ধরুন, আপনি একটু দেখতে রোগা, তাই সবাই আপনাকে বলে বেশি বেশি মাংস খেতে। আপনি বিরক্ত হয়ে ভাবলেন আজ থেকে মাংস ছাড়া আর কিছুই খাবেন না এবং কম সময়ে মোটা হয়ে যাবেন। কিন্তু এখন ভাবছেন, শুধু মাংস খেতে থাকলে আপনার কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে?
এখন আমি ভাবছি আপনার মনে জাগা সুন্দর প্রশ্নের উত্তর দিতে, তাইলে চলুন এই বিষয়ে কথা বলা যাক!
ভাল ফাইবার পাওয়া যায় এমন শাকসবজি যদি আপনার খাদ্য তালিকায় না থাকে, তাহলে প্রথম আপনি যে সমস্যায় ভুগবেন তাহল কোষ্ঠকাঠিন্য। যেমন বডি বিল্ডারদের এটি একটি সাধারণ সমস্যা কারণ তারা অনেক বেশি প্রোটিন খায়। কুরবানির ঈদে যে কয়েকদিন সকাল বিকাল মাংস খাওয়া হয়, এই কয়েকদিনেই অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। এবার ভাবুন, সবসময় মাংস খেলে সমস্যাটা কত গুরুতর হবে!
তাছাড়া, আমাদের শরীরের শক্তি তৈরি করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুকোজে রূপান্তর করা, যখন আপনি কার্বোহাইড্রেট খাওয়া বন্ধ করে দিবেন তখন আপনার শরীর চর্বি এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন পোড়াতে শুরু করবে। যার পরবর্তী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া খুবই বিপজ্জনক।
শুধু মাংস খাওয়ার আরেকটি সম্ভাব্য ঘাতক হতে পারে ভিটামিন সি-এর অভাব। কারণ রান্না করা মাংসে খুব কম ভিটামিন সি থাকে। মানুষ দুর্ভাগ্যবশত এমন কয়েকটি প্রাণীর মধ্যে একটি, যাদের শরীর নিজস্ব ভিটামিন সি তৈরি করতে করে না। এর মানে হল আমাদের ভিটামিন সি পেতে হলে ফল এবং সবজি খতে হবে।
ভিটামিন সি দরকার কারণ এটি ছাড়া আমাদের শরীর কোলাজেন তৈরি করে না এবং এর অভাবে আপনার স্কার্ভি দেখা দিবে। পাশাপাশি দেখা দিবে ফুসকুড়ি এবং মাড়ির রোগ, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ ইত্যাদি।
এখন আপনি বলতে পারেন, আমি কাঁচা মাংস খাব, তাইলে তো আর এসব সমস্যা দেখা দিবে না। যেহেতু কাঁচা মাংসে অধিক পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে এবং মূলত রান্নার প্রক্রিয়ার কারণেই এটি নষ্ট হয়। আপনি খেতে পারেন তাবে কাঁচা মাংস গ্রহণ আপনার জন্য কতটা ভালো হবে তা নির্ভর করে মাংস কতটা তাজা তার উপর। এর উপর ভিত্তি করে আপনার ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের সংখ্যাও বেড়ে যেতে পারে। তাই আপনি চাইলেও কাঁচা মাংস খেতে পারেন না কারণ এতে আপনার মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুকি আছে।
অতিরিক্ত মাংস খাওয়া থেকে হতে পারে প্রোটিন বিষক্রিয়া – যার মধ্যে রয়েছে বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া এবং শক্তির জন্য লিভারে অধিক প্রোটিনকে গ্লুকোজে রূপান্তর করার সময় যে অধিক পরিমাণে ইউরিয়া তৈরি হয়,এতে সৃষ্ট সমস্যা থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
কিন্তু এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কানাডার ইনুইট লোকদের খাদ্য তালিকায় বলতে গেলে একচেটিয়াভাবে মাংসই ছিল, তাহলে তারা কেমনে সুস্থ ছিল? উত্তর হল তারা লিভারের মতো অঙ্গের মাংস খেত, যাতে ভিটামিন ডি এবং এ থাকে এবং ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের জন্য তৈলাক্ত মাছ খেত। পাশাপাশি তারা প্রচুর কাঁচা মাংস খেত যা থেকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং ফ্যাট পেত। এতেই প্রায় প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপাদান পেয়ে যেত।
সবশেষে বলবো, আপনার যদি বিশেষ জেনেটিক্স না থাকে এবং বিশেষ কোন কারণে আপনাকে মাংসই খেতে হবে- এমন না হয় তাহলে আমি বলবো, সবসময় মাংস খেয়ে বেঁচে থাকার পরিকল্পনা ভুলেও করবেন না। সুষম খাদ্যাভ্যাস করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং সুস্থ থাকুন।
বৈচিত্রময়তা আমাদের প্রকৃতিকে করে তুলেছে আকর্ষণীয় ও আগ্রহপূর্ণ। মানবজীবনের অন্যতম একটি বৈচিত্র্যময় ব্যাপার হচ্ছে যমজ বাচ্চা (Twin baby) জন্মগ্রহন। পিতামাতার...