বিজ্ঞানের গবেষণা আমাদের অনেক নতুন নতুন তত্ত্ব দেয়, যার মধ্যে কিছু তত্ত্ব আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্য। এর মধ্যে একটি হলো কোয়ান্টাম ফিজিক্স।
কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর কথা বললে সবার আগে যা মাথায় আসে তা হলো শ্রোডিঞ্জারের বিড়ালের বিখ্যাত এক্সপ্রেরিমেন্ট। তার ফলাফল হলো একটি বিড়াল একই সময়ে জীবিত এবং মৃত অবস্থায় থাকে যতক্ষন পর্যন্ত না কেউ দেখে নিচ্ছে বিড়াল টা কি অবস্থায় আছে। এই এক্সপেরিমেন্ট এর ফলাফল অদ্ভূত লাগলেও কোয়ান্টামের এমন ফলাফল ও তত্ত্ব ব্যবহার করে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করার জন্য কাজ করছে, যা কিনা ভবিষ্যতে আমাদের কোয়ান্টাম ইন্টারনেটের পথে নিয়ে যাবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার নিয়ে সর্বপ্রথম কাজ করা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। যা ছিলো একেবারে প্রথম ধাপ। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে বিভিন্ন ভাবেই সাধারণ কম্পিউটার থেকে আলাদা করা যায়। প্রথমত, সাধারণ কম্পিউটার গুলো তৈরি করা হয় বিট এর ধারনার উপর নির্ভর করে। কম্পিউটারের ভাষায় 0 এবং 1 কে বিট বলা হয়ে থাকে। অন্যদিকে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার কোয়ান্টাম বিট ব্যবহার কর হয়েছে যাকে সংক্ষেপে কিউবিট (qubit) বলা হয়। 0s এবং 1s কে কোয়ান্টাম বিট বলে সম্বোধন করা হয়।
এখানে কোয়ান্টাম বিট এবং সাধারন কম্পিউটার এর বিট একই মনে হতে পারে। কিন্তু কোয়ান্টম বিট 0s এবং 1s একই সময়ে দুটোই এক সাথে সংমিশ্রণ হয়ে অবস্থান করতে পারবে। অনেকটা শ্রোডিঞ্জারের বিড়ালের বিখ্যাত এক্সপ্রেরিমেন্ট এর ফলাফলের মত (বিড়াল একই সময়ে জীবিত এবং মৃত থাকতে পারে) কাজ করে কোয়ান্টামের বিট গুলো ।
অপরদিকে, সাধারণ কম্পিউটার বিট গুলো একই সময়ে দুটো এক সাথে অবস্থান করতে পারবে না অর্থাৎ 0 থাকতে হবে না হয় 1 । কিছুদিন আগেই গুগল কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছিলো,”এই কম্পিউটার সাধারন কম্পিউটার এর থেকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন গুন দ্রুত হবে। তাছাড়া, এই কম্পিউটার বিভিন্ন ধরনের কঠিন সমস্যার সমাধান অর্থাৎ কোড ব্রেকিং করতে পারবে।”
তবে, এখানে সমস্যা হলো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিট গুলো খুবই সংবেদনশীল হয়। খুব বেশি তাপমাত্রায় কোয়ান্টাম বিটে সংরক্ষিত তথ্য গুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুলো তাপমাত্রা কম এমন জায়গায় রাখতে হবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদান করতে প্রয়োজন হবে কোয়ান্টাম ইন্টারনেট। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের এই তথ্য আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে বলা হয় কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন।
সাম্প্রতিক Caltech (California Institute of Technology) এর নেতৃত্বে অনেক প্রতিষ্ঠানের সহোযোগিতায় দীর্ঘ দূরত্বের কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন পরীক্ষায় তারা সফল হয়। তবে, কোয়ান্টাম ইন্টারনেট শুধু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্ষেত্রেই কাজ করবে। তাছাড়া, এই ইন্টারনেট যেভাবে অন্যান্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার এর সাথে কার্যকলাপ করবে তা এক কথায় বলতে গেলে হ্যাক করা যাবে না অর্থাৎ আনহ্যাকেবল।
বর্তমানে আমরা এখন প্রায় কোয়ান্টাম কম্পিউটার ইতিহাসের প্রথম দিকে অবস্থান করছি। কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিষয়টা এখনও অনেকটা অস্পষ্ট হলেও, একদিন হয়ত পৃথিবীর প্রযুক্তিতে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তার জন্য আমাদের আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে।
আল আমিন/ নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ সিএনএন