কৌতূহল মানুষের একটি সহজাত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়, আপনি এমন কোনও বুদ্ধিমান ব্যক্তিত্ব খুঁজে পাবেন না, যিনি কৌতূহলী নন। টমাস আলভা এডিসন, লিওনার্দো দা ভিঞ্চি, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বা রিচার্ড ফাইনম্যান, তারা সবাই ছিলেন কৌতূহলী। রিচার্ড ফাইনম্যান তার কৌতূহল থেকেই আসা অ্যাডভেঞ্চারের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন।
কৌতূহল কেন গুরুত্বপূর্ণ?
এর চারটি কারণ রয়েছে:
১.এটি নিষ্ক্রিয়তার পরিবর্তে আপনার মনকে সক্রিয় করে তোলে।
কৌতূহলী লোকেরা সর্বদা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে এবং মনে মনে উত্তরগুলি সন্ধান করে। তাদের মন সবসময় সক্রিয় থাকে। যেহেতু মন একটি পেশির মতো যা ক্রমাগত অনুশীলনের মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, কৌতূহল দ্বারা সংঘটিত মানসিক অনুশীলন আপনার মনকে আরও দৃঢ় এবং শক্তিশালী করে তোলে।
২. এটি আপনার মনকে নতুন ধারণাগুলির প্রতি পর্যবেক্ষণশীল করে তোলে।
আপনি যখন কোনও কিছুর বিষয়ে আগ্রহী হন, তখন আপনার মন এর সাথে সম্পর্কিত নতুন ধারণা সৃষ্টি করে। কৌতূহলী না হলে ধারণাগুলি ঠিক আপনার সামনে আসার পরেও আপনি সেগুলি মিস করতে পারেন। কারণ, আপনার মন সেগুলি চিনতে প্রস্তুত নয়। একটু ভাবুন, কৌতূহলের অভাবে কত দুর্দান্ত ধারণা হারিয়ে যেতে পারে?
৩. এটি নতুন জগত এবং সম্ভাবনা খুলে দেয়।
কৌতূহলী হয়ে আপনি এমন নতুন দুনিয়া এবং সম্ভাবনাগুলি দেখতে সক্ষম হবেন যা সাধারণত দেখা যায় না। এগুলি স্বাভাবিক জীবনের পৃষ্ঠের আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে। এই পৃষ্ঠের নীচে দেখতে এবং এই নতুন পৃথিবী এবং সম্ভাবনাগুলি আবিষ্কার করতে আগ্রহী মন লাগে।
৪. এটি আপনার জীবনে উত্তেজনা এনে দেয়।
উৎসাহী মানুষের জীবন বিরক্তি থেকে অনেক দূরে। তাদের চিন্তায় সর্বদা নতুন জিনিস থাকে যা তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, সেখানে সবসময় নতুন মানসিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। উদাস হওয়ার পরিবর্তে কৌতূহলী মানুষদের দুঃসাহসী জীবন থাকে।
এখন, কৌতূহলের গুরুত্ব জেনে আপনার কীভাবে আরও কৌতূহলী হতে হবে তা শিখতে হবে।
কিভাবে কৌতূহলের বিকাশ করবেন?
কৌতূহল বিকাশের জন্য এখানে কিছু টিপস রয়েছে:
১.একটি মুক্ত মন রাখা:
আপনার যদি কৌতূহলী মন থাকতে হয় তবে এটি অপরিহার্য। শিখতে উন্মুক্ত থাকুন, শিখুন এবং পুনরায় শিখুন। আপনি জানেন এবং বিশ্বাস করেন এমন কিছু জিনিস ভুল হতে পারে। কিন্তু আপনাকে এই সম্ভাবনাটি মেনে নিতে এবং আপনার মতামত পরিবর্তন করতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
২.সমাপ্তি হিসাবে কোনো জিনিস গ্রহণ করবেন না:
আপনি যদি পৃথিবীকে আরও গভীরভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা না করে যেমন দেখতে পাচ্ছেন, তেমনই গ্রহণ করেন তবে অবশ্যই আপনি ‘পবিত্র কৌতূহল’ হারাবেন। কোনো জিনিসকে “এখানেই শেষ” এই হিসাবে গ্রহণ করবেন না। আপনার চারপাশের যা আছে চিন্তার মাধ্যমে তার পৃষ্ঠের নীচে আরও গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
৩. নিরলসভাবে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করুন:
পৃষ্ঠের নীচে গভীর খননের একটি সঠিক উপায় হলো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা। এটি কী? কেন সেভাবে তৈরি করা হয়? এটি কখন তৈরি হয়েছিল? কে এটা আবিষ্কার করেছে? কোথা থেকে এটা আসে? এটা কিভাবে কাজ করে? কী, কেন, কখন, কে, কোথায়, এবং কীভাবে এই শব্দগুলি কৌতূহলী মানুষের সেরা বন্ধু।
৪. বিরক্তিকর হিসাবে কিছু চিন্তা করবেন না:
আপনি যখনই কোনও জিনিসকে বিরক্তিকর হিসাবে চিহ্নিত করবেন তখন আপনি সম্ভাবনার আরও একটি দরজা বন্ধ করে দিবেন। কৌতূহলী লোকেদের বিরক্তিকর কিছু বলার সম্ভাবনা নেই। পরিবর্তে, তারা সর্বদা “এটি একটি উত্তেজনাপূর্ণ নতুন দরজা” এমন হিসাবে দেখেন।
৫. শেখার বিষয়টিকে মজাদার কিছু হিসাবে দেখুন:
যদি আপনি শেখাটিকে বোঝা হিসাবে দেখেন তবে এমন কোনও উপায় নেই যাতে করে আপনি কোনও কিছুর গভীরে খনন করতে পারবেন বা চাইবেন। এটি কেবল বোঝাটিকে ভারী করে তুলবে। তবে আপনি যদি শিখাকে মজাদার কিছু মনে করেন তবে আপনি স্বাভাবিকভাবেই আরও গভীরে খনন করতে চাইবেন। তাই মজা এবং উত্তেজনার চশমা দিয়ে জীবন দেখুন এবং শেখার প্রক্রিয়া উপভোগ করুন।
৬.বিভিন্ন ধরণের পড়া পড়ুন:
কেবল একটি বিষয়ে খুব বেশি সময় ব্যয় করবেন না; অন্য জগতের দিকে একবার নজর দিন। এটি আপনাকে অন্যান্য জগতের সম্ভাবনা এবং উত্তেজনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে। যা এগুলিকে আরও অন্বেষণ করতে আপনার আগ্রহের কারণ হতে পারে। এটি করার একটি সহজ উপায় হলো বিভিন্ন ধরণের বই পড়া। কোনও নতুন জ্ঞান অন্বেষণের জন্য কোনও বই বা ম্যাগাজিন বেছে নেওয়ার চেষ্টা করুন এবং এটিকে একটি নতুন একটি জগতের প্রতি এডভেঞ্চার ধরে নিয়ে আপনার মনের খোরাক হিসেবে গ্রহণ করুন।
আছফারুর রহমান/ নিজস্ব প্রতিবেদক