ঢেকুর বা হেঁচকি কেন উঠে?
আমাদের বুক আর পেটের মাঝখানে মাংসপেশি দিয়ে তৈরি একটা দেয়াল বা পার্টিশন আছে, যার নাম ‘ডায়াফ্রাম’। এই ডায়াফ্রাম প্রতিনিয়ত এক নির্দিষ্ট ছন্দে প্রসারিত ও সংকুচিত হয়। কোনো কারণে স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে ডায়াফ্রাম যদি হঠাৎ বেশি করে সংকুচিত বা প্রসারিত হতে থাকে, তবেই হেঁচকি ওঠে।
ডায়াফ্রামের সংকোচন-প্রসারণের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখতে সাহায্য করে ‘ফ্রেনিক নার্ভ’ নামে এক বিশেষ ধরনের স্নায়ু। গলা বেশি করে শুকিয়ে গেলে বা ঝাল খেয়ে ফেললে অনেকের ফ্রেনিক নার্ভ উত্তেজিত হয় এবং তার ফলে ডায়াফ্রামের সংকোচন-প্রসারণের হার বেড়ে যায়। ডায়াফ্রাম বেশি করে সংকুচিত হলে, শ্বাসনালীর ভেতরের স্বররন্ধ্র থেকে খানিকটা হাওয়া হঠাৎ করে বেরিয়ে যাবার ফলে গলা দিয়ে এক অদ্ভুত আওয়াজ বেরোতে থাকে। একেই আমরা বলি হেঁচকি বা হিক্কা (Hiccough,hiccup)।
ঢেকুর বা হেঁচকি সাধারনত আমাদের দৈনন্দিন সহজাত সমস্যা। যেখানে সেখানে হঠাৎ করে ঢেকুর তোলাকে সাধারণত কটু চোখেই দেখা যায়। আবার এমনও সংস্কৃতি রয়েছে যেখানে খাবারের পর ঢেকুর তোলা সুস্বাদু খাবার ও পেটপুরে খাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ করে। তবে মানুষের মাঝে বিকট শব্দে ঢেকুর তোলা দারুণ অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। তাই জেনে নিন ঢেকুর উঠলে কি করবেন।
-
প্রথম ওষুধ হলো পানি, হাতের কাছে পানি থাকলে পান করতে থাকুন ঢগঢগ করে ৷( পড়ুনঃ হেঁচকি উঠলে তা পানি খেলে বন্ধ হয়ে যায় কেন? )
-
তবে যদি হাতের কাছে পানি না থাকে তবে আঙ্গুলে চেপে নাক বন্ধ করে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করবেন আর এভাবে ৫ থেকে ৭ সেকেন্ড থেকে নাক ছেড়ে দিবেন ৷ যাদের খেতে বসলেই ঢেঁকুর উঠে, তারা খাওয়ার আগে পানি পান করে নেবেন এক গ্লাস, তাহলে দেখবেন খাওয়ার সময় বা পরে ঢেঁকুরের সমস্যা কম হবে ৷
-
যারা দ্রুত খায় তারা সাধাণরত খাবার ঠিক মতো চিবিয়ে খায় না। খাবার না চিবিয়ে দ্রুত খেলে খাবারের ফাঁকে বাতাস ঢুকে খাদ্যনালীতে আটকে যেতে পারে। এর ফলাফল হলো বিরক্তিকর ঢেঁকুর। তাই গিলে না খেয়ে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন এবং খাবেন অল্প পরিমাণে।
-
খাওয়ার পর একটু হাঁটুন। খাওয়ার পর পর টেলিভিশন দেখতে বসবেন না। মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলেও আপনার পাকস্থলী বায়ুশূন্য হয়ে যাবে।
-
রাতের পাকস্থলীর ওপর চাপ দিয়ে কিংবা ডানদিকে কাত হেয় শুয়ে পড়ুন। এতে খাবার হজম হবে ভালোভাবে। পেটে গ্যাস জমবে না।
অনেকে আবার প্রচলিত প্রথায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে চমকে দিয়েই ঢেঁকুরের সমস্যা সামলে দেন। যদিও এর সাথে চিকিৎসাবিজ্ঞানের তেমন কোনো সংযোগ নেই, তবুও ব্যাপারটা কিন্তু বেশ লোমহর্ষক। প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। তবে চমক কিন্তু চমকের মতোই হতে হবে, পাতানো হলে চলবে না।
-
আদার ঝাঁঝালো গন্ধে সমস্যা না থাকলে রোজ দিনে দু-তিন বার কয়েক কুচি আদা চিবোন। চাইলে, একটু মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন। আর সমস্যা যদি একেবারে নিয়মিত হতে থাকে, তো জিরা খোলায় ভেজে নিন। এরপর এটাকে গুড়িয়ে নিন। এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে দু’চামচ মিশিয়ে রোজ খান। অথবা আপনার রোজকার ডায়েটে অবশ্যই রাখুন টক দই। টক দই ঢেকুর দূর করে দ্রুততম সময়ে। এভাবে জিরা খেতে সমস্যা হলে তরকারিতে মৌরি দিয়ে ফোড়ন দিন। যাই খান সেই আপনার ঢেকুর আটকাবে।
-
গরম পানির সঙ্গে পুদিনা পাতা ফুটিয়ে খেতে পারেন।
-
রোজ পেঁপে খেলে হজম ক্ষমতা এমনিতেই চড়চড় করে বাড়ে। অকারণ গ্যাস তৈরি হয় না। ঘনঘন ঢেকুরও আর ওঠে না।
- দীর্ঘদিন এ সমস্যায় ভুগে থাকলে পাতিলেবুর রসে ১/৪ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়ম করে খেতে পারেন। আশা করি কাজে আসবে।
+1
+1
8
+1
1
+1
6
+1
2
+1
1
+1
6