মানব মস্তিষ্ককে অনুপ্রেরণা হিসাবে নিয়ে, সিঙ্গাপুরের Nanyang Technological University (NTU Singapore) এর বিজ্ঞানীরা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা -ভিত্তিক “মিনি-মস্তিষ্ক” তৈরি করেছেন, যা ক্ষতিগ্রস্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে তা বুঝতে পারে এবং নিজে নিজেই মেরামত করতে পারে।
সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা তাদের সিস্টেমটি নিয়ে Nature Communications এ একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন।
এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স) সেন্সর নোড ব্যবহার করে এটি তৈরী করা হয়েছে, যা কোনো আঘাত বা ক্ষতি অনুভব করতে পারে এবং পাশাপাশি প্রতিক্রিয়া জানাতেও সক্ষম। সিস্টেমটি মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি সনাক্ত করতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্থ স্থান মেরামত করতে রোবটকে সাহায্য করে।
বর্তমানে রোবটগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তাদের পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য তৈরী করতে সেন্সরের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি উদ্ধারকারী রোবট ধ্বংসাবশেষের নিচে বেঁচে থাকা ব্যক্তিকে সনাক্ত করতে ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন সেন্সর ব্যবহার করে এবং তারপর সেই ব্যক্তির কাছে সেন্সরগুলির দিকনির্দেশের মাধ্যমে পৌঁছে যায়।
বর্তমানের সেন্সরগুলি সাধারণত তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে না তবে এটি বৃহৎ, শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ইউনিটে তথ্যগুলো পাঠায়। ফলস্বরূপ, বর্তমানে প্রচলিত রোবটগুলি সাধারণত প্রচুর পরিমাণে তারযুক্ত হয় যার কারণে দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানায়। তাছাড়া এগুলো যথেষ্ট সংবেদনশীল, যার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতও দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল হতে পারে।
নতুন উদ্ভাবিত সিস্টেমটি কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটে সেন্সর ডেটা প্রেরণের জন্য পুরাতন সিস্টেমের উপর নির্ভর করে না। এর পরিবর্তে রোবটের ত্বকে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন এআই সেন্সরের মাধ্যমে “মিনি-ব্রেইন” তৈরি করে। প্রচলিত রোবোটগুলির তুলনায় এই ক্ষেত্রে তারের প্রয়োজনীয়তা কমে যায় এবং পাঁচ থেকে দশগুণ দ্রুতগতিতে প্রতিক্রিয়া দেখায়।
গবেষণাপত্রটির একজন লেখক রোহিত আব্রাহাম জন বলেছেন, সিস্টেমটি মানুষের ত্বক নিরাময় করে তোলার অনুরূপ নিজেই নিজের নিরাময় করে।
তিনি বলেন, “আমাদের পরীক্ষায়, আমাদের রোবট কার্যকরভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার সময়ই স্ক্র্যাচ এবং ছোটখাটো আঘাতের ফলে সৃষ্ট যান্ত্রিক ক্ষতির প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম। যদি সকল রোবটের সাথে এই জাতীয় এআই ব্যবহার করা হয় তবে এটি রক্ষণাবেক্ষণে খরচ কমানোতে অবদান রাখতে পারে।”
ব্যথা সনাক্ত করতে এবং ক্ষতিকারক উদ্দীপনা শেখাতে রোবটকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য গবেষণা দলটি মেমোট্রান্সিস্টরের রূপ দেয়, যা মেমরি এবং তথ্য প্রক্রিয়াকরণে সক্ষম ‘মস্তিষ্কের মতো’ বৈদ্যুতিক ডিভাইস।
ল্যাব পরীক্ষার সময়, একটি মিনি-মস্তিষ্কযুক্ত রোবট রিয়েল-টাইমে আঘাতের প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম হয়েছিল। এটি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরেও আঘাতের প্রতিক্রিয়া জানাতে থাকে, যা সিস্টেমটির দৃঢ়তা প্রমাণ করে।
এনটিইউ গবেষণা দলটি এখন আরও বড় আকারে তাদের উদ্ভাবিত এআই প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সিস্টেমকে উন্নত করতে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা এবং সরকারী গবেষণা ল্যাবগুলির সাথে সংযুক্ত হতে চাইছে।
আপাতত, পরীক্ষাটি প্রোটোটাইপ পর্যায়ে রয়েছে, তবে এনটিইউ সিঙ্গাপুরের বিজ্ঞানীরা যে আবিষ্কার করেছেন তা এনে দিতে পারে এমন একটি উদ্ভাবন যা মানুষের সাথে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বন্ধন তৈরী করার লক্ষ্যে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
কায়েস মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ/ নিজস্ব প্রতিবেদক
+1
1
+1
+1
+1
+1
+1
+1