করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা: আপনি কি একাধিক বার সংক্রমিত হতে পারেন? (পর্ব-০১)
আপনি করোনা ভাইরাস থেকে কীভাবে রেহাই পেতে পারেন? মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম কত দিন পর্যন্ত লড়তে পারবে? একজন কি একাধিক বার করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হচ্ছে বা হতে পারে? করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের কেন্দ্রস্থলে যে বিষয়টি রয়েছে, তা হলো- ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সমস্যা হলো এক্ষেত্রে আমাদের জানার কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে ।
• আপনি করোনা ভাইরাস থেকে কীভাবে রেহাই পেতে পারেন?
আমাদের ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষা গড়ে তোলে এবং এটি দুই অংশে বিভক্ত। প্রথমত, শরীরে বাইরের কিছুর আক্রমণ ঘটলেই এটি সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত থাকে। এটি একটি সহজাত অনাক্রম্য প্রতিক্রিয়া হিসেবে পরিচিত এবং এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থের নিঃসরণ ঘটায় যার ফলে শ্বেত রক্তকণিকা সংক্রমিত কোষগুলো ধ্বংস করতে পারে। তবে এই প্রক্রিয়া করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সহজেই অন্য কোনো ভাইরাসের মতো করোনা ভাইরাসকে প্রতিহত করতে পারেনা। বরং, এই ক্ষেত্রে আপনারও পরিবর্তনশীল প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রয়োজন, কেননা করোনা ভাইরাসও প্রতিনিয়তই তার রূপ বদল করছে। তাই বলে কি করোনাভাইরাস অপ্রতিরোধ্য? –না। আপনার দেহে এমন কিছু কোষ রয়েছে, যারা অ্যান্টিবডি উৎপাদন করে ভাইরাসটিকে আটকাতে পারে। টি-সেল নামক বিশেষ কোষ গুলো সংক্রমিত কোষ সমূহকে আক্রমণ করতে পারে, এই প্রক্রিয়াকে সেলুলার রেসপন্স বলে ।
গবেষণা বলছে, এটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ । করোনাভাইরাসকে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে এমন অ্যান্টিবডি গুলো তৈরি হতে প্রায় ১০ দিন সময় লাগে এবং সবচেয়ে অসুস্থ রোগীরা সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। যদি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অভিযোজিত হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, তাহলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের স্থায়ীত্বও হ্রাস পাবে। কিন্তু এ বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়, যাদের হালকা কিছু লক্ষণ রয়েছে, বা মোটেও লক্ষণ নেই তাদের দেহে করোনা প্রতিরোধ করার মতো ইমিউন সিস্টেম আদৌ তৈরি হবে কিনা।
• ইমিউন সিস্টেম কত দিন পর্যন্ত লড়তে পারবে?
ইমিউন সিস্টেমের স্মৃতি আমাদের মতোই! এটি কিছু ইনফেকশন বেশ ভালো ভাবে মনে রাখলেও, কিছু ইনফেকশন ভুলে যাবার অভ্যাস রয়েছে। SARS-CoV-2 নামক নতুন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতদিন ক্রিয়াশীল থাকতে পারে তা এখনও জানা যায়নি। তবে আরও ৬টি করোনা ভাইরাস রয়েছে, যা থেকে এই বিষয়ে ধারণা পাওয়া যায়।
চারটি এমন করোনা ভাইরাস রয়েছে যেগুলো সাধারণ সর্দির লক্ষণ সমূহ প্রকাশ করে এবং এসময় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কিছু রোগী এক বছরের মধ্যে পুনঃরায় সংক্রমিত হতে পারে। তবে সর্দি হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়না, আরও দুইটি মারাত্মক করোনা ভাইরাস রয়েছে – Severe Acute Respiratory Sydrome (SARS) এবং Middle East Respiratory System (MERS)- এগুলোর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি শনাক্ত করতে কয়েক বছর সময় লেগেছিলো ।
ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাংলিয়া– এর মেডিসিনের অধ্যাপক পল হান্টার বলেন, “আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেল কিনা তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো – এটি কতদিন স্থায়ী হলো?” তিনি আরও জানান, “অবশ্যই এটি সারা জীবনের জন্য স্থায়ী হবেনা, SARS-এর অ্যান্টিবডি গবেষণার ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে যে, এই প্রতিরোধ প্রায় এক থেকে দুই বছর স্থায়ী হবে, যদিও এখনও পুরোপুরি নির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।” তবে যা–ই হোক, আপনি সম্পূর্ণরূপে অনাক্রম্য না হলেও দ্বিতীয় সংক্রমণ অতটা তীব্র হবে না।
• মানুষ কি একাধিক বার করোনা ভাইরাস বার সংক্রমিত হচ্ছে?
অনেকের দেহে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক বার করোনা সংক্রমিত হবার নজির রয়েছে বলে জানা গেছে। কারো মতে মানুষ আসলেই এই ভাইরাস দ্বারা দুইবার সংক্রমিত হচ্ছে। আবার এরকম ধারণাও উঠে এসেছে যে, ভাইরাসটি পুনঃরায় সক্রিয় হবার পূর্বে শরীরে কিছুদিন নিষ্ক্রিয় অবস্থায় লুকিয়ে থাকে। কিন্তু, বৈজ্ঞানিক ভাবে সর্বজনগ্রাহ্য মত এটাই, এক্ষেত্রে রোগীদের করোনা নেগেটিভ আসার পরীক্ষাটি ভুল ছিলো, অর্থাৎ টেস্টের রেজাল্ট ফলস নেগেটিভ এসেছিলো। এ কারলে পরবর্তীতে পরীক্ষা করায় ঐ রোগীদের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়, যা আগেই পাওয়া উচিত ছিলো।
প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে পুনরায় ভাইরাস সংক্রমিত করা হয়নি। তবে একজোড়া রেঁসাস ম্যাকাক (Rhesus Macaque) বানরের ক্ষেত্রে তা করা হয়েছে। তারা দুইবার আক্রান্ত হয়েছিলো। প্রথমবার তাদের দেহ রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম হলেও, তিন সপ্তাহ পরে দ্বিতীয়বার আবার আক্রান্ত হয়। এত দ্রুত পুনঃ আক্রমণের ক্ষেত্রে তাদের লক্ষণ গুলোও সেভাবে প্রকাশিত হয়নি।
২য় পর্ব আসছে!
মোঃ শাহরু মোস্তাকিম / নিজস্ব প্রতিবেদক