পানির অপর নাম জীবন। পানির অস্তিত্ব আছে বলেই আমরা এই ভূপৃষ্ঠে বাস করতে পারছি। পানি যখন দূষিত বা অনিরাপদ হয় তখন আমরা তা বিভিন্নভাবে বিশুদ্ধ করতে পারি যেমন ফুটিয়ে, ফিল্টারিং, ব্লিচিং বা ফিটকিরির মাধ্যমে। ঠিক এই কাজটাই করবে ‘গিলবার্ট’ নামক একটি মাছ। অবাক হচ্ছেন? মনে প্রশ্ন আসছে হয়তো, এই মাছের কি আসলেই অস্তিত্ব রয়েছে? উত্তর হচ্ছে, না। গিলবার্ট হচ্ছে মূলত কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা মাছের মতো দেখতে একটা রোবট মাছ মাত্র।
গিলবার্ট নামক এই রোবট মাছ-টি পানিতে অন্যান্য মাছের মতোই স্বাধীনভাবে চলাফেরা করবে। তবে এই মাছের রয়েছে বিশেষ বিশেষত্ব। পানিতে প্লাস্টিকের কিছু ছোট কণা থাকে যেগুলোকে মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়ে থাকে। সেগুলো আকারে এতই ছোট যে খাবারের সময় আমাদের চোখে পড়ে না। একটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণার ব্যাস হতে পারে বড়জোর ০.২ ইঞ্চি বা ৫ মিলিমিটার। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। যন্ত্র দিয়ে তৈরি রোবট মাছ সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করবে। মাছটিকে পানিতে ছেড়ে দিলে ওই মাইক্রোপ্লাস্টিককে গিলে নিয়ে শুদ্ধ পানি পেট থেকে ছেঁকে বের করবে এই রোবট।

যুক্তরাজ্যের University of Surrey এর গবেষক শিক্ষার্থী এলেনর ম্যাকিন্টোশ ‘গিলবার্ট’ নামের মাছটি আবিষ্কার করেছেন। তিনি মূলত ক্যালিফোর্নিয়ার কিন্তু বড় হয়েছেন যুক্তরাজ্যে। তিনি University of Surrey এর রসায়ন বিজ্ঞানের ছাত্র। আবিষ্কারকের দাবি ‘গিলবার্ট’ মাছটি প্লাস্টিকের কণা ছেঁকে পানি পরিষ্কার করবে।
এলেনর ম্যাকিন্টোশ মাছ সম্পর্কে বলেন “আমি এটিকে এমনভাবে ডিজাইন করার চেষ্টা করেছি যাতে এটি অনেকটা মাছের ফুলকার মতো কাজ করে।“
University of Surrey বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্য ন্যাচারাল রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় আয়োজিত প্রতিযোগিতায় রোবট মাছটি ইতোমধ্যে পুরস্কার জিতে নিয়েছে।
যেখানে অন্যান্য জীবিত মাছ নিজেদের বাঁচার তাগিদে কানকো ব্যবহার করে, সেখানে গিলবার্ট পানি বিশুদ্ধ করার জন্য কৃত্রিম ভাবে বানানো কানকো ব্যবহার করবে। সেই কানকোর ছাঁকনিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছেঁকে পানি পরিষ্কার করবে। মজার বিষয় হচ্ছে, রোবট মাছটি সম্পূর্ণ মাছের মতোই চলাফেরা করে কাজটি করবে।
এই রোবটটি কিভাবে কাজ করবে সেটি জানতে গেলে এলেনর ম্যাকিন্টোশ বলেন “মুখ খোলা এবং ফুলকা বন্ধ থাকলে, পানি এবং কণা মাছের দেহের মধ্যে গহ্বরে যায়। এর পরে, মুখ বন্ধ হয়ে যায়, ফুলকা খুলে যায়। পরবর্তীতে গহ্বরটি সঙ্কুচিত হয়ে যায়, ফলে ফুলকা দিয়ে পানি ফিল্টারের মাধ্যমে বের হয়ে যায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই মাছের দেহের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক গুলো আটকে থাকবে।“
সত্যিকার অর্থে মাইক্রোপ্লাস্টিক ভেঙ্গে যেতে শত শত বা হাজার বছর সময় লাগে। ফলে ইকোসিস্টেমের উপর এর পরিবেশগত প্রভাব পড়ে। পরিবেশগত ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তির জন্যেই মূলত রোবটটি বানিয়েছেন গবেষক, যা সত্যিই অসাধারণ।
প্রতিবেদক/ সাদমান সিফাত সৌমিক
তথ্যসূত্র: ফক্স ওয়েদার, এনডিটিভি, নিউ অ্যাটলাস, University of Surrey
+1
+1
+1
+1
+1
1
+1
+1