আপনি কি জানেন দুধ বিড়ালের জন্য ক্ষতিকর? আশ্চর্য হচ্ছেন, তাই তো? সাধারণত আমরা ছোট থেকেই জেনে আসছি, বিড়ালের জন্য স্বাস্থ্যকর পানীয় হলো দুধ, যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিড়ালের পানের জন্য আদর্শ পানীয় হচ্ছে শুধুমাত্র পানি। বিড়ালদের হাইড্রেটেড রাখার জন্য পানি পান করানোই একটি ভালো পন্থা। বিড়াল দুধের স্বাদ পছন্দ করে থাকলেও এই দুধই, বিশেষ করে গরুর দুধ এর জন্য ক্ষতিকর। কেননা বেশিরভাগ বিড়ালই ল্যাকটোজ ইনটোলারেন্ট। ভারী একটা টার্ম বলে ফেললাম, “ল্যাকটোজ ইনটোলারেন্ট,” চলুন একটু সহজভাবে বুঝে নেয়া যাক।
ল্যাকটোজ হলো মূলত শর্করা, যা দুগ্ধজাতীয় খাবারে পাওয়া যায়, একারণে এই উপাদানকে “মিল্ক শ্যুগার” ও বলা হয়। “ল্যাকটোজ ইনটোলারেন্স” মানে হচ্ছে শরীরে ল্যাকটোজ উপাদান ভাঙার জন্য যে এনজাইমের (ল্যাকটেজ এনজাইম যা ক্ষুদ্রান্ত্রে তৈরি হয়) দরকার তা অনুপস্থিত থাকা, ফলে এই ল্যাকটোজ উপাদান আর ভাঙা সম্ভব না হওয়ায় দেহে এর শোষণ করাও সম্ভব হয় না, সহজ ভাষায় ল্যাকটোজ হজম হয় না। ফলাফল হিসেবে ডায়রিয়া, বমি হয়ে থাকে।
বিড়ালের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বিড়ালের বাচ্চা জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করতে পারবে, অথবা বিশেষভাবে ডিজাইন করা “কিটেন ফর্মুলা মিল্ক” পান করাতে হবে, যদি খুব বেশি প্রয়োজন হয়ে থাকে। তবুও জন্মের ৮-৯ সপ্তাহের মাঝেই এর দুধ ছাড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন?
কেননা বিড়ালের বাচ্চার দেহে মায়ের দুধে থাকা ল্যাকটোজ ভাঙার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইম উপস্থিত থাকে, কিন্তু পরিণত বিড়ালের দেহে এই এনজাইম আর উপস্থিত থাকে না। যার ফলে বাচ্চা বিড়াল বড় হতে হতে ল্যাকটোজ হজমের ক্ষমতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। আর যদি পান করানো হয়েও থাকে, তাহলে ল্যাকটোজ ফার্মেন্টেশনের জন্য বিড়ালের পেট খারাপ হবে। তবে কিছু বড় বিড়াল ল্যাকটোজ টোলারেন্টও হতে পারে, তবে এর সংখ্যা খুবই বিরল।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বারবার অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও বিড়াল কেন দুধ পছন্দ করে?
বিড়াল দুধের স্বাদ পছন্দ করে কারণ দুধে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট বা স্নেহ উপস্থিত থাকে। পেট খারাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রচুর ফ্যাটের কারণে এরা দুধের কাছেই ফিরে যায়। তাই আপনার আদরের বিড়ালকে সুস্থ রাখতে হলে দুধ হতে দূরে রাখুন এবং এর পরিবর্তে অন্য স্নেহজাতীয় খাবার প্রদান করুন।
এবার মনে ঘুরপাক খেতে পারে, বিড়ালের স্নেহজাতীয় খাবার পছন্দের কারণ কী?
খুবই সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে, বিড়ালের স্নেহজাতীয় খাবারের স্বাদ, ঘ্রাণ খুবই পছন্দ। কিন্তু বিড়াল স্বভাবতই মাংসাশী, যার কারণে তাদের দেহ এমনভাবেই তৈরি হয়েছে যে এরা প্রানীজ আমিষ, প্রাণীজ চর্বিগুলোকে পরিপাক প্রক্রিয়ায় হজম করতে পারে৷
আবার, বিড়াল যেহেতু অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় শর্করা যেমন গ্লুকোজ ভালোভাবে পরিপাক করতে পারে না, তাই তাদের দেহে শক্তি উৎপন্নের জন্য বেশিরভাগই ফ্যাট বা স্নেহজাতীয় খাবারের উপর নির্ভর করতে হয়। তাই স্বাদ হোক, কিংবা শরীরের প্রয়োজন, উভয়ভাবেই বিড়াল স্নেহজাতীয় খাবার পছন্দ করে।
আবার আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, আমার বিড়াল তো নবাব, শুধু পানির স্বাদ তার পছন্দ হয় না। এখন কী করবো?
সেক্ষেত্রে আপনি মুরগি বা মাছ সিদ্ধ করার জন্য যে পরিষ্কার পানি ব্যবহার করেছিলেন, সেই পানি পান করাতে পারবেন। তবে এই পানিতে কোনো লবণ বা তেল থাকা যাবে না। এই পানিতে মাংসের স্বাদ থাকায় বিড়াল সাধারণত পছন্দ করে থাকে।
তবুও যদি আপনি আপনার বিড়ালকে একান্তই দুধ খাওয়াতে চান, সেক্ষেত্রে খুবই স্বল্প পরিমাণে “ক্যাট মিল্ক” খাওয়াতে পারেন। আপনার বিড়ালকে সুস্থ রাখতে পরিমাণমতো পানি এবং সুষম খাদ্য দিতে হবে এবং দুধ খাওয়ানো থেকে যতটা দূরে রাখা যায়, ততোটাই ভালো।
সুস্থ থাকুক সবার আদরের বিড়াল।
দিদারুল ইসলাম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: পেটএমডি, পুরিনা, হ্যাস্টিংস ভেটেরিনারি হসপিটাল