কেমন হবে যদি অস্ত্রোপচার না করেই শুধুমাত্র মুখের ব্যাকটেরিয়ার নমুনা থেকে নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া চিহ্নিত করার মাধ্যমে কোলন ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়!
কোলন হলো বৃহদান্ত্রের একটি অংশ যা পানি ও পরিপাককৃত খাদ্যের অবশিষ্টাংশ শোষণে ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কখনও কখনও অস্বাভাবিক কোষপুঞ্জ কোলনের বহিরাবরণে বৃদ্ধি পায় এবং ক্যান্সারে পরিণত হয়। কোলন ক্যান্সার তুলনামূলকভাবে সাধারণ হলেও কিন্তু চিহ্নিত করা কঠিন। এটি শুধুমাত্র কোলনোস্কোপি বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে। অল্পবয়সী লোকদের মধ্যে কোলন ক্যান্সার একটি সাধারণ ঘটনা, এখনও পর্যন্ত এই রোগটি কীভাবে কাজ করে এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় সে সম্পর্কে আরও জানার জন্য গবেষক মহলে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
আগে মনে করা হতো শুধুমাত্র একপ্রকারের ব্যাকটেরিয়ার কারণে কোলন ক্যান্সার সংঘটিত হয়। কিন্তু ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার সেন্টারের জীববিজ্ঞানী, সহ-সিনিয়র গবেষক সুসান বুলম্যান (Susan Bullman) দ্বারা পরিচালিত এবং নেচার জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, Fusobacterium nucleatum এর একটি উপ-প্রজাতির মধ্যে একটি নির্দিষ্ট উপপ্রকার কোলন ক্যান্সারের বৃদ্ধির সাথে জড়িত। Fusobacterium nucleatum একটি দাঁতের মাড়ির রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া যা সাধারণত মানুষের মুখে পাওয়া যায়।
গবেষণার প্রয়োজনে প্রায় ১০০ জন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে গবেষণা দলটি কোলন টিউমার টিস্যু সংগ্রহ করেছিলেন। দলটি প্রথমে কোলন টিউমারে পাওয়া F. nucleatum-এর জিনোমগুলোকে মুখের মধ্যে পাওয়া ব্যাকটেরিয়ার সাথে তুলনা করার জন্য বিশ্লেষণ করেছিলেন। কোলন ক্যান্সারের সাথে জীবাণুর সম্পর্ক আরও অন্বেষণ করার জন্য, বুলম্যান এবং তার সহকর্মীরা কোলন ক্যান্সার টিউমারের মধ্যে F. nucleatum উপর জিনোম সিকোয়েন্সিং পরিচালনা করেন এবং অন্ত্রের পরিবেশকে কীভাবে জীবাণু প্রভাবিত করে তা দেখেছিলেন।
তারা দেখতে পান যে, কিছু রোগীর টিউমারে উপস্থিত F. nucleatum মাইক্রোবায়োমের (অণুজীবের পরিবেশ) উপর আধিপত্য বিস্তার করে। তারা পরীক্ষা করা টিস্যু নমুনার প্রায় অর্ধেক সাব-টাইপ FNA C2 এর উচ্চ পরিমাণে আবিষ্কার করেছেন । তাছাড়া, কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা প্রায় ৩০% মলের নমুনায় FNA C2 এর উপস্থিতি দেখিয়েছেন। একটি জেনেটিক বিশ্লেষণও প্রকাশ করেছে যে কীভাবে এই উপপ্রকারটি মুখ থেকে এত দূরে বেঁচে থাকতে পারে। বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন যে এটির নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা এটিকে বৃহদন্ত্রে নিয়ে যেতে পারে এবং মৃত্যু ছাড়াই পেটের অ্যাসিড সহ্য করাতে পারে।
গবেষণাটি ব্যাকটেরিয়া কীভাবে কাজ করে তার কিছু দিকও প্রকাশ করেছে। তারা কোলন ক্যান্সার সংশ্লিষ্ট কোষের সাথে লেগে থাকে এবং এটি ছড়িয়ে পড়ে। ক্যান্সার কোষগুলিকে এমনভাবে আক্রমণ করতে এবং পরিবর্তন করতে পারে যা ক্যান্সারের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে।
American Cancer Society ট্রাস্টেড সোর্স অনুসারে, কোলন ক্যান্সারের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. অন্ত্রের অভ্যাসের পরিবর্তন, যেমন ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলাশয় সংকুচিত হওয়া যা কয়েক দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
২. অল্প মলত্যাগ যা বারবার মলত্যাগের অনুভূতি ঘটায়।
৩. উজ্জ্বল লাল রক্তের সাথে রেকটাল রক্তপাত।
৪. মলের সাথে রক্ত যাওয়া, যা এটিকে গাঢ় বাদামি বা কালো দেখাতে পারে।
৫. ক্র্যাম্পিং বা পেটে (পেট) ব্যথা।
৬. দুর্বলতা এবং ক্লান্তি।
৭. চেষ্টা না করেও ওজন কমে যাওয়া।
যদিও যে কেউ কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে, National Cancer Institute ট্রাস্টেড সূত্র অনুসারে কিছু লোকের ঝুঁকি বেশি। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে:
১. কোলন বা রেকটাল ক্যান্সারের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে বা অতীতে কোলন, মলদ্বার বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার হয়েছে।
২. ১ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় বা অস্বাভাবিক কোষ আছে এমন পলিপ থাকা।
৩. আট বা তার বেশি বছর ধরে দীর্ঘস্থায়ী আলসারেটিভ কোলাইটিস (chronic ulcerative colitis) বা ক্রোনস ডিজিজ (Crohn’s disease) ছিল।
৪. প্রতিদিন তিনবার বা তার বেশি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় গ্রহণ করা।
৫. ধূমপান করা।
৬. স্থূলতা।
Fusobacterium nucleatum এর কোন নির্দিষ্ট উপ-প্রকার কোলন ক্যান্সারের সাথে জড়িত তা জানতে পারার কারণে বিজ্ঞানীরা নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে পারবেন বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
উক্ত ব্যাকটেরিয়ার ম্যাকানিজমকে ব্যবহার করে অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিয়াজুল ইসলাম / নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকান, হেলথ.কম, মেডিকেল নিউজ টুডে