করবে ঘটনার পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করার জন্য। আরও বিশদ তথ্য পেতে এবং নক্ষত্রের কাছাকাছি থাকা ডিস্ক গুলোর মধ্যের অঞ্চলে সরাসরি গ্রহ গঠন প্রত্যক্ষ করার জন্য ক্লুসকা ও তার দল পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবেন। ক্লুসকা এমন একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যা চারপাশে আরও ১১ টি নক্ষত্রের ডিস্ক নিয়ে অধ্যয়ন করছে, যার মধ্যে কিছু পুরোনো নক্ষত্রও রয়েছে, যেগুলোর চারদিকে ধূলিকণা দ্বারা আচ্ছাদিত, যদিও এগুলোকে আগে নব্য নক্ষত্র ভাবা হত!!
তথ্যসুত্রঃ সাইন্স ডেইলি
রওনক শাহরিয়ার/ নিজস্ব প্রতিবেদক