আমাদের কাছে ক্যান্সার একটি আতংকের নাম। ক্যান্সারের কথা শুনলেই মৃত্যুভয় চলে আসে মনে। অথচ পর্যাপ্ত পরিচর্যা করলে এটি জয় করা কঠিন কিছু নয়।
প্রাইমারী টিউমার উন্মোচনের মাধ্যমেই শরীরের ক্যান্সারের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ক্যান্সারের স্টেজগুলোর উপর সবচেয়ে প্রভাব ফেলে প্রাইমারী টিউমারের আকার। তাছাড়া লসিকা গ্রন্থি ও দেহের অন্যান্য অংশে ক্যান্সার কোষগুলো কিভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, কোন কোন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে তার উপর ভিত্তি করে ক্যান্সারের স্টেজগুলো আলাদা করা হয়।
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত স্টেজিং নির্ধারণ করা হয়। স্টেজিং নির্ধারণের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে টিএনএম স্টেজিং এবং এক থেকে চার স্কেল পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়।
কারো ক্যান্সার ধরা পড়লে, প্রথমেই ক্যান্সারের আকার ও সারাদেহে ছড়িয়ের পড়ার প্রবণতা পরিমাপ করতে হয়। মূলত এটিকে বিভিন্ন স্টেজের মাধ্যমে আলাদা করতে হয়।
টিএনএম স্কেলিং:
টিএনএম স্কেলিং বেশির ভাগ ক্যান্সারেই পরীক্ষিত একটি স্টেজিং সিস্টেম। এটি নির্নয়ের ফ্যাক্টরগুলি হচ্ছে প্রাইমারী টিউমার ( টি ক্যাটাগরি), লসিকা পর্বের ব্যাপ্তি ( এন ক্যাটাগরি) এবং ডিস্ট্যান্ট মেটাস্টাসিস এর উপস্থিতি / অনুপস্থিতি (এম ক্যাটাগরি)
টি ক্যাটাগরি (টিউমার সাইজ): বড় আকার অথবা টিস্যুগুলার ক্ষত মূলত এই ক্যাটাগরির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
এন ক্যাটাগরি (নোড বা পর্ব): এটির মাধ্যমে লসিকা পর্বে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে কিনা বুঝানো হচ্ছে। লসিকা পর্বের আকার, কতগুলো লসিকা পর্ব যুক্ত আছে এবং লসিকা পর্বে কতটুকু ছড়িয়ে পড়ছে এই ক্যাটাগরির সাথে সম্পর্কযুক্ত।
এম ক্যাটাগরি (মেটাস্টাসিস): ক্যান্সার বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা এই ক্যাটাগরির সাথে সম্পর্কযুক্ত। উল্লেখ্য মেটাস্টাসিস উপস্থিত থাকলে এম১ ক্যাটাগরি এবং মেটাস্টাসিস অনুপস্থিত থাকলে এম০ ক্যাটাগরি।
মূলত ক্যান্সারের প্রকারভেদের উপর ভিত্তি করে স্টেজগুলো নির্ধারণ করা হয়৷ যেমন ফুসফুসের ক্যান্সারের অবস্থা ৪ টি স্টেজের মাধ্যমে নির্নয় করা হয়
স্টেজ ১: আক্রান্ত কোষগুলো শুধুমাত্র ফুসফুসে দেখা যায় এবং লসিকা পর্বে এখনো ছড়িয়ে পড়েনি।
স্টেজ ২: আক্রান্ত কোষগুলো ফুসফুস এবং লসিকা পর্বে দেখা যায়। এই স্টেজে রোগীর প্রাইমারি ক্যান্সার শনাক্ত হয়।
স্টেজ ৩: আক্রান্ত কোষগুলো ফুসফুস, লসিকা পর্ব ও আশেপাশের কোষগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
স্টেজ ৪: আক্রান্ত কোষগুলো ফুসফুস, লসিকা পর্বের পাশাপাশি ফুসফুসের তরল এলাকা, রক্তের মাধ্যমে অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্ন কারণে ক্যান্সার স্টেজিং-এর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। প্রথমত, এটি রোগীর ভবিষ্যৎ পরিণতি ও ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ সম্পর্কে বিস্তর ধারণা দেয়।
দ্বিতীয়ত স্টেজিং এর উপর নির্ভর করেই ক্যান্সার রোগীর কি ধরণের চিকিৎসা প্রয়োজন তা বুঝা যায়। সার্জারী, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি,ইমিউনোথেরাপির মত ট্রিটমেন্টগুলো শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্টেজেই প্রয়োজন হয়৷ ক্যান্সারের লক্ষণ দেখা দেয়ার প্রারম্ভিক পর্যায়, অর্থাৎ ক্যান্সার কোষগুলো তখনও সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েনি, অথবা লসিকা পর্বের অল্পকিছু জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে, সেই ক্ষেত্রে রোগীকে নিয়মিত সার্জারী করতে হয়। কিন্ত ক্যান্সার কোষগুলো শরীরের দূরবর্তী স্থানগুলো সহ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে অর্থাৎ মেটাস্টাসিস দেখা দিলে কেমোথেরাপির মত বিভিন্ন থেরাপি দিতে হয়।
তাছাড়া প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়্যালের মাধ্যমে পরীক্ষিত নতুন নতুন ড্রাগ উদ্ভাবন হচ্ছে যা ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। রোগীরা বিভিন্ন স্টেজে এসব ড্রাগ ব্যবহার করে থাকেন।
ইকবাল হোসেন নাফিজ/ নিজস্ব প্রতিবেদক