আমাদের ভেতর অনেকেই আছেন যারা নিজের শরীরের ওজন নিয়ে চিন্তিত।অনেকেই চান অন্তত সিক্স প্যাক নয়,যেন একটা ফিট শরীর থাকে। কিন্তু বর্তমান সময়ের কাজের চাপে জিম বা ঘরোয়া ব্যায়াম এর কথা মাথায় আনতে পারেন না। তাদের জন্য একটাই পথ খোলা থাকে,ডায়েট করা।কিন্তু এখানেও যে রয়েছে প্রচুর ভুল ধারণা!
তো আজকের এই প্রচেষ্টা তাদের জন্য যারা হয়তো ডায়েট সম্বন্ধে ভুল ধারণা লালন করছেন এবং সেই সব সত্যসন্ধানীদের জন্য যারা কোনটা মিথ আর কোনটা ফ্যাক্ট সেটা খোজার চেষ্টা করছেন।
মিথঃ ওজন কমানোর জন্য কার্বোহাইড্রেট বাদ দেওয়া।
ফ্যাক্টঃ আমাদের রোজকার খাদ্যাভাসে কার্বোহাইড্রেট মূলত দুই ভাবে আসে। সেগুলি হল: ১) সরল কার্বোহাইড্রেট ২) জটিল কার্বোহাইড্রেট সরল কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় মূলত চিনি জাতীয় খাদ্য যেমনঃ মিষ্টি, ক্যান্ডি, কুকিজ ইত্যাদি থেকে।এগুলা খাওয়া ছাড়তে পারলে,অনেক ভালভাবে সুস্থ থাকা যায়।আবার জটিল কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায় সকল শাক-সবজি, ফলমূলে এবং লাল আটার রুটিতে,এগুলো মূলত আশ বা ফাইবার রূপে থাকে।
যেহেতু ফাইবারের কোন খাদ্যমান নাই,আবার এসব শাক সব্জি থেকে প্রচুর ভিটামিন এবং অন্যান্য খাদ্য উপাদান পাওয়া যায়,সহজেই কার্বোহাইড্রেট এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এ রেখে ডায়েট সম্ভব। সুতরাং চেষ্টা করুন,যতটা সম্ভব মিষ্টি জাতীয় খাদ্য পরিহার করে প্রচুর জটিল শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণ।
আর যদি মিষ্টি খেতেই হয় তাহলে মিষ্টির বদলে পরিমিত পরিমাণ ফল ব্যবহার করুন। তাতে ভিটামিন এর সাথে এন্টি অক্সিডেন্টও পাওয়া যাবে প্রচুর,যা আপনাকে ফিট রাখতে সাহায্য করবে।
মিথঃ যদি কৌটার গায়ে লেখা থাকে Low fat বা No fat, তবে সেই খাদ্য অনায়াসে প্রচুর খাওয়া যাবে এবং কোন ওজন বাড়বে না।
ফ্যাক্টঃ অনেক Low fat বা No fat লেখা খাবারে অতিরিক্ত চিনি, স্টার্চ এবং লবণ যোগ করা হয়ে থাকে ফ্যাট কম দেখানোর জন্য।
কিন্তু এগুলো সাধারণত উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার হয়ে থাকে যা পরোক্ষ ভাবে মুটিয়ে যেতে সাহায্য করে।এক্ষেত্রে নিউট্রিশন লেভেল এবং সার্ভিং সাইজটাও একবার দেখে নেওয়া উচিত।
মিথঃ সকালের খাবার না খাওয়া ওজন বাড়িয়ে দেয়।
ফ্যাক্টঃ এই মিথের কিছুটা সত্যতা আছে বৈকি! গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের পর্যাপ্ত নাস্তা আপনার সারাদিনের কাজের শক্তি দেবে।
যারা সকালে খান না,তাদের ভেতর মুটিয়ে যাবার প্রবণতা দেখা যায়। কারণ তারা তাদের ক্ষুধা মেটানোর জন্য দুপুরে প্রচুর ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে ফেলেন,যা ওজন বাড়িয়ে দেয়।তাই সকালের নাস্তাটা অন্তত ভাল করে করুন!
মিথঃ গভীর রাতে খাওয়া ওজন বাড়িয়ে দেয়।
ফ্যাক্টঃ এই মিথের সামান্য সত্যতা আছে।গবেষণায় দেখা গেছে,গভীর রাতে খাওয়া ওজন বাড়িয়ে দেয়।একটা সম্ভাব্য কারণ হতে পারে,গভীর রাতের খাবার সময় ভোক্তার বেশি ক্যালরিযুক্ত খাদ্যের প্রতি আকর্ষণ দেখা যায়।
রাতের খাবারের পর আবার হালকা নাস্তা করা লোকদের ভেতর অনিদ্রার প্রবণতা দেখা যায়,যা পরের দিন সকালে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের দিকে নিয়ে যায়। যদি রাতে খাবার পরেও ক্ষুধা থেকে যায়,নিজেকে কম চর্বিযুক্ত দই বা কচি গাজর খাবার ভেতর সীমাবদ্ধ রাখুন।
মিথঃ উপবাস করা ওজন কমিয়ে দেয়।
ফ্যাক্টঃ উপবাস করা ক্ষতিকর তখন,যখন সারাদিন না খেয়ে থেকে পরে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া হয় যা সারাদিনে যতটুকু ক্যালরি উপবাস থাকাকালে শরীরের খরচ করার প্রয়োজন হয় তার থেকেও অনেক বেশী।
তাই এই না খরচ হওয়া বাড়তি ক্যালরি পরবর্তীতে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। দেখা গেছে,যারা উপবাস করে ওজন কমানোর চেষ্টা করেন তাদের থেকে যারা কম ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন, বিভিন্ন রঙ এর শাক-সবজি,টকজাতীয় অথবা কম মিষ্টি জাতীয় ফল তাদের খাদ্যাভ্যাসের অন্তর্ভুক্ত করেন তারা আরো স্থায়ীভাবে মেদ কমাতে সক্ষম হয়ে থাকেন।
|
তারমানে মোটকথায় বলা যেতে পারে, সুস্বাস্থ্য কিংবা ডায়েট দুটোর জন্যই যেই ব্যাপারগুলো মেনে চলতে হবে সেগুলো হচ্ছে, কম ক্যালরিযুক্ত খাবার আর বেশী ক্যালরি খরচ হয় এমন পরিশ্রম। তাহলে সুস্থতার পাশাপাশি প্রাণবন্ত শরীরও বজায় থাকবে।