পূর্ব অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত নতুন গবেষণা অনুসারে- ভবিষ্যতের জন্য আশার অনুভুতি মানুষকে মদ্যপান এবং জুয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ থেকে রক্ষা করতে পারে।
গবেষকরা ‘আপেক্ষিক বঞ্চনা’ নিয়ে গবেষণা করেছেন- এটি এমন একটি অনুভুতি যা বোঝায় বর্তমান যেমনই হোক না কেন ভবিষ্যতটা এর চেয়ে ভালও হতে পারে। এটি মূলত বিরূপ পরিস্থিতিতে নিজেকে দৃঢ় রাখার মানসিক শক্তি যোগায়।
গবেষকরা অনুসন্ধান করতে চেয়েছিলেন কেন কিছু মানুষের মধ্যে এমন কিছু প্রবণতা যেমন পালিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত খাওয়া, মদ্যপান, অতিরিক্ত খাওয়া, জুয়া খেলা ইত্যাদি দেখা যায় যা সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই। এরপর এর উত্তর বেরিয়ে আসে ‘প্রত্যাশা’ বা ‘আশা’ নামক এক মানসিক ভাবনা থেকে।
ইউইএর স্কুল অব সাইকোলজির স্নাতকোত্তর গবেষক শাহরিয়ার কেশবার্জ বলেছেন:
আমি মনে করি বেশিরভাগ লোকেরা তাদের জীবনের কোনও না কোনও সময়ে আপেক্ষিক বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে। এটি নিজের থেকে অসন্তুষ্ট হওয়ার একটি অনুভূতি যার ফলে একজন ব্যাক্তি সবসময় এটা ভাবতে থাকেন যে তার অপর পাশের মানুষটা তার চেয়ে ভাল জীবন উপভোগ করছে।
থিওডোর রুজভেল্ট বলেছিলেন যে ‘তুলনা আনন্দের চোর’। এটি এমন একটি অনুভুতি যা একজন মানুষ তখন অনুভব করে যখন তার বন্ধু নতুন গাড়ি কিনে বা তার বোন বিয়ে করে বা কোনও সহকর্মী আরও ভাল চাকরি খুঁজে পায় বা তার থেকে ভাল আয় করে।
আপেক্ষিক বঞ্চনা রাগ এবং ক্ষোভের মতো নেতিবাচক আবেগকে উদ্বুদ্ধ করে। পাশাপাশি এটি ঝুঁকি গ্রহণ, মদ্যপান, মাদক গ্রহণ বা জুয়া খেলার মতো নেতিবাচক আচরণগুলোকে প্রভাবিত করে।
তবে উক্ত গবেষণায় আপেক্ষিক বঞ্চনায় উচ্চতর স্কোর করা কেউই তাদের এই দুর্বল জীবন পছন্দ করেন না বলে জানা যায়। আবার কিছু মানুষ পাওনা যায় যারা যেকোন পরিস্থিতির সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষম। এমনকি তারা অন্যের জীবনের অভিজ্ঞতার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তা নিজের জীবনকে আরো বেশি উপভোগ্য করে তুলতে কাজে লাগায়।
প্রতিকূলতার মাঝেও আশাবাদী থাকা সুফল বয়ে আনতে পারে তা প্রমাণ করার জন্য অনেক পরীক্ষা রয়েছে, তাই গবেষকরা দেখতে চেয়েছিলেন যে আশা মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়াতে এবং বিপদে মানুষকে আনন্দ দান করতে পারে কিনা।
গবেষণা দল ৫৫ জন স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে দুটি ল্যাব-ভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল। স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের আপেক্ষিক বঞ্চনা এবং আশা কতটা অনুভব করে তা জানতে তাদের জন্য কুইজের আয়োজন করা হয়েছিল। পারিবারিক আয়, বয়স এবং লিঙ্গ সম্পর্কিত প্রশ্নাবলির ভিত্তিতে স্বেচ্ছাসেবীদের মধ্যে এই গবেষণা চালানো হয়। এর জন্য একজন মানুষকে অপরজনের সফলতার গল্প শুনিয়ে আরো বেশি হতাশ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তারপরে তারা বিশেষভাবে ডিজাইন করা জুয়া খেলায় অংশ নিয়েছিল যেখানে বাজি হিসেবে অর্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
আমরা সেইসকল লোকেদের উপর নজর দিয়েছিলাম যারা আপেক্ষিক বঞ্চনায় উচ্চ স্কোর করেছে আর যারা আশাবাদী হিসেবে উচ্চ স্কোর করেছে। আমরা দেখতে পেয়েছি যে স্বেচ্ছাসেবীরা যারা আশা নিয়ে উচ্চতর স্কোর করেছিলেন তাদের মধ্যে খেলায় ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম ছিল আর যারা খুব বেশি আশাবাদী ছিলেন না তাদের ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল।
ইউইএর স্কুল অব সাইকোলজির ডাঃ পাইয়ার্স ফ্লেমিং বলেছিলেন:
গবেষণার এই অংশটির লক্ষ্য ছিল, তুলনামূলকভাবে বঞ্চিত হওয়া বা না হওয়া মানুষের মধ্যে অপরের সফলতায় ব্যথিত হওয়া বা ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বৃদ্ধি ও উচ্চ প্রত্যাশী ব্যক্তির মধ্যে নিম্ন ঝুঁকি গ্রহণের প্রবণতা প্রমাণ করা।
এরকম আরেকটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল ১২২ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে। প্রশ্নোত্তর ও ঝুঁকিপূর্ণ কিছু খেলার মাধ্যমে সেচ্ছাসেবীদেরকে কতটা আশাবাদী আর কারা নিজেদের অন্যের তুলনায় বঞ্চিত মনে করেন সেই তথ্য বেরিয়ে আসে।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৩ জনের মধ্যে জুয়ার সমস্যা ছিল না (২৭ শতাংশ), ৩২ জনের নিম্ন স্তরের সমস্যা ছিল (২৬ শতাংশ), ৪৬ জনের মধ্যে মাঝারি স্তরের সমস্যা ছিল যার ফলে কিছু নেতিবাচক পরিণতি হয়েছিল (৩৮ শতাংশ) এবং ১১ জন ছিল যারা সম্ভাব্য ক্ষতির দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং নিজেদের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে (৯ শতাংশ)।
মিঃ কেশবার্জ বলেছিলেন,
আমরা আশা ও আপেক্ষিক বঞ্চনার স্কোরের তুলনায় যখন এই স্কোরগুলি দেখি আমরা দেখতে পেলাম যে বর্ধিত আশা মানুষের আচরনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে প্রভাব ফেলে এবং ইতিবাচক আচরণকে উৎসাহিত করে।
মজার বিষয় হল, আমাদের গবেষণায় অপেক্ষাকৃত সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আশা এবং জুয়ার তীব্রতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নেই। এটি কেন তা আমরা জানি না তবে এটি হতে পারে যে তারা বিনোদনমূলক জুয়া খেলছে এবং যখন তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তখন সহজেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে।
সুতরাং যেকোনো পরিস্থিতিতে হতাশ না হয়ে আমরা সহজেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি যদি আমরা আশাবাদী হই। সামান্য আশার আলোর অনুভুতি পারে আমাদের যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিপথগামী হওয়ার পরিবর্তে সফলতার পথ বাতলে দিতে।
তাবাসসুম পারভীন সুজানা/ নিজস্ব প্রতিবেদক