পত্রিকার পাতায় মাঝেমধ্যেই কিছু চমকপ্রদ খবর নজরে পড়ে, যেমনঃ স্ত্রীকে চাঁদে জমি কিনে উপহার দিলেন স্বামী মাত্র ৫৫ ডলারে চাঁদে জমি কিনলেন সাতক্ষীরার দুই তরুণ! এবার চাঁদে জমি কিনলেন গোপালগঞ্জের কানাডা প্রবাসী দম্পতি ইত্যাদি। আসলেই কি চাঁদে জমি কেনা যায়? আপনিও বিক্রি করতে পারবেন।
প্রথম দেখায় মনে হয় ইশ আমিও যদি চাঁদের জমির মালিক হতে পারতাম। কিন্তু আসলেই কী চাঁদের জমি কেনা যায়? চলুন প্রথমে চাঁদের জমি বিক্রি করে এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে জেনে নিই।
ডেনিস হোপ হলো একজন মার্কিন নাগরিক। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি চাঁদে জমি বিক্রি শুরু করেছেন। ডেনিস হোপের চাঁদে জমি বিক্রি করার সংস্থাটির নাম হলো ‘লুনার অ্যাম্বাসি‘। এর বাংলা অর্থ হলো চন্দ্র দূতাবাস। এই সংস্থাটির মাধ্যমেই ডেনিস হোপ এর কাছ থেকে সবাই চাঁদের জমি ক্রয় করে। যদিও চাঁদের জমি বলে কথা তবুও দাম রয়েছে সাধ্যের মাঝেই,প্রতি একর জমির দাম ২৪.৯৯ থেকে শুরু করে ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত।
বাংলাদেশি টাকায় মাত্র ২ হাজার টাকা। ডেনিস হোপ জানায় এই ইতিমধ্যে তিনি বিশ্ব জুড়ে ৬০ লাখেরও অধিক ক্রেতার কাছে চাঁদের ৬১.১ কোটি একর জমি বিক্রি করেছে। এসব ক্রেতাদের তালিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ,জিমি কাটার ও রোনাল্ড রিগ্যান সহ ৬৭৫ জন নামী তারকাও রয়েছে। আবার ম্যারিয়ট হিলটনের মতো বড় বড় হোটেলও জমি কিনেছেন ডেনিস হোপ এর কাছ থেকে। ডেনিস হোপ এর মতে, চাঁদে এসব জমির মালিকানা নাকি আইনত বৈধ। আবার এসব জমির আইনি নথি, দলিল,মোজা পরচাও রয়েছে।
তবে প্রশ্ন হলো ডেনিস হোপ এই কাজ কিভাবে করছে আর মানুষজন তাকে বিশ্বাসই বা কেনো করছে?
ডেনিস হোপ রাস্ট্রবিজ্ঞান এর একটি শর্তকে হাতিয়ার বানিয়ে নিজেকে চাঁদের মালিক দাবি করছে আর এইভাবে গণহারে চাঁদের জমি বিক্রি করছে।
১৯৬৭ সালে জাতিসংঘের একটি আইন ফাঁস হয়, সেটি ছিল,”বিশ্বের কোনো দেশ বা কোনো দেশের রাস্ট্র প্রধান সৌরজগতের কোনো মহাজাগতিক বস্তুর উপর নিজেদের মালিকানা বা আইনি সত্ত্ব দাবি করতে পারবে না। ” ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই আইনে বিশ্বের সব দেশ সম্মতি দিয়েছে।
সেই আইনে কোনো দেশ বা রাস্ট্র প্রধান উল্লেখ থাকলেও ‘কোনো ব্যাক্তি মহাজাগতিক বস্তুর উপর নিজের মালিকানা বা আইনি দাবি করতে পারবে না’ সে ব্যাপারে কোনো কিছু উল্লেখ ছিল না। আর ডেনিস হোপ সেই আইনের সুযোগ নিয়ে ১৯৮০ সালে তিনি জাতিসংঘকে একটি চিঠি পাঠায় যেখানে তিনি নিজেকে চাঁদ এবং এর খনিজ সম্পদের মালিকানা দাবি করেন। তবে জানা গেছে ১৯৮০ সালে পাঠানো চিঠির জবাব এখনো আসে নি। কথায় আছে “নিরবতা সম্মতির লক্ষণ ” সেই ভাবনা থেকেই ডেনিস হোপ মনে করেন যে জাতিসংঘ তার প্রস্তাবে রাজি। সেখান থেকেই ডেনিস হোপ আইনত চাঁদের জমি বিক্রি করা শুরু করেন।
কিন্তু ডেনিস হোপের এই ঘটনার একটা বিরাট ফাঁক রয়ে গেছে। ডেনিস হোপ যদি জাতিসংঘের আইনের ফাঁককে কাজে লাগিয়ে নিজেকে চাঁদের মালিক দাবি করতে পারে তাহলে প্রত্যেকটা মানুষই নিজেকে চাঁদের মালিক দাবি করতে পারবে। কারণ ডেনিস হোপের আইনের মারপ্যাঁচ মতে কোনো রাষ্ট্র মালিকানা দাবি করতে না পারলেও যেকোনো ব্যক্তি মালিকানা নিজের বলে দাবি করতে পারবে।
সে ক্ষেত্রে চাঁদের জমির মালিক হিসেবে ডেনিস হোপ যদি জমি বিক্রি করতে পারেন তাহলে সেই একই আইনে চাঁদের মালিক আপনিও। পৃথিবীর সব মানুষেরই চাঁদের জমির ওপর সমান কতৃত্ব রয়েছে। তাহলে আপনি চাঁদের জমি কিনতেই বা কেন যাবেন? ব্যাপারটা এমন হয়ে গেল যে আপনার নিজের জিনিসই আপনি আবার টাকা দিয়ে আরেকজনের কাছ থেকে কিনছেন। যা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং, ডেনিস হোপ এর কাছ থেকে চাঁদের জমি কেনার কোনো মানেই হয় না।
এতক্ষণে হয়তো বুঝেই গেছেন চাঁদের জমি কেনা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই বলে অন্যদেরকে বোকা বানাতে নিজেকে মালিক ঘোষণা করে চাঁদের জমি বিক্রি করার ব্যবসায় যেন আবার না জড়িয়ে পড়েন।
Tamanna Rashid/ Own Correspondent