পুনিত মূলত কন্নড় সিনেমার জনপ্রিয় তারকা। দক্ষিণী এই সুপারস্টার মৃত্যুর পরেও আলো ছড়িয়ে গেলেন। তার চক্ষুদানে জ্যোতি ফিরল চারজনের।
মরণোত্তর চক্ষুদান পুনিতের পরিবারিক ঐতিহ্য। ২০০৬ সালে মারা যান তার বাবা সুপারস্টার রাজকুমার। মা পার্বতাম্মার মৃত্যু হয় ২০১৭-তে। দুজনেই চক্ষুদান করেছেন। তাই পুনিতের মৃত্যুশোকেও হাসপাতালকে খবর দিতে দেরি করেননি ভাই রাঘবেন্দ্র। অভিনেতার চোখ জোড়া সংগ্রহের জন্য চক্ষুব্যাংকে ফোন করেন তিনি।
তাঁর মৃত্যুর পর তার মরণোত্তর চক্ষু দানে দৃষ্টিশক্তি পায় চারজন। মানুষের চোখ দু’টো, তাহলে চারজন দৃষ্টি ফিরে পায় কিভাবে? কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট এর মাধ্যমে। তার আগে জেনে নেই, কি কি প্রকার কর্ণিয়াল ট্রান্সপ্লান্টেশন হয় আর এক্ষেত্রে কোনটা কোনটার ব্যবহার হয়েছে। কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট এর ক্ষেত্রে আক্রান্ত কর্ণিয়ার সম্পূর্ণ অথবা কিছু অংশ সুস্থ ডোনার কর্ণিয়ার সাথে রিপ্লেস করা হয়। এখন চিকিৎসকরা আক্রান্ত অংশের উপর বিবেচনা করে ঠিক করবেন যে কোনটুকু অংশ রিপ্লেস করা হবে। যেই যেই উপায়ে কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট হয়ঃ
১.পেনেট্রেটিং কেরাটোপ্লাস্টি (PK): একটি সম্পূর্ণ পুরু কর্নিয়া প্রতিস্থাপন। সার্জন আক্রান্ত কর্ণিয়ার একটি অংশ কেটে ফেলে সেখানকার কর্ণিয়াল টিস্যু বের করে ডোনারের কর্ণিয়া সেখানে প্রতিস্থাপন করেন, আর তারপর সেলাই।
২. এন্ডোথেলিয়াল কেরাটোপ্লাস্টি বা (EK): এই ক্ষেত্রে আক্রান্ত কর্ণিয়াল টিস্যুর ব্যাক কর্ণিয়াল লেয়ারস, যেখানে এন্ডোথেলিয়াম, এন্ডোথেলিয়াম কে রক্ষাকারী এক পাতলা পর্দা (Descemet Membrane)থাকে , সেই অংশটুকু সরিয়ে ডোনার টিস্যু বসানো হয়। উল্লেখ্য এই এন্ডোথেলিয়াল কেরাটোপ্লাস্টির দুইটা ধরণ আছে।
প্রথম যেটা আসে তা হলো Descemet Stripping Endothelial Keratoplasty (DSEK), এই ক্ষেত্রে ডোনার এর কর্নিয়াল টিস্যুর এক তৃতীয়াংশ রিপ্লেস করানো হয়। দ্বিতীয় যে পদ্ধতি, তা হলো Descemet Membrane Endothelial Keratoplasty( DMEK), এ ক্ষেত্রে ডোনার টিস্যুর অত্যন্ত পাতলা একটা লেয়ার রিপ্লেস করানো হয়। এই দ্বিতীয় পদ্ধতিটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
৩. অ্যান্টেরিয়র ল্যামেলার কেরাটোপ্লাস্টি (ALK): এই পদ্ধতির ক্ষেত্রেও দুটো ভাগ আছে, এক্ষেত্রে শুধুই ফ্রন্ট কর্ণিয়াল লেয়ারের (এপিথেলিয়াম ও স্ট্রোমা সহ) অংশটুকু ট্রান্সপ্লান্ট করানো হয়। কর্ণিয়া ড্যামেজের উপর নির্ভর করবে কতটুকু ট্রান্সপ্লান্ট করানো হবে। সুপারফিশিয়াল অ্যান্টেরিয়র ল্যামেলার কেরাটোপ্লাস্টি (SALK)-র ক্ষেত্রে স্ট্রোমা বাদে ফ্রন্ট কর্ণিয়াল লেয়ারটুকু ট্রান্সপ্লান্ট করানো হয়। আর ডিপ অ্যান্টেরিয়র ল্যামেলার কেরাটোপ্লাস্টির ক্ষেত্রে স্ট্রোমাসহ টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়।
৪. এরপর আরেকটা আসে, তা হলো আর্টিফিশিয়াল কর্ণিয়া ট্রান্সপ্লান্ট, যেসকল রোগী ডোনারের কাছে থেকে কর্ণিয়া নিতে পারে না, তাদের ক্ষেত্রে এই আর্টিফিশিয়াল কর্ণিয়া ট্রিটমেন্ট প্রযোজ্য।
তো, এখন মূল কথায় আসা যাক- অভিনেতা পুনিথ রাজকুমারের সেই চক্ষু দু’টির কর্ণিয়া দু’ভাগে (সুপেরিয়র ও ডিপ লেয়ার) ভাগ করা হয়েছিলো। সুপেরিয়র লেয়ার দু’জন সুপারফিশিয়াল কর্ণিয়াল ডিজিজে আক্রান্ত পেশেন্ট এর কাছে যায়, আর বাকি দুই ডিপ লেয়ার এন্ডোথেলিয়াল কর্ণিয়াল লেয়ার ডিজিজে আক্রান্ত পেশেন্টের কাছে যায়। এভাবে চারজন পেশেন্ট দৃষ্টি ফিরে পায় একজন মানুষের চক্ষু দানের মাধ্যমে। তবে বলে রাখা ভালো, এই সার্জারিটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও রেয়ার, অত্যন্ত সতর্কতার সাথেই সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করেছেন চিকিৎসকেরা।
নারায়ণ নেত্রালয়ের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেকটর ভুজাঙ্গ শেট্টি বলেন, আমরা কর্নিয়াকে দুটি ভাগে ভাগ করেছি। যাদের চোখে অগ্রভাগে সমস্যা রয়েছে তাদের সামনের দিকের অংশ দেওয়া হয়েছে। পেছনের দিকে সমস্যা থাকা ব্যক্তিরা পেয়েছেন পেছনের অংশ। এর আগে এমনটা করিনি। একইদিনে একজনের চোখে চারজনের চোখের জ্যোতি ফিরল। অপারেশন করতে ৮ ঘণ্টা সময় লেগেছে। ছয়জনের কর্নিয়া বিশেষজ্ঞদের দল তিনটি অপারেশন থিয়েটারে এ অপারেশন করেন।
মিথিলা ফারজানা মেলোডি | নিজস্ব প্রতিবেদক