সর্বোত্তম নাগরিক সুবিধা ও নাগরিকদের উন্নত জীবনযাত্রা প্রদানে দক্ষিণ কোরিয়া আধুনিক বিশ্বে এগিয়ে। উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মাধ্যমে আজ দক্ষিণ কোরিয়া উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে আহরণ করছে।
কৃত্রিম ত্বক, কৃত্রিম উপগ্রহ, কৃত্রিম মোবাইল কভার সহ আরো অনেক কিছুই বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে ফেলেছে। এবার বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে যাচ্ছে কৃত্রিম সূর্য। যদিও চীনের বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম সূর্য বানিয়েছে ২০১৮ সালের দিকে। কিন্তু এইবার চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়াও কৃত্রিম সূর্য বানাতে সফল হয়েছে।
এখন হয়ত সবার মাথায় আসতে পারে কৃত্রিম সূর্যই কেনো বানানো হচ্ছে? এর কোনো উপকারিতা আছে কি? উত্তরে বলব, হ্যাঁ। এর অবশ্যই উপকারিতা আছে।
কৃত্রিম সূর্য কি?
বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকেই গবেষকদের স্বপ্ন ছিল নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ায় উৎপাদিত শক্তিকে ব্যবহার করা। তবে সময়ের সাথে সাথে এটি একটি কঠিন ধাঁধা হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া দুটো পারমাণবিক নিউক্লিয়াসকে একটি বৃহৎ নিউক্লিয়াসে একীভূত করার মাধ্যমে কাজ করে। এসময় বিক্রিয়াটি থেকে প্রচুর শক্তি নির্গত হয়। এমনকি বিক্রিয়া থেকে নির্গত হওয়া শক্তির পরিমাণ বিক্রিয়া কর্তৃক শোষণকৃত শক্তির পরিমাণ থেকে বেশি হয়। কোরিয়ার “কৃত্রিম সূর্য” হিসাবে পরিচিত “কেএসটিএআর“, এমনই একটি সুপার কন্ডাক্টিং ফিউশন ডিভাইস।
সুপার হট প্লাজমা উৎপাদন এবং স্থিতিশীল করার জন্য এটি একটি ম্যাগনেটিক ফিল্ড বা চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে ব্যবহার করে। এর লক্ষ্য হলো নিউক্লিয়ার ফিউশন থেকে শক্তি উৎপাদনকে বাস্তবতায় রুপ দেওয়া, যা হলো সম্ভবত শক্তির সীমাহীন উৎস। এর ব্যবহার আমাদের জীবনকে আরো শক্তিশালী করার উপায়কে নতুন পথ দেখাবে।
পৃথিবীতে কিভাবে প্রভাব ফেলবে কৃত্রিম সূর্যঃ
কৃত্রিম সূর্য যদি বানানো হয় পৃথিবীতে তবে সেটা আমাদের পুড়িয়ে মারবে না বরং আমরা তার থেকে অফুরন্ত তাপশক্তি নিরাপদে ব্যবহার করতে পারব। যদি কৃত্রিম সূর্য তৈরি করা হয় তবে তা আজকের পৃথিবীর জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জের সহজ সমাধান হবে। আর সেই চ্যালেঞ্জটা হলো বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি তেল-কয়লা পোড়ানো ন্যূনতম মাত্রায় নামিয়ে আনা এবং কার্বনমুক্ত নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার সহজলভ্য করা।
সূর্যের ভিতরে ফিউশন রিঅ্যাকশনে যে প্রচন্ড তাপশক্তি তৈরি হয়, আয়ন সম্মিলিত হওয়ার সময় প্রচন্ড তাপ বের হয় আর এই তাপমাত্রাতেই প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব হয় এবং এই ফিউশন রিঅ্যাকশন থেকে কম শক্তি ব্যবহার করে বেশি শক্তি পাওয়া যায়। পরে এই তাপশক্তি বিদ্যুতে রুপান্তরিত করে কার্বন নিঃসরণের বিপদমুক্ত বিদ্যুৎশক্তি পাওয়া যাবে।
বর্তমানে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ‘নিউক্লিয়ার ফিশন‘ এর উপর নির্ভরশীল। এতে চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম অ্যাটম ভেঙে শক্তি বের হয়। কিন্তু ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন‘ উল্টো কাজটি করে। এটি অ্যাটমকে চাপ দিয়ে সম্মিলিত করে। এর সুবিধা হলো পারমাণবিক বর্জ্যের সমস্যা নেই এবং আকস্মিক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম।
দক্ষিণ কোরিয়ার চৌম্বকীয় ফিউশন ডিভাইস এর কৃত্রিম সূর্যটি ২০ সেকেন্ডের জন্য ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস আয়ন তাপমাত্রায় পৌঁছে গিয়ে কোরিয়া সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ (কেএসটিএআর) ফিউশনটির জন্য একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড তৈরি করেছে। পরীক্ষার তীব্রতা বিষয়টি থেকে বোঝা যায় যে সূূর্য ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসে পুড়ছে, যা তুলনা করে দেখা গেলো যে কেএসটিএআর, সূর্যের চেয়ে ৬.৬ গুন বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলো।
এটি ২০১৮ সালেও একই তাপমাত্রা অর্জন করেছিল। তবে সেটা ছিলো ক্ষাণিকটা সময়ের জন্য যা ছিলো কেবল ১.৫ সেকেন্ড। ২০১৯ সালে এটির তাপমাত্রা পৌছেঁ ছিলো ৮ সেকেন্ডে। দীর্ঘ সময়ের জন্য তাপমাত্রা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর যেটি ২০ সেকেন্ড স্থায়ী ছিলো। কেএফই এর লক্ষ্য হলো ২০২৫ সালের মধ্যে আয়ন তাপমাত্রা ১০০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াসের সাথে ৩০০ সেকেন্ডের জন্য ফিউশনটির জ্বলন বজায় রাখা।
কোরিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ফিউশন এনার্জি (কেএফই) এ রাখা কেএসটিআর হলো সিওল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় (এসএনইউ) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যৌথ গবেষণা প্রকল্প, যা ২৪ নভেম্বর এই মাইলফলক অর্জন করেছে।
সাদিয়া মীম/নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্যসূত্রঃ PHYS.ORG
+1
1
+1
1
+1
+1
6
+1
2
+1
2
+1