ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য সেন্টার ফর নিউরোসাইন্স বিভাগের গবেষকেরা সম্প্রতি মাতৃত্বকালীন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং নিউরোডেভেলপমেন্ট এর মধ্যকার জটিলতা সম্পর্কে নতুন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। একটি গবেষণায় গর্ভকালীন সময়ে মায়ের মস্তিষ্ক, আচরণ ও ইমিউনিটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে, তারা কোনো ইনফেকশন দ্বারা আক্রান্ত হলে তা গর্ভের বাচ্চার উপর কিছুটা প্রভাব ফেলবে যা পরবর্তীতে সিজোফ্রেনিয়া বা অটিজমের মত রোগের সৃষ্টি করবে।
এ গবেষণার সিনিয়র লেখক এবং গবেষক প্রফেসর কিম ম্যাকএলস্টার বলেন, “এই রোগগুলোর কারণ কি তা নিয়ে আমাদের কোনো ভালো ধারণা নেই। তবে গর্ভকালীন সময়ে মায়ের সংক্রমণ বা ইনফেকশন শিশুদের এ রোগের ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই আমাদের গবেষণাটি কোন গর্ভবতীটি ঝুঁকিতে রয়েছে এবং সেই ঝুঁকির কারণ এবং বংশগত রোগের কোনো হস্তক্ষেপ আছে কিনা ও তা প্রতিরোধের উপায় গুলো কিভাবে আবিষ্কার করা যায় তার ওপর দৃষ্টিপাত করছে।”
কিছু সূত্রমতের ভিত্তিতে ধারণা করা হয়েছে যে, গর্ভকালীন সময়ে ইনফেকশনের সাথে নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার যা ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারী এর কারণ তার সাথে সংযুক্ততা থাকতে পারে। কয়েক দশক ধরে সেই প্রাদুর্ভাবের সময় জন্ম গ্রহণ করা শিশুদের মানসিক অসুস্থতার হার অনেক বেড়েছে বলে জানা গেছে।
গবেষকরা ইঁদুর নিয়ে একাধিক গবেষণার পর প্যাথোজেনিক ইনফেকশন থেকে গর্ভবতী মায়েদের প্রতিরোধক্ষমতা কিভাবে তাদের বংশকে প্রভাবিত করে তার মাঝে সম্পর্ক আবিষ্কার করেছেন। মানুষের মধ্যে গর্ভধারণের মডেল হিসেবে ম্যাকএলিস্টার এবং তার সহকর্মীরা গর্ভবতী ইঁদুরগুলোকে একটি ডাবল স্ট্র্যান্ড আরএনএ অনুর সাহায্যে চিকিৎসা করেছিলেন।
তবে করোনা ভাইরাসের মতো এই সংক্রামক ভাইরাসগুলোর জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল ফরমেটটি অনেক টিপিক্যাল। এই আরএনএ অনুর উপস্থিতি থাকার জন্য শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া ক্যাস্কেডগুলো কে সরিয়ে দেয়। সংক্রমণ প্রতিরোধের এই প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গর্ভবতী ইঁদুরের রক্ত প্রবাহে প্রচুর পরিমাণে ইন্টারলিউকিন-৬ বা আইএল-৬ নির্গত হয়।
গবেষণায় ব্যবহৃত গর্ভবতী ইঁদুরগুলো তাদের বংশধরদের জন্ম দেওয়ার পরে গবেষকেরা সেই ইঁদুরগুলোর নিউরোডেভেলপমেন্টের অগ্রগতি ট্র্যাক করেন। প্রায় দুই মাস বয়সে পুনরাবৃত্তিমূলক ক্রিয়া এবং একটি নির্দিষ্ট হিমায়িত অবস্থানে তাদের অস্বাভাবিক স্নায়বিক বিকাশের উপস্থিতি নির্ধারণ করার জন্য তাদের একাধিক পরীক্ষার মুখোমুখি করা হয়। দলটি প্রথমবারের মতো প্রদর্শন করে যে, গর্ভাবস্থায় ইঁদুরগুলোর মধ্যে আইএল-৬ স্তরের একটি স্পাইক পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে যা টিপিক্যাল আচরণগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ম্যাকএলিস্টার বলেন- “এখন আমরা কোন ইদুঁরটি ঝুঁকিতে আছে সেটি বলতে পারবো বা ভবিষ্যদ্বানী করতে পারবো। মায়ের মধ্যে সুরক্ষা সংকেতের নির্দিষ্ট লক্ষণগুলো কিভাবে বংশের স্বতন্ত্র ফলাফলের কারণ ঘটায় তা আমরা দেখতে চাই”। পরবর্তী ধাপগুলো সম্ভাব্য জরুরি বায়োমার্কারের পথে নিয়ে যাবে যার সাহায্যে ভ্যাক্সিনেশন এবং অন্যান্য মেডিকেল সংশ্লিষ্ট কাজের মাধ্যমে গর্ভবতী মহিলাদের আরো ভালোভাবে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
রাদিয়া আহমেদ লুবনা/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
+1
+1
+1
+1
+1
+1