একই ওজন হওয়া সত্ত্বেও মেয়েদের কেন ছেলেদের তুলনায় মোটা দেখায়, এই প্রশ্নটা এখন ফেসবুকে প্রায়ই ঘুরছে। সবাই মজা করছে কিন্তু সঠিক উত্তর কেও দিচ্ছে না। এতে ছেলেমেয়ে উভয়কেই দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। যাইহোক কথা না বাড়িয়ে প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা যাকঃ
একই ওজনের মেয়েদের মধ্যেও কাউকে মোটা আবার কাউকে চিকন দেখায়। কারণ কি? কিছু তথ্য যুক্ত করে বিষয়টা স্পষ্ট করার চেষ্টা করছি। যেমন- আপনি যখন জিমে যাচ্ছেন, ভাল খাচ্ছেন, এবং আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন, তখন আপনার শরীরের গঠনে ভিন্নতা দেখতে পাবেন, এটা স্বাভাবিক।
আপনি ভাবতে পারেন যে ওজন কমানোই শারীরিক গঠনে পরিবর্তন আনার সর্বোত্তম উপায়, তবে এটি সর্বদা সঠিক হয় না। ওজন পরিবর্তন না করেও শারীরিক গঠনে পরিবর্তন আনা সম্ভব। কারণ আপনার ওজন শুধুমাত্র বডি মাস ইনডেক্স (BMI) নির্ধারণ করে, আপনার শরীরের গঠন নয়। স্কেল দ্বারা পরিমাপ করা না গেলেও আপনার শরীরের গঠনই আপনাকে দেখতে কেমন দেখাবে, এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ওজন করার স্কেলে পাউন্ড পাউন্ডই, সেটা পেশীর হোক বা চর্বির। পেশীর ওজন চর্বির থেকে বেশি হয় না – তবে পেশী আপনার শরীরের কম জায়গা নেয়। এই কারণে যখন আপনি চর্বির পরিমাণ কমিয়ে পেশী গঠন করবেন তখন ওজন পরিমাপে ঠিক তেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্য না করলেও আপনার শারীরিক গঠনে অনেক ভিন্নতা লক্ষ্য করবেন।
তাহলে এখন মূলকথা দাঁড়াল, চিকন বা মোটা দেখাতে ওজনে তেমন একটা ভিন্নতা না থাকলেও, শরীরের পেশী আর চর্বির অনুপাত কম বেশি হওয়ার কারণে একই ওজন হওয়া সত্ত্বেও কাউকে মোটা আবার কাউকে চিকন দেখায়। অবশ্যই চর্বির পরিমাণ বেশি হলে, মোটা দেখাবে!
তবে একই ওজনের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে পার্থক্য দেখা যায়, তাতে আরও কিছু বিষয় সম্পর্কিত। গড়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের শরীরে ৬-১১% বেশি চর্বি থাকে। স্বাভাবিকভাবে ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি ক্যালরি গ্রহণ করে। কিন্তু গবেষণা মতে, খাওয়ার পরে একজন মেয়ের ক্যালরি বার্ন করার ক্ষমতাকে হ্রাস করে ইস্ট্রোজেন, যার ফলে শরীরের চারপাশে আরও চর্বি জমা হয়।
আরও পড়ুনঃ একই বয়সে পুরুষদের তুলনায় নারীদের বয়সে বেশি দেখায় কেন?
বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েরা প্রতিবছরে ৯০০ গ্রামের বেশি চর্বি পায়, আর ছেলেরা এর মাত্র এক পঞ্চমাংশ পায়, তাও ছেলেরা সাধারণত ভারী হয় কারণ তাদের পেশী এবং হাড়ের ভর বেশি থাকে। গড় ওজনের মেয়েদের শরীরে গড়ে প্রায় ৩০% চর্বি থাকে এবং ঠিক একই দৈর্ঘ্য, একই ওজন এবং একই বয়সের একজন ছেলের শরীরে প্রায় ১৫% শতাংশ চর্বি থাকে। এর মানে হল যে ছেলেরা কিছুই না করেই বেশি ক্যালোরি বার্ন করতে পারে।
পাশাপাশি মেয়েদের শরীরচর্চার পর স্বাভাবিক বেশি খাওয়ারও প্রবণতা থাকে এবং তাদের খাবারও দ্রুত চর্বিতে রূপান্তরিত হয়। কিন্তু ছেলেদের এমনটা কম থাকে। তাই শেষ পর্যন্ত, মেয়েরা ব্যায়াম করেও প্রত্যাশার চেয়ে কম মেদ কমাতে পারে।
See these also: People Are Sharing Photos Of Themselves Weighing The Same But Looking Completely Different, And It’s Inspirational (40 Pics)
আশাকরি বিষয়টা এখন স্পষ্ট করতে পারলাম যে, হরমোন এবং কিছু জৈবিক কারণে একই ওজন হওয়া সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের শারীরিক গঠনে ভিন্নতা দেখা যায়, ‘মেয়েদের কেন মোটা দেখায়’ এই প্রশ্নটির উত্তর আশা করছি এখন আপনার কাছে ক্লিয়ার। মূলকথা ছেলেদের পেশীর পরিমাণ বেশি, তবে চর্বি কম আর মেয়েদের চর্বি বেশি হওয়ায় পেশীর তুলনায় তা শরীরের জায়গাও বেশি নেয়, এতেই ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মোটা দেখায়। তবে অতিরিক্ত চর্বি কেন, এটা নিয়ে মেয়েদের দুঃখ পাওয়ার কোন কারণ নেই। উল্টো আমি বলবো, পরিমিত পরিমাণ চর্বি আপনার থাকা দরকার কারণ শরীরের অপর্যাপ্ত চর্বি থাকলে পিরিয়ড এবং এমনকি গর্ভাবস্থাও সম্ভব নয়!
শেষে একটা কথাই বলতে চাই, যে যেমনই দেখতে হোক না কেন, আমরা যেন বডি শেমিং না করি, কখনই না।
Tanjina Sultana Shahin | Own Correspondent